মহান মুক্তিযুদ্ধে ৭১-এর ১৩ ডিসেম্বরের কথা মনে হলে বিরল উপজেলার বহলাসহ আশেপাশের অনেক গ্রামের হাজারো মানুষের গা এখনোও শিউরে উঠে। ৭১-এর এই দিনে পাকহানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা এই বহলা গ্রামের সাধারণ মানুষদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে একই সাথে প্রাণ হারায় ঐ গ্রামের ৪৩ জন নিরীহ মানুষ।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যার সময় বিরল উপজেলার বহলা গ্রামটি পুরোটাই ঘিরে ফেলে পাকহানাদার বাহিনীর সদস্য ও তাদের দোসররা। তারা প্রস্তাব দেয় সে গ্রামে খাঁনসেনাদের ক্যাম্প স্থাপন করার। এ সময় গ্রামের সাধারণ মানুষেরা ক্যাম্প স্থাপনে চরম আপত্তি তুললে মুহুর্তে ঘটে যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।
বহলা গ্রামের সকল পুরুষ মানুষকে একত্রিত করে তাদের মাগরিবের নামাজ আদায়ের সময় দেয়া হলেও মাত্র দু’রাকাত নামাজ আদায় করার সাথে সাথে পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা সাধারণ মানুষগুলিকে সারিবদ্ধ করে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ৪৩ জন নিরীহ মানুষের জীবন প্রদীপ চিরতরে নিভে যায়। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নাম ধরে একটু পানির জন্য ডাকতে ডাকতে ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তারা। সে সময় ভাগ্যের জোরে বেঁচে যান বর্তমানে কালের স্বাক্ষী আব্দুল গণি ও পায়ে গুলিবিদ্ধ আনিছুর রহমান।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সব থেকে বেশী মানুষ হলো গণির পরিবারের। পাকসেনা ও তাদের দোসররা মেরে ফেলে গণির পিতা তছির মোহাম্মদ, চাচা আব্দুল লতিফ, ইছাহাক আলী, জয়নাল আবেদীন, ওমর আলী, রহিম উদ্দীন ও মহসিন আলী। ভাই নুর মোহাম্মদ, চাচাতো ভাই সমির মোহাম্মদ, ছপি মোহাম্মদ, রবিতুল্লাহ , গোলাম মোস্তফা ও মনু। ফুফাতো ভাই মজিতুল্লাহ, মামাতো ভাই আকবর আলী ও আমিন মোহাম্মদ, ভগ্নিপতি আব্দুস সাত্তার, ভাতিজা করিম এবং দাদা বারেক মোহাম্মদকে। আর বাকিরা বিভিন্ন পরিবারের।
পাকসেনা ও তাদের দোসররা রক্তে রক্তাক্ত লাশ গুলির স্তূপ করে দিয়ে চলে যায়। পুরুষ বলতে গণী ও আনিছুর ছাড়া তখন আর গ্রামটিতে কেউ না থাকার কারণে টানা ৩ দিন পর অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর বিকালে পচন ধরা লাশ গুলিকে পাশে একটি গর্ত করে এক সাথে সমাহিত করা হয়।
১৩ ডিসেম্বর বহলা ট্র্যাজেটি বা গণহত্যা দিবস। দিবসটি ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।