সোহানুর রহমান,কলকাতা থেকে ::পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অনুষ্ঠিত প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৩ দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৌরভ রায়। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র এবং বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্টের সদস্য।
বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্টের চেয়ারপারসন ফিরোজ মোস্তফা এবং নির্বাহী প্রধান সোহানুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে সুন্দরবন অঞ্চলে জলবায়ু পরির্বতনের বিরুপ প্র্র্রভাব মোকাবিলা ও দুই দেশে অবস্থিত সুন্দরবন রক্ষায় যুক্তি তর্ক তুলে ধরেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) কলকাতা শহরে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুুুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল লবনাক্ততা থেকে সুন্দরবনের সুরক্ষায় উজানের দেশগুলো থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা ও যথাযথ বন্টনের দাবি তুলেছেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আন্তজার্তিক পরিবেশ ও নদী বিজ্ঞানী, বিশ্বভারতীর ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক ড. মলয় মুখোপাধ্যায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রনয়ণে ভৌগলিক বৈশিষ্টকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে প্রকৃতি ক্ষমা করবে না। সুন্দরবনে বসতি স্থাপন ও ম্যানগ্রোভ ধ্বংসের ফলে আগামী দিনে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের মুখে পড়তে হবে। সুন্দরবনের বিভিন্ন খাঁড়ি ও নদীতে বাঁধ নির্মাণে পরিবেশে কথা ভাবা হয়নি ফলে ভূবৈচিত্র্য ও পরিবেশের অবনমন হয়েছে ব্যপক হারে। যা আগামীতে আরও বহুমুখী বিপদ ডেকে আনবে এমনই আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
সুন্দরবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ক আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন দুই বাংলার সুন্দরবন গবেষক ড .গৌতম কুমার দাস, কলকাতার সরশুনা কলেজের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক ড. শাশ্বতী রায়, সিধুকানু বিরষা মুন্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের শিক্ষক বিশ্বজিৎ বেরা, গবেষক সনত কুমার পুরকাইত এবং বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্টের প্রধান নির্বাহী সোহানুর রহমান প্রমুখ।
ভূগোল ও পরিবেশ পত্রিকা গোষ্ঠীর তত্বাবধানে দুই বাংলার সুন্দরবনের জলবায়ু সংক্রান্ত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের যৌথ আয়োজক ছিল বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্ট। সম্মেলনে ভারত ও বাংলাদেশের গবেষক ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড়শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
সুন্দরবন অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের গতি-প্রকৃতি, জীবন ও জীবিকায় বিরুপ প্রভাব এবং তা মোকাবিলায় করণীয় বিষয়গুলো সম্মেলনের আলোচনায় স্থান পায়। জলবায়ু ন্যাযতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুন্দরবনকে সুরক্ষিত রাখতে তরুণ প্রজন্মকে আরো জোরদার ভূমিকা পালনের আহবান জানান বক্তারা।
এছাড়া সুন্দরবনকে সুরক্ষিত রাখতে আন্তদেশীয় সমন্বিত পরিকল্পনা এবং স্থানীয় মানুষের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর দাবি তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বনজীবীদের বিকল্প জীবিকায়ন এবং যথাযথ জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে নানা অব্যস্থাপনা, দখল-দুষণ প্রতিরোধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৌরভ রায় সহ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অন্যতম প্রতিনিধি হিসাবে সম্মেলনে ভূমিকা রাখেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিসারিজ বিভাগের দুই ছাত্র আাল আজিম ও প্রত্যয় বৈদ্য, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বিভাগের ছাত্র ফয়েজুর রহমান, বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্টের সদস্য রুহুল আমিন রাব্বী, মোঃ ওমর ফারুক ও চৈতী মন্ডল প্রমুখ।
সম্মেলন শেষে ভারতীয় সুন্দরবনে তিনদিনের শিক্ষাসফরে অংশ নেয় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্টের চেয়ারপারসন ফিরোজ মোস্তফা জানান, এ সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে পানি বন্টনের দাবি তোলা হয়েছে।
পরবর্তী সম্মেলন এ বছররের নভেম্বরে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুন্দরবন লাগোয়া সাতক্ষীরা শ্যামনগরে অনুষ্ঠিত হবে।