সোয়াদুজ্জামান সোয়াদ :: আমরা অনেকেই রাজনীতিকে ঘৃণা করি। নাক ছিটকাই। এড়িয়ে চলি। কারণ আমরা জ্বালাও পোড়াও, মিছিল-মিটিং, সমাবেশ, বিক্ষোভ, ধাওয়া – পাল্টা ধাওয়া, পিকেটিং, ধান-গম চুরিকে রাজনীতি ভেবে বসে আছি। এগুলো আসলে রাজনীতি না রাজনীতির অপসংস্কৃতি। টিকে থাকার লড়াই। পকেট ভারীর ধান্ধা।

আসলে, রাজনীতি ভিন্ন জিনিস। রাজনীতি রাষ্ট্র চালনার নীতি। গণতান্ত্রিক রাজনীতি মানুষের মুক্তির বার্তা। একটা সময় ছিল যখন বাহুবলের উপর সব কিছু চলত। ক্ষমতাবানরা পালোয়ান পুসত। গায়ের জোরে দমিয়ে রাখত, জুলুম চালাত। গণতান্ত্রিক রাজনীতি আমাদের সেই সব থেকে মুক্তি দিয়েছে। বলেছে, “আমরা সবাই সমান। সবার মতামতের গ্রহণযোগ্যতা আছে।”আমরা সেই গণতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে ছিটকে পরেছি। “আমরা সবাই সমান” এই মুল মন্ত্রটি ভুলে গেছি।অপরাজনীতিকে রাজনীতিকে ভেবে ঘৃণা করা শুরু করেছি। কিন্তু আপনি আমি রাজনীতিকে বয়কট করলেই কি রাজনীতি আমাদের পিছু ছাড়বে?

বিশ্বাস করুন, রাজনীতির পরিসর আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি জুড়ে থাকে। কত বছর বয়সে আপনি স্কুলে যাবেন? কবে বিয়ে করবেন? বাবার সম্পত্তির কত অংশ পাবেন? বউ তালাক দিতে চান? কত বছর বয়সে চাকরি থেকে অবসরে যাবেন সব কিছুর জন্যে আইন তৈরি করে রেখেছে এই রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি। কিন্তু আমরা সেটাকে এড়িয়ে চলতে চাই। যার কারণে সেটা আমাদের পেয়ে বসেছে। তাই আপনার তুলনায় অযোগ্য লোকজন আপনার জনপ্রতিনিধি হচ্ছে। আর সেই জনপ্রতিনিধির সিগনেচার আপনার চারিত্রিক সনদে বসে আপনাকে দেখে দাত কেলিয়ে হাসছে। বিষয়টা ভাবনার। ঠিক মত ভাবতে পারলে খুবই পীড়াদায়ক।

আপনি আমি যতই বিএসসি, এমএসসি, বিএ, এমএ পড়ি না কেন কখনোই আমাদের ক্লাস রুমে রাজনীতি শিখাবে না। রাজনীতি শেখানোর বিষয় না। রাজনীতি বোঝার জিনিস। আপনার যে ফ্রেন্ড টা একটিভ রাজনীতি করে তাকে কি কখনো ক্লাসে রাজনীতি শিখানো হয়েছে? নিশ্চয়ই হয় নি। কিন্তু সে রাজনীতি করে কারণ সে সচেতন। [চাপে পরেও করতে পারে] “নেতৃত্ব অনেক বড় জিনিস” এই রোগে ভোগে না। আপনি জানলে অবাক হবেন ৭১% তরুন “নেতৃত্ব! সেটা আমার দাঁড়ায় হবে না” এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত।

এই ভাবে তরুনেরা চলতে পারে না। চলতে দেওয়া যায় না। তাহলে কি করতে হবে?

রাজনীতি সচেতন হতে হবে। না আমি আপনাকে মিছিলে মিটিং সমাবেশে যুক্ত হয়ে হয়ে রাজনীতি করতে বলছি না। আমি আপনাকে রাজনীতির গভীরতা বোঝাতে চাচ্ছি। রাজনীতি সচেতন হতে অনুরোধ রাখছি। জনপ্রতিনিধি সিলেকশনে যোগ্যতার মূল্যায়ণ করার জন্যে বলছি। চোখের সামনে জন প্রতিনিধির ভুলগুলো এড়িয়ে না গিয়ে, প্রতিবাদ করতে বলছি। আপনি জানেন না, আপনি প্রতিবাদ না করলে রাজনীতি আপনাকে খেয়ে ফেলবে। ভয়াবহ ক্ষতি হবে দেশের। অপ-রাজনীতিতে ভেসে যাবে সব কিছু। অযোগ্যরা খুবলে খাবে আপনার দেশটাকে। দালালেরা বিক্রি করে দিবে দেশটাকে।

একটা ঘটনা বলি। ১৯৬৭ সালে মাওলানা ভাসানী তার সন্তোসের বৈন্যাফের গ্রামে প্রতিষ্টা করেন, বৈন্যফ উচ্চ বিদ্যালয়। সেই সময় অনেকে প্রস্তাব করেন বিদ্যালয়ের নাম হোক মওলানা ভাসানী উচ্চ বিদ্যালয়। সে প্রস্তাবে মওলানা ধমকে উঠেন।
“চুপ থাকো। কার নামে স্কুল হইলো সেটা বড় কথা না, ঠিক মত পড়ালেখা হয় কিনা সেইটা আসল।”

আর আমি বলতে চাই, কোন রাজনৈতিক দলে ক্ষমতায় থাকলো সেটা বড় কথা না, জনগনের অধিকার আদায় হচ্ছে কিনা সেইটা আসল। আর সেটা সম্ভব যদি আমরা নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেতন হই। এড়িয়ে না যাই।

তবে হ্যা, আপনি রাজনীতি না করলেও কোনো না কোনো একটা রাজনৈতিক দলের প্রতি আপনার দূর্বলতা আছে। দুর্বলতার কারণ খুজেন। নিজেকে প্রশ্ন করেন কেন আপনি আওয়ামীলীগ কে সমর্থন করেন? কেন বিএনপিকে সমর্থন করেন? কেন ভিপি নূরের কাজ কর্ম ভালো লাগে?

উত্তর আপনার মাঝেই আছে। খুজে দেখুন। যাচাই করুন। ইতিহাস জানুন। রাজনীতি সচেতন হন। দেশটাকে সারিয়ে তুলুন।

শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here