কয়েক সেকেন্ড যে মানুষের জীবনে উলট পালট করে দিতে পারে আমার মনে হয় প্রতিটা মানুষ এই সত্যিটা খুব কঠিন বাস্তবতার মুখমুখী না হলে বুঝবে না।
আমি খুব সাধারণ একটা পরিবার এ জন্মেছি কিন্তু আমার পরিবার আমার গর্ব কারণ আমার বিশ্বাস ৬ জন মানুষের এই ঘরটায় সব সময় মানুষগুলু দুধে-ভাতে থাকে।
২৩ নভেম্বর, ২০১২, এশার নামাজের সময়, সবাই যে যার পড়াশুনা নিয়ে বেস্ত। আব্বু মাগরিব নামাজ পরে শরীর খারাপ লাগছে বলে ঘুমালো।
হটাত করে আব্বুর আওয়াজ শুনে রুমে গিয়ে দেখি আমার আব্বু বসা থেকে পরে জাস্ছে। উপমা আব্বুর পাশে থাকে উপমার হাতের উপর আব্বু পড়ল। জাস্ট কয়েক মিনিট!
আমাদের জীবনের সব চেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেল, আব্বু ব্রেন স্ট্রোক করলো। মাইনর স্ট্রোক।
৩ টা দিন আমি আর আম্মু, আমাদের সময় কেটেছে আই.সি.উ এর সামনে দুইটা সোফায় বসে, আব্বুর ফোন ভর্তি আমাদের সবার ছবি দিয়ে। আম্মু যখন রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ত আমি আব্বুর ফোন থেকে সব গুলা ছবি এক এক করে দেখতাম। আমার আব্বু!
ম্যাথ পারতাম না বলে যে কিনা আমার এসএসসি পরীক্ষার সময় পুরোটা ম্যাথ পরীক্ষার সময় বাইরে দাড়িয়ে ছিল! আমার আব্বু! পড়তে পড়তে পা ফুলে যেত বলে যে কিনা একটু পর পর আসত পা টিপে দেয়ার জন্যে।
আই.সি.উ এর তৃতীয় দিন আমাদের দেখা করার সুযোগ এলো আব্বুর সাথে। আব্বু তেমন কথা বলতে পারছিল না… ডাক্তার এর কড়া নির্দেশ রোগীর সামনে কান্নাকাটি করা যাবে না, হাসি মুখের আমি যখন আব্বুর সামনে গিয়ে দাড়ালাম, আব্বু তখন নার্স কে দেখিয়ে বলছিল, “এইটা আমার বাবা।”
জন্মসুত্রে, আমি এমনিতেই আব্বুর মা হয়ে জন্মেছি কিন্তু সে দিন থেকে আমি আব্বুর বাবা ও হয়ে গেলাম।
যাই হোক, সবার দোয়ার কারণেই হয়তবা, সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমার আব্বু পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলো কোনো রকম কোনো শারীরিক ক্ষতি ছাড়া। আমার আব্বু!
যার চোখের পানির চেয়ে মূল্যবান আমার কাছে এই পৃথিবীতে কিছুই নাই, সুস্থ ভাবে আব্বু বেচে থাকুক আরো অনেক বছর, যখন আমার ঘর ভর্তি ছেলে মেয়ে গুলা হবে তখন তারা দেখুক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নানা ভাই কাকে বলে।
লেখক: rihana0246@gmail.com