মিশরের বিভিন্ন শহরে দ্বিতীয় দিনের মতো পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
গত রাতে দুজন বিক্ষোভকারী নিহত এবং কয়েকশ আহত হয়েছে।
কায়রোর কেন্দ্রস্থলে তাহরির স্কোয়ারের ঠিক বাইরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে রক্ষা করতে দাঙ্গা পুলিশ অবস্থান নিয়েছে এবং ব্যাপকভাবে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করছে।
কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পিছু হঁটছে না। এছাড়া আলোকজান্দ্রিয়া, সুয়েজ ও আসওয়ান শহরেও বিক্ষোভ হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিলের প্রতি একটি বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবার দাবি জানাচ্ছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে এ বছরের শুরুতে যেরকম প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছিলো মিশরে একই রকমের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে আবারও৻
মিশর কাঁপানো সেই ১৮ দিনের গণ-আন্দোলনের মূল কেন্দ্র ছিলো রাজধানীর তাহরির স্কয়ার, এবারও তাই।
কোনো কোনো সংবাদপত্র বলছে, ‘এবার শুরু হয়েছে দ্বিতীয় বিপ্লব।
বিক্ষোভকারীরা শুক্রবার রাত থেকে এই চত্বর দখল করে নেয়। তারপর থেকে কয়েকশ বিক্ষোভকারী রাতভর এই চত্বরে অস্থায়ী ক্যাম্প বসিয়ে অবস্থান করছে।
বিক্ষোভকারীদেরকে দাঙ্গা পুলিশ তাহরির স্কয়ার থেকে সরাতে গেলে শনিবার সংঘর্ষ শুরু হয়, যা আজ রোববারও অব্যাহত আছে।
বিক্ষোভকারীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবনের দিকে অগ্রসর হতে চেষ্টা করলে পুলিশ দফায় দফায় কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়িতেও আগুন দিয়েছে।
এই বিক্ষোভ এখন আর শুধু রাজধানীর ভেতরেই সীমিত নেই। বিক্ষোভ হচ্ছে আলেকজান্দ্রিয়া, সুয়েজ এবং আসওয়ান শহরেও।
সংঘর্ষে দুজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে সাতশোরও বেশি মানুষ।
আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্যে তাহরির স্কয়ারে অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র বা ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে।
সংবাদদাতারা বলছেন, পুলিশ যতো বেশি সক্রিয় হচ্ছে বিক্ষোভকারীরা ততোটাই মরিয়া হয়ে উঠছে। তাহরির স্কয়ার থেকে তাদেরকে কিছুতেই তাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
কেনো এই বিক্ষোভ
প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারককে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার পর অন্তবর্তী একটি সামরিক পরিষদ মিশরে সরকার পরিচালনা করছে৻ সামরিক এই পরিষদের বিরুদ্ধেই এবার বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা দাবী করছে, বেসামরিক সরকারের কাছে এই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
তারা বলছে, এই পরিষদ যে গণতান্ত্রিক কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিচ্ছে সেরকম কোনো লক্ষণও তারা দেখছেন না।
তারা বলছেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যে মি. মুবারক এখনও ক্ষমতায় আছেন। যদিও এ মাসের শেষের দিকে সংসদ নির্বাচন শুরু হওয়ার কথা।
মিশরের অস্থায়ী এই পরিষদ সংবিধানের খসড়া তৈরির জন্যেও কাজ করছে। বিক্ষোভকারীদের উদ্বেগ আর আশঙ্কা হলো যে, তাদের হাতে এই খসড়া তৈরি হলে সামরিক বাহিনীর হাতে অনেক বেশি ক্ষমতা চলে যেতে পারে।
তাহরির স্কয়ারে যারা বিক্ষোভ করতে জড়ো হয়েছেন, সামরিক বাহিনী যেভাবে সরকার পরিচালনা করছে সেটা তাদের মধ্যে হতাশা আর ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
তাদের প্রথম দাবী: সামরিক নেতাদেরকে পদত্যাগ করতে হবে।তারপর ক্ষমতার হস্তান্তর করতে হবে বেসামরিক প্রশাসনের কাছে।
কিন্তু এখনকার এই বিক্ষোভ থেকে এটা পরিষ্কার যে, সামরিক বাহিনী অনেকেরই আস্থা হারাতে শুরু করেছে।
সরকারের বক্তব্য
সরকারের তরফ থেকে এখনও কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়নি৻ সেরকম বক্তব্যও আসেনি।
সংবাদদাতারা বলছেন যে, কর্তৃপক্ষকে অনেকটা নমনীয় বলেই মনে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এসাম শরাফ বিক্ষোভকারীদেরকে তাহরির স্কয়ার ছেড়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তার এই বিবৃতি প্রচার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, তাহরির স্কয়ারে যা হচ্ছে সেটা খুবই বিপদজনক মিশর এবং যে বিপ্লবের মাধ্যমে হোসনি মুবাররককে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে, এই বিক্ষোভ তাকে হুমকির মুখেও ছুঁড়ে দিতে পারে।
বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, সংবিধানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার দেওয়া হয়েছে তবে বিক্ষোভকারীদেরকে দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে।
বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন যে, তাদের দেশ এবং সেই বিপ্লবের স্বার্থে চিন্তাভাবনা করেই তাদেরকে অগ্রসর হতে হবে।