কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের প্রধান আ’লীগ ও বিএনপি’র স্থানীয় প্রার্থীদের দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মেয়ের পদে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক প্রবীণ রাজনীতিক অধ্যক্ষ আফজল খান দলের একক প্রার্থী সমর্থন পেলেও মাঠ ছাড়বেন না মেয়র প্রার্থী তরুন আওয়ামীলীগ নেতা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ’র সাবেক ভিপি নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম ও সাবেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু। অন্যদিকে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য বিলুপ্ত পৌরসভার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর দ্বন্দ্বের ভেতরে ভাগ বসিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী নেতা কণ্ঠশিল্প আসিফ আকবর। ফলে সাক্কু ও আসিফকে চ্যালেঞ্জ করে হাজী ইয়াছিন মেয়র পদে প্রার্থী দিতে পারেন তার ঘনিষ্ট কাউকে। দুই দলের প্রার্থীদের  বিরোধিতার কারণে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে জাপার সমর্থিত মেয়র প্রার্থী কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার আহমেদ সেলিম।

কুসিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করার আশায় মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক অধ্যক্ষ আফজল খান, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ সভাপতি আলহাজ্ব ওমর ফারুক, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আলহাজ্ব রোটারিয়ান জাকির হোসেন, শহর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম রৌশন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সদস্য, তরুন আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক ভিপি নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু ‘ল’ কলেজের সাবেক ভিপি আনিসুর রহমান মিঠু। মঙ্গলবার আওয়ামীলীগের ধানমন্ডিস্থ দলীয় কার্যালয়ে এক সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কুমিল্লার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে আফজল খানকে কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য একমত পোষণ করে দলীয় সমর্থন দেন। দলের সমর্থন প্রত্যাশি অন্যরাও ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তানিম ও মিঠু ছাড়া অন্য সবাই আফজল খানের সমর্থন মেনে নিয়ে নির্বাচন না করে আফজল খানের পক্ষে কাজ করার অঙ্গিকার করেন। এর মধ্য দিয়ে আফজল খান দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সমর্থনে একক প্রার্থী হলেও সাবেক ২ ছাত্র নেতার কারণে নির্বাচনে হিসাবটা বড় কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার আওয়ামীলীগের তিন প্রার্থীর বিষয়টি টক অব দ্য সিটিতে পরিণত হয়।

দলীয় সমর্থন প্রাপ্ত  অধ্যক্ষ আফজল খান বলেন- আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমি দেশের জন্য, জনগণের জন্য দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি। এ বয়সে এসেও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করছি। চাওয়া পাওয়ার হিসাব মিলাইনি কখনো। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছাটাই হলো মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগরবাসীর জন্য একটি পরিকল্পিত নগরায়ণ গড়ে তোলা। বড় দলের রাজনীতি করলে নিজেদের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি হবে, মলমালিন্য দেখা দেবে এটা যেমন স্বাভাবিক আবার ভুল বুঝাবুঝির অবসান হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়্‌ আমার বিশ্বাস, আমরা রাজনৈতিক জীবনের সব ভুল ক্ষমার দৃষ্টি মেনে নিয়ে দলের সবাই এক হয়ে কাজ করবেন। আমি প্রত্যাশা করছি, নির্বাচনকে ঘিরে আমার ভাইয়েরা দলীয় সমর্থনের বাইরে কোন সিদ্ধানত্ম নেবেন না। আমাদের নিজেদের দুরত্বকে পুঁজি করে অন্যরা যাতে সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারে। তাই আসুন, আমরা সবাই দলের আদর্শের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এক সাথে এগিয়ে যাই।

এদিকে আফজল খানের প্রতি দলের সমর্থন মানতে পারছেন না সাবেক ২ ছাত্রলীগ নেতা। নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম ও আনিসুর রহমান মিঠু এখন আফজল খানের প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার থেকে নগরীতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল তারা। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভা থেকে রাগে ক্ষোভে বেরিয়ে এসে তানিম মিঠু পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে কুসিক নির্বাচন অংশ নেয়ার অবস্থান থেকে তারা এক বিন্দু সরে দাঁড়াবেন না। কেন এক কঠোর অবস্থান জানতে চাইলে তানিম জানান- কুমিল্লার তরুন ও যুব সমাজের একটি বিরাট অংশে নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে আমি কুমিল্লার রাজনীতিতে আদর্শ ছাত্র সমাজ, আদর্শ যুব সমাজ গড়ে তোলতে কাজ করে যাচ্ছি। যেখানে তরুন ও যুব সমাজ সমসত্ম কাজের শক্তি সেখানে নবগঠিত কুমিল্লা সিটিকে তরুন যুবরাজই একটি পরিকল্পিত সিটিতে রূপ নিতে পারবেন।

