নতুন নতুন তথ্য প্রযুক্তি ও উদ্ভাবিত আধুনিক যন্ত্রের কাছে সারা দেশের ন্যায় জামালপুরের ডাক বিভাগও মার খাচ্ছে। ইন্টারনেট ও বেসরকারী কুরিয়া সার্ভিসের সেবার কাছে সেই ১১০ বছরের পুরনো সরকারী ব্যবস’াপনায় পরিচালিত ডাক বিভাগ প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।
তারা মনে করছেন, অভ্যন-রীন ও আন-র্জাতিক পর্যায়ে চিঠিপত্র লেখা এবং প্রাপকের হাতে সঠিক সময়ে টাকা পয়সা পৌছাতে বিলম্ব, বিভিন্ন সঞ্চয় একাউন্ট থেকে চাহিদামত ও সময়মত টাকা তুলতে না পারা, মানি অর্ডার ফরম, ষ্ট্যাম্প, জমাদান রশিদ সংকট, বেসরকারী কুরিয়া সার্ভিসের সেবার মান উন্নত ইত্যাদি কারণে ডাক বিভাগের প্রতি মানুষ যেন দিন দিন আস’া হারিয়ে ফেলছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জামালপুর প্রধান ডাকঘরসহ জেলায় সর্ব মোট ২০৬ টি ডাকঘর রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান ডাকঘর ১টি, থানা পোষ্ট অফিস ৫টি, সাব পোষ্ট অফিস ১৫টি, ইডিএসও ৬টি এবং ইডিবিও ১৭৯টি।
গত ১০ বছর আগেও শহর কিংবা গ্রামের মানুষ ডাকঘরের উপর নির্ভরশীল ছিলো। কিন’ বর্তমানে শহরে ইন্টারনেট সেবা এবং গ্রামসহ সর্বত্র মোবাইল ফোন ব্যবহার ক্রমান্বয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাকঘরের উপর মানুষের আস’া ও ভরসা হ্রাস পাচ্ছে। ইতিমধ্যে শহরের মানুষ তাদের বিভিন্ন আপনজনদের কাছে ব্যক্তিগত চিঠি লেখা বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রামের কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যারা এখানো চিঠিপত্র আদান প্রদান করে থাকে।
এদিকে, জামালপুরে গত প্রায় ৫/৬ বছর ধরে মানি অর্ডার ফরম, তিন টাকা মূল্যের খাম, পোষ্টাল অর্ডার, টাকা জমাদান রশিদ, ষ্ট্যাম্প সংকট লেগেই আছে। শত বছরের ব্যবহৃত পুরনো লোহার ছিলের ছাপ ষ্পষ্ট দেখা যায় না। বিভিন্ন আমানতকারী ও সঞ্চয়কারীদের ভাউচারের কপি ফটোকপির মাধ্যমে টাকা পয়সা জমা দিতে বাধ্য হচেছন।
ডাকঘরে আগের মত এখন আর নানা স’ান থেকে পার্সেল আসে না। যদিও বা কিছু কিছু আসে তার সংখ্যা খুবই নগণ্য। চিঠিপত্র নিয়ে এখন ডাক পিয়নদের বাড়ী বাড়ী যেতে হয় না। বিভিন্ন নামের কুরিয়া সার্ভিসসহ অন্যান্য বেসরকারী পার্সেল এজেন্টের খরচ একটু বেশি হলেও সেবার মান উন্নত হওয়ার প্রেক্ষিতে মানুষ কুরিয়া সার্ভিসের উপর আস’াশীল হয়ে পড়ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার প্রায় প্রতিটি ডাকঘরেই বেশিরভাগ চিঠিপত্র রেজিঃ করা এবং এগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে আদান প্রদান হয়।
এদিকে, সরকার ডাক বিভাগকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকারের এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জেলার বিভিন্ন ডাকঘরে অয়েষ্টার্ন ইউনিয়ন সার্ভিস চালু করছে। এ জন্য ইন্টারনেট সংযোগ এবং কম্পিউটার বসানো হয়েছে।
কিন’ ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য আলাদকরে কোন লোক নিয়োগ দেয়া হয়নি। অধিকাংশ পোষ্ট মাষ্টার কম্পিউটার চালাতে জানে না।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামালপুর বিভাগে কর্মরত জনৈক কর্মকর্তা জানান, আধুনিক প্রযুক্তি সংযোগের মাধ্যমে ডাক সেবাকে উন্নত এবং প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন ডাক ঘরে “ওয়েষ্টার্ন ইউনিয়ন বা মানি ট্রান্সফার” এর জন্য কম্পিউটাররাইজ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ এখন সহজেই ডাকঘরের মাধ্যমে দেশে বিদেশে দ্রুত টাকা পয়সা লেনদেন করতে পারছেন।
এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন, ডাক বিভাগের ব্রিটিশ আমলের আইন ও নিয়ম কানুন সংশোধন ঘটিয়ে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ডাকসেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
ছাইদুর রহমান,জামালপুর সংবাদদাতা: