খাগড়াছড়ি : ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ করে আইন থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি,রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে নেই তার কোন প্রয়োগ।

কয়লার বদলে অবাধে ইটভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কচি-কাচা পাহাড়ের মুল্যবান বনজ ও ঔষধি গাছ।

ফলে ধ্বংস হচ্ছে বনজ সম্পদ। দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। বিপর্যয়ের মুখে পতিত হচ্ছে জনস্বাস্থ্য।

সংরক্ষিত এলাকায় ইটভাটা না করার নির্দেশনা থাকলেও জারী করা সরকারী আদেশ মানছেনা সংশ্লিষ্টরা।  ইটভাটার মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায় খাগড়াছড়ি,রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় ইতি মধ্যে স্থানীয় জেলা প্রশাসন,আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও স্ব-স্ব উপজেলাগুলোয় নির্বাহী কর্মকর্তাদের মেনেস করে খাগড়াছড়ির ৮টি,রাঙ্গামাটির ১০টি ও বান্দরবানের ৭টি উপজেলাসহ ২৫টি উপজেলায় শুরু হয়েছে গাছ পোড়িয়ে ইট তৈরীর কাজ। এছাড়াও ৩ পার্বত্য জেলা ছাড়াও পার্শবর্তী জেলা রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানেও বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর এলাকায়ও এ অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হলেও দেখার কেউ নেই । যার ফলে  (নিয়ন্ত্রন) আইন (১৯৮৯) এবং এর সংশোধনী অনুযায়ী সম্পুন্ন নিষিদ্ধ হলেও তা লংঙ্গিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সংশোধীত নতুন আইনে সংরক্ষিত এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা অর্ধদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) বিল-২০১৩’ পাস হয়েছে। নতুন এই আইনে ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

বন ও পরিবেশমন্ত্রী হাসান মাহমুদ উত্থাপন কৃত পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, আবাসিক,সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা,সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর,সরকারী বা ব্যাক্তি মালিকাধীন বন,অভয়ারন্য,বাগান বা জলাভূমি,কৃষিপ্রধান এলাকা এবং পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।

এছাড়াও কৃষি জমি,পাহাড় বা টিলা থেকে ইট তৈরীর জন্য মাটি কাটলে অথবা অনুমোদন ছাড়া নদ-নদী বা হাওর,চরাঞ্চল থেকে মাটি কাটলে দুই বছরের কারাদন্ড এবং দুই লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর অনুমোদন না নিয়ে ইটভাটা খুললে এক বছরের কারাদন্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সংরক্ষিত এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করলে পাঁচ বছরের জেল,জরিমানার বিধান থাকলেও তা মানছে না খাগড়াছড়ির ইটভাটার মালিকরা।

 এদিকে-খাগড়াছড়ি জেলার ৮টি উপজেলার ৯টি থানা-দীঘিনালা,পানছড়ি,মহালছড়ি,মানিকছড়ি,লক্ষীছড়ি,রামগড়,গুইমারা,মাটিরাঙ্গা ও খাগড়াছড়ি জেলা সদরে প্রকাশ্যে ফসলি জমি ধ্বংস করে,ঘনবসতি ও সংরড়্গিত এলাকায় শুরু হয়েছে কাঠ পোড়ানো।

ইটভাটার ক্ষেত্রে মহাসড়ক,পাহাড়,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল ও ক্লিনিক,গবেষনা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি হতে বিধিবদ্ধ দুরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন,পাহাড়ী জেলা সমুহের ( রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি,বান্দরবান) সীমানার মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপিত হতে পারবে না এবং কৃষি প্রধান এলাকার মধ্যে ( যে সকল এলাকায় কৃষি জমি বছরের কোনো সময়ই পতিত থাকেনা ) না করতে নিষেদাজ্ঞা জারী করা হয়।

পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সারাদেশে ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রন) আইন ১৯৮৯ এবং ( সংশোধন ) আইন ২০০১ মোতাবেক  ইটের  ভাটা স্থাপন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন/বিধি অনুসারে ছাড়পত্র গ্রহন সঠিকভাবে কার্যক্রর, সেই প্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহন করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।

উদ্যোক্তা পরিবশেগত/অবস্থানগত ছাড়পত্রের জন্য সংশিস্নষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তরে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণ ইট পোড়ানোর (নিয়ন্ত্রন) (সংশোধন) আইন, ২০০১-অনুসরন পুর্বক এবং ৩নং ধারার (৩) উপ-অনুছেদের বিধি মোতাবেক সঠিকভাবে তদন্ত সাপেক্ষে নতুন ইটের ভাটার লাইসেন্স প্রদান করবে বলে মন্ত্রনালয় সুত্রে জানা যায়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ব্যতিরেখে কোন জেলা প্রশাসক ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন করিবেন না। নবায়ন করিবার পুর্বে উদ্যোক্তা কর্তৃক পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, চিমনী স্থাপনের প্রত্যায়নপত্র এবং ভ্যাট প্রদান সংক্রান্ত কাগজপত্র দাখিল করিবার পরই লাইসেন্সে নবায়ণ করতে হবে। কোন অবস্থায়ই কোন ইট ভাটায় কাঠ বা কাঠ জাতীয় জ্বালানী ব্যবহার করা যাবে না উলেস্নখ থাকলেও তা দেখেও দেকছে না জেলা প্রশাসক,বন বিভাগসহ সংশিস্নষ্ট কতৃপক্ষ।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ করিম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- আইন অমান্য করে কোন ইটভাটার মালিক যদি লাইসেন্স বা অনুমতি বিহীন ভাটায় কার্যক্রম করেন সে ড়্গেত্রে সংসদে পাস হওয়া নতুন আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে।

আল-মামুন/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here