অন্যদিকে আনিসুর রহমান মিঠু বলেন- কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা তৃণমূলের মতামত প্রাধান্য না দিয়ে এক তরফা ভাবে আফজল খানকে সমর্থন দিয়েছে। তাই তাদের সিদ্ধানত্ম মানতে পারছি না। নির্বাচনী প্রচারণপ্‌নমাঠে থেকে নগরবাসীকে একটি পরিকল্পিত নগরী করার স্বপ্ন দেখিয়ে আসছিলাম। এখন তো সেই স্বপ্ন ভঙ্গ করে অন্য কাউকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারি না।

এদিকে আওয়ামীলীগের সমর্থিত আফজল খানের বিপক্ষে একই ঘরনার রাজনীতিতে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতার নির্বাচন থেকে বিরত না থাকা এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়া বা অংশ নিলে তাদের দলীয় কোন্দালন কাজে লাগাতে চান জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এয়ার আহমেদ সেলিম। তবে মিডিয়াতে তার তেমন কোন আলোচনা নেই। কিন্তু তিনি অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে সিটি নির্বাচনে চমক দেখাতেও পারেন। কেননা, গত উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টির সমর্থনে প্রার্থী হয়েছিলেন স্থানীয় জাপা নেতা নুরল ইসলাম নুরু। প্রভাবশালী অন্য ভাইস চেয়ারম্যন প্রার্থীদর প্রচারণার ভিড়ে নুরুল ইসলাম নুরু অসহায়ে মতো বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। তাই এয়ার আহমেদ সেলিমও দু’প্রধান রাজনীতি দলকে টপকিয়ে মেয়র’র আসনটি স্থান করে নিতে পারবেন এমন আশা ও ভরসা ভোটার ও অভিজ্ঞমহলদের।

এদিকে দেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বুধবার তিনি কুমিল্লা রিটানিং অফিসারের নিকট থেকে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেন। এ সময় বিএনপির বেশ কিছু তরুণ নেতাকর্মী ছাড়াও তার অসংখ্য ভক্ত সাথে ছিল। আসিফ আকবর গতকাল বলেন- কুমিল্লাকে মেগা সিটি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ যাবত অনেক নেতাই বড় বড় কথা বলেছেন। কিন্তু কাজের বেলায় সবই ফাঁকি। তিনি বলেন- উন্নয়ন করতে চাইলে গলাবাজির দরকার হয় না।  দরকার সদিচ্ছা। তিনি বলেন- মনিরুল হক সাক্কুকে আমি মনে প্রাণে ভালবাসি। তিনি আপোষহীন নেতা। ইয়াছিনদের কাছে মাথা নত করেনি। আমি কথা দিচ্ছি, তিনি যদি নির্বাচনে প্রার্থী হন তাহলে আমি তাকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবো।

এদিকে বিএপিন’র একটি সূত্র জানায়- ইভিএম বাতিল ও সেনা মোতায়েন ইস্যুতে বিএনপি দলীয় কাউকে কুসিক নির্বাচনে সমর্থন না দিলেও মনিরুল হক সাক্কু নাগরিক ব্যানারে প্রার্থী হতে পারেন। এক্ষেত্রে হাজী ইয়াছিন দলীয় অবস্থানের কারণে নিজে প্রার্থী না হয়ে তার পক্ষে কাউকে সাক্কুর বিপক্ষে মেয়র পদে প্রার্থী করতে পারেন। আর এটি করা হবে সাবেক পৌর মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে কোণঠাসা করার জন্য। ইতিমধ্যে হাজী ইয়াছিন গ্রুপের কয়েকজন নেতার নাম শুনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মোসত্মাক মিয়া, শহর বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব ফরিদ আহমদ।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নেকবর হোসেন/কুমিল্লা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here