মঙ্গল শোভাযাত্রা ২০১৮স্টাফ রিপোর্টার :: পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বরণ করে নিয়েছে ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে। সার্বজনীন এ উৎসবে নগরীর পথে পথে এখন লাখো মানুষের ঢল। অশুভ শক্তিকে বিতাড়ন করা মঙ্গল শোভাযাত্রায় দেখা গেছে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর সম্প্রীতির জোয়ার।

সার্বজনীন এ উৎসবের নানা আয়োজনের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের এ বর্ণিল আয়োজনটি রঙে-ঢঙে পায় ভিন্ন এক মাত্রা। তরুণ শিল্পীদের রাত-দিন মননশীল শ্রমে গড়ে উঠেছে শোভাযাত্রার নানা অনুষঙ্গ। এবারের ২৯তম শোভাযাত্রার স্লোগান ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।

শনিবার সকাল সোয়া ৯টায় চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে বের হয় বর্ষবরণের মঙ্গল শোভাযাত্রা। মঙ্গলের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য চারু শিক্ষার্থীরা বেছে নিয়েছেন বাঘ ও পেঁচা। সঙ্গে রয়েছে বিশাল সাইজের রাজা-রানী। এর সঙ্গে রয়েছে তার সেনাপতি, টেপা পুতুল, সূর্যদেবতা। এ ছাড়া শোভাযাত্রার সবচেয়ে বড় শিল্প কাঠামো হচ্ছে হরিণ। সোনালি রঙের এ হরিণ নিয়ে শোভাযাত্রা করে সবাইকে সোনার মানুষ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

আনন্দ উচ্ছ্বাসে নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছেন সবাই। পুরনো কষ্টকে ভুলে নতুনকে পাওয়ার আশায় এই আনন্দ। একে অন্যকে জানাচ্ছে নববর্ষের শুভেচ্ছা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আগত দর্শনার্থীরা সকাল থেকে উপভোগ করেছে বর্ষবরণের নানা আয়োজন।

পয়ালা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বরাবরের মতো এবারও সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, টিএসসি এবং চারুকলাসহ গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিণত হয় এক বিশাল জনসমুদ্রে।

এ আয়োজনে রয়েছে সর্বজনীন আর অসাম্প্রদায়িক আবহ। বর্ষবরণের এ উৎসবে যোগ দিয়েছেন দেশের বাইরের মানুষও। বিশেষ করে বিদেশি মিশন ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ছাড়া বাংলাদেশে চাকরির সূত্রে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকরা ছুটে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল শোভাযাত্রায়। বাঙালিয়ানার অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়েছেন বিদেশি নারীরা। আর বিদেশি পুরুষরা পরেছেন লুঙ্গি, ধুতি, পাঞ্জাবি ও ফতুয়া। অনেকে মাথায় বেঁধেছেন গামছা।

কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসন ভিত্তি করে প্রবর্তন হয় নতুন এই বাংলা সন।

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here