আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজায় ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি শুরুর পর দুই ঘণ্টার মধ্যে আবারো গোলাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা।‘হামাসের দিক থেকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হচ্ছে’- এমন অভিযোগ তুলে ইসরায়েল শুক্রবার ফের আক্রমণ শুরুর পর ৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের তিন সপ্তাহের অভিযানে দেড় সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রচেষ্টায় সর্বশেষ এই ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতিকে প্রাণহানি বন্ধের শুভ ইঙ্গিত হিসেবেই ধরে নেয়া হয়েছিল।

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির প্রস্তাবিত ওই যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়ার পরও ঠিক কী কারণে তা ভাঙা হলো, সে বিষয়ে ইসরায়েলের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের সম্মতিতে শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা) থেকে এই অস্ত্রবিরতি শুরু হয়েছিল।যুদ্ধবিরতির ওই সময়টিতে মিশরের কায়রোতে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের আলোচনায় বসারও কথা ছিল।

শুক্রবার গাজার দিয়ার আল বালাহ এলাকায় ইসরায়েলের ছোড়া একটি কামানের গোলা অবিস্ফোরিত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকে।কীভাবে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমঝোতায় পৌঁছানো যায় সে বিষয়ে এই বৈঠকে দুই পক্ষের আলোচনা হবে বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়।

৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির মাত্র দুই ঘণ্টা পার হওয়ার পর দক্ষিণ রাফা এলাকায় ইসরায়েলের একটি ট্যাঙ্ক থেকে গোলা নিক্ষেপ হতে দেখেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একজন ফটো সাংবাদিক।

এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে তেলআবিবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে দাবি করা হয়, গাজায় হামাস ও অন্যান্য অস্ত্রধারী দলগুলো ‘ঘৃণ্যভাবে’ যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে। তবে হামাস কীভাবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে- সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি ইসরায়েল।

যুদ্ধবিরতি শুরুর পর সকাল ৮টার দিকে বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় মালামালের বোঝা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত বাসস্থানের দিকে যেতে থাকে তারা।অস্ত্রবিরতি শুরুর দুইঘণ্টা পর দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের গোলা হামলা শুরু হলে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে থাকেন বাসিন্দারা।বুধবার জাবালিয়ায় জাতিসংঘ শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি গোলা হামলায় ১৫ জন নিহত হওয়ার পর গাজায় বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে বিশ্ব সম্প্রদায়।

এর আগের সপ্তাহে একইভাবে অপর একটি জাতিসংঘ শরণার্থী শিবিরে হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছিল।গাজায় অভিযান শুরুর পর বিশ্বসংস্থাটির অন্তত ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র ইসরায়েলি সেনাদের হামলার শিকার হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৮ জুলাই ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর গাজায় প্রায় ১৫শ’ মানুষ নিহত হয়েছে যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। সাত হাজারেরও বেশি মানুষ ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় আহত হয়।

অন্যদিকে, গাজার হামাস যোদ্ধাদের আক্রমণে ইসরায়েলের ৬১ সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া হামাসের রকেট হামলায় তিন ইসরায়েলি নাগরিক নিহত ও অন্তত চারশ’ জন আহত হয়েছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here