ডেস্ক রিপোর্ট::  বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামালের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (১৮ আগস্ট) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

২০২০ সালের নভেম্বরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামালের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি ও অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গোয়েন্দা অনুসন্ধান দুদকে শুরু হলেও অদৃশ্য কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, ত্রাণের অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অবৈধ সম্পদ অর্জন অভিযোগ ছিল। এবার নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করলো দুদক।

গত ১৬ আগস্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামালের রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাবর রোডের বাসা থেকে নগদ ৩ কোটির বেশি টাকা এবং ১০ লাখ টাকা মূল্যের বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ দল।

এদিকে, অভিযানের আগে ওই বাসা থেকে কমপক্ষে পাঁচ বস্তা টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ওই টাকা সরানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই তথ্য রহস্যজনক রয়ে গেছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, শাহ কামাল বিভিন্ন প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থেকে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্প (যা দেশব্যাপী ৪০ দিনের কর্মসূচি নামের প্রকল্প নামে পরিচিত), গ্রামীণ সড়কে ছোট-বড় সেতু কালভার্ট নির্মাণ, এইচবিবি, বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প থেকে এই অর্থ লোপাট করেছেন। কামালের নামে টঙ্গি মৌজায় পাঁচ কাঠার প্লট, উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে ৩ কাঠার প্লট এবং মোহাম্মদপুরে স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।

দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়, শাহ কামাল বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের চাকরিতে যোগদান করে গাজীপুর জেলায় ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে, শরীয়তপুর জেলায় এডিসি হিসেবে, নারায়ণগঞ্জ সিটির অস্থায়ী প্রশাসক হিসেবে ও সর্বশেষ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই সময়ে অপরাপর ব্যক্তিদের সহযোগিতায় দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, ত্রাণের অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন অনিয়ম করে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। শাহ কামাল ২০২০ সালের ৩০ জুন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে পিআরএলে গমন করেছেন। তার স্ত্রী ফারজানা সিদ্দিকা পেশায় গৃহিণী। তার তিন মেয়ে রয়েছে।

জানা যায়, ১৬ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে শাহ কামালের মোহাম্মদপুর বাবর রোডের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া অর্থের মধ্যে ছিল নগদ ৩ কোটি ১ লাখ ১০ হাজার ১৬৬ টাকা, ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা দামের ১০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং ১০ লাখ ৩ হাজার ৩০৬ টাকা মূল্যমানের বিদেশি মুদ্রা। আর বিদেশি মুদ্রার মধ্যে ৩ হাজার মার্কিন ডলার, ১ হাজার ৩২০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ২ হাজার ৯৬৯ সৌদি রিয়াল, ৪ হাজার ১২২ সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার, ১ হাজার ৯১৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার, ৩৫ হাজার কোরিয়ান ইউয়ান ও ১৯৯ চীনা ইউয়ান মুদ্রা রয়েছে।

গত ১৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর মহাখালী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তিনি ভারত পালিয়ে যাওয়ার জন্য মহাখালীর ওই বাসায় অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে। শাহ কামাল ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। এ দায়িত্বে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে বদলি, কেনাকাটা, উন্নয়ন কাজসহ বিভিন্ন উৎস থেকে অবৈধ অর্থ গ্রহণের অভিযোগ ছিল। শাহ কামাল ২০২০ সালের ২৯ জুন সরকারি চাকরি থেকে অবসরগ্রহণ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here