ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে ইউরোপ৷ বাড়ছে নিহতের সংখ্যা৷ বিঘ্নিত হচ্ছে আকাশ, রেল ও সড়ক যোগাযোগ৷ গত ক’দিনের ঠান্ডায় মারা গেছেন ২৬০ জন৷ এর মধ্যে ১২২ জন ইউক্রেনের৷ সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমেছিল৷
নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন আশ্রয়হীন৷ ফলে রাস্তায় তাদের জমে থাকা মৃতদেহ পাওয়া গেছে৷
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে৷ সেখানে পরিবেশন করা হচ্ছে গরম চা ও খাবার৷
রাতভর প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে ইউরোপের সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দর লন্ডনের হিথ্রো’তে প্রায় ৩০ ভাগ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে৷ একই পরিস্থিতি হল্যান্ডের আমস্টারডাম বিমানবন্দরেও৷
এদিকে ইটালির রাজধানী রোম সাধারণত অপেক্ষাকৃত রৌদ্দ্রজ্বল গরম শহর হিসেবে পরিচিত৷ কিন্তু সেখানেও গত ২৭ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি তুষার পড়েছে৷ ফলে রাস্তাঘাটে আটকা পড়েছে বাস, ট্যাক্সি৷ বিখ্যাত ভেনিস হ্রদের আংশিক বরফে জমে গেছে৷ ইটালিতে এখন পর্যন্ত ঠান্ডায় সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷
ইউক্রেনের পর ঠান্ডাজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে পোল্যান্ডে৷ ৪৫ জন৷ সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয়েছিল মাইনাস ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷
রোমানিয়ায় মারা গেছে ২৮ জন৷ এছাড়া বসনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্টোনিয়া, বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া আর গ্রিসেও ঠান্ডাজনিত কারণে নিহতের ঘটনা ঘটেছে৷
ফ্রান্সে উত্তরের লিল থেকে শুরু করে দক্ষিণের মার্সেই সব জায়গায় তুষারপাত হয়েছে৷ তবে বেঁচে গেছে রাজধানী প্যারিসের মানুষজন৷ পূর্বের শহর স্ট্রাসবুর্গে ১২ বছরের এক শিশু মারা গেছে৷ সে জমে যাওয়া একটি পুকুরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করছিল৷ এমন সময় হঠাৎ করে বরফ ভেঙে গেলে দুর্ঘটনা ঘটে৷ শিশুটির বন্ধু তাকে ঊদ্ধার করতে গিয়ে আহত হয়েছে৷ তাকে এখন চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷
বসনিয়ায় তুষারের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জরুরি এক রোগীকে আনতে তার বাড়ি যেতে দেরি করে ফেলে একটি অ্যাম্বুলেন্স৷ ফলে বাড়িতেই মারা যায় ঐ ব্যক্তিটি৷
এদিকে ঘর গরম রাখতে ব্যবহৃত গ্যাসের জন্য ইউরোপের অনেক দেশ রাশিয়ার ‘গ্যাজপ্রম’এর উপর নির্ভর করে৷ কারণ সরকারি এই সংস্থাটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলক৷ এবছর প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে বেড়ে গেছে গ্যাসের চাহিদা৷ কিন্তু গ্যাজপ্রম বলছে তারা ইউরোপীয় দেশগুলোর অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়৷ কেননা রাশিয়াতেও এবার প্রচণ্ড শীত পড়ায় বেড়ে গেছে গ্যাসের চাহিদা৷ রুশ প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুটিন গ্যাজপ্রমকে বলেছেন, আগে দেশের মানুষ পরে ক্রেতা৷
জার্মানির জ্বালানি বিষয়ক কোম্পানি আরডব্লিউই বলছে, গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার কথা বর্তমানে তার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম পাওয়া যাচ্ছে৷ কিন্তু স্টকে বেশি গ্যাস থাকায় ক্রেতাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি৷
আরডব্লিউই’র প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি ইওএন তাদের ২৭ শতাংশ গ্যাস আমদানি করে গ্যাজপ্রম থেকে৷ তারাও বলছে, গ্যাজপ্রম থেকে কম গ্যাস পেলেও ক্রেতাদের কোনো সমস্যা হবে না৷
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জার্মানি রাশিয়া থেকে প্রায় ৩৩ শতাংশ গ্যাস আমদানি করেছিল৷ আর নরওয়ে থেকে করেছিল ২৯ শতাংশ৷
রাশিয়ায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে অস্ট্রিয়াও গ্যাজপ্রম থেকে ৩০ শতাংশ কম গ্যাস পাচ্ছে৷ ইটালিতেও গ্যাসের সরবরাহ কমেছে প্রায় ২৪ ভাগ৷
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আন্তর্জাতিক ডেস্ক