ইরাকে মার্কিন সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের যুদ্ধের অবসান ঘোষণা করেছে৻

বাগদাদে এক অনুষ্ঠানে সামরিক পতাকা গুটিয়ে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে এই অবসান সূচিত হয়৻

আমেরিকা ইরাকে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল ২০০৩ সালের মার্চে৻

তার প্রায় ন’বছর পর বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিনীরা ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শেষ করল৻

এ উপলক্ষ্যে বাগদাদে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৻ যেখানে দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর পর মার্কিন পতাকা নামিয়ে বাক্সে ভরা হয়৻

মাত্র দু’শর মত মার্কিন সৈন্য বাগদাদে থাকবে৻ যাদের কাজ হবে ইরাকি সেনাবাহিনীকে পরামর্শ দেয়া, এবং বাগদাদে বিশাল মার্কিন দূতাবাসের নিরপত্তায় সাহায্য করা।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্টা গিয়েছিলেন বাগদাদে৻ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যত জীবন এবং অর্থকড়ি এই যুদ্ধে আমেরিকার গেছে, তা বিফলে যায়নি৻

প্রেসিডেন্ট ওবামা, যিনি ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে সৈন্যদের সামনে বলেছেন, ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের অর্জন অসামান্য৻

আর যারা যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, সেই রিপাবলিকানরা একদিকে সৈন্য প্রত্যাহারের বিরোধিতা করছেন এবং একই সাথে বলার চেষ্টা করছেন, আমেরিকার স্বার্থ রক্ষায় ইরাকের যুদ্ধ সঠিক ছিল৻

ইরাক যুদ্ধের সময় মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন রিচার্ড পার্ল৻ বিবিসিকে তিনি বলেছেন, সাদ্দাম হোসেন বিহীন ইরাকে ইরাকিরা অনেক ভালো আছে৻

তিনি বলেন, নিহত ইরাকিদের অধিকাংশের জীবন গেছে ইরাকিদের হাতেই, যারা পুরোনো শাসনব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছিল৻

“একথা ঠিক যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে৻ অনেক মানুষের জীবন গেছে৻ কিন্তু সাদ্দাম হোসেন টিকে থাকলে আরো বেশি মানুষের জীবন যেত৻ ইরাকিদের অবস্থা আরো খারাপ হত৻“

সাদ্দাম হোসনকে সরানোর জন্য সাড়ে চার হাজারেরও বেশি মার্কিন সৈন্য মারা গেছে৻ জখম হয়েছে প্রায় ৩০,০০০৻

ইরাকিদের পক্ষে নিহতের সংখ্যা লাখের ওপর। চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু৻

সেকারণে যত যুক্তিই এই যুদ্ধের পক্ষে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হোক, ইরাক যুদ্ধে যে মূল্য দিতে হয়েছে তা নিয়ে খোদ আমেরিকাতেই তীব্র বিতর্ক রয়েছে৻

সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা আ্যান্ড্রু এক্সুম, যিনি বর্তমানে নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি‘র হয়ে কাজ করছেন, তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “সাদ্দাম হোসেন এখন যে ইরাকের ক্ষমতায় সেই সেটা অবশ্যই শুভ৻ এটাও অবশ্যই ভালো যে ইরাকের মানুষ অনেক অনেক স্বাধীন৻ গণতন্ত্রের স্বাদ পাচ্ছে তারা৻ কিন্তু আমেরিকার কৌশলগত স্বার্থ যেটুকু ছিল, তার জন্য এতটা মূল্য দেয়া কি সঠিক ছিল? একবারেই না৻“

কিন্তু সাধারণ ইরাকিদের মূল্যায়ন কি? জ্বালানি সমৃদ্ধ ইরাকের খোদ রাজধানীতে অনেক বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই৻ যাদের আছে, তারা ঠিকমত বিদ্যুৎ পান না৻ বাগদাদে তাই এখন জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ ভাড়া দিচ্ছেন অনেকে৻

এমন একজন আহমেদ গাসেপ কন্ঠে হতাশা নিয়ে বলছিলেন, “দু হাজার বছরেও ভালো কিছু হবেনা৻ সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত৻ তারা মানুষের জন্য কিছুই করেনা কোন দায়িত্ব নেই তাদের৻

বাগদাদে বোতলে ভরা পানি বিক্রি করেন রিয়াদ আব্দেল হোসেন৻ তিনি বলছিলেন, বোতলের পানির খদ্দের দিন দিন বাড়ছে, কারণ মানুষ পাইপে যে পানি পাচ্ছে তা দূষিত৻ ঐ পানি খেয়ে শিশুরা অসুস্থ হচ্ছে৻

সাধারণ ইরাকিদের মধ্যে এই হতাশা নিয়ে আমেরিকানরা যত না চিন্তিত তার চেয়ে তাদের উদ্বেগ এই প্রত্যাহারের পর ইরাকে ইরানের প্রভাব বেড়ে যাবার সম্ভাবনায়৻

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আন্তর্জাতিক ডেস্ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here