দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে ক্যাব চট্টগ্রামের আহবান
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না সর্বদলীয় অর্ন্তবতীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্তিরতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ১৬ কোটি ভোক্তা। যদিও প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলি ব্যবসা বানিজ্য ও শিল্প কলখানার ক্ষতি বেশী বলে প্রচারনা চালালেও হরতাল, জ্বালাও পোড়াও অসহিষ্ণু রাজনীতির সত্যিকারের বলি হচ্ছেন ভোক্তা হিসাবে দেশের ১৬কোটি সাধারন জনগন।
দেশের সকল মহল উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় দিনাযপন করলেও সীমিত আয়ের মানুষ, দৈনিক আয়ের উপর নির্ভরশীল সাধারন মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা ও বেঁচে থাকার বিষয়ে কোন রাজনৈতিক মহল চিন্তা না করায় বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য সরবরাহ, অত্যাবশ্যকীয় সেবা সার্ভিসের অব্যাহত সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার বিষয়ে সুনিদিষ্ঠ ঘোষনা না থাকায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দুই প্রধান জোটের মধ্যে মধ্যযুগীয় পন্থা সংঘাতের পথ পরিহার করে অবিলম্বে সংলাপে বসা, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য ও অত্যাবশ্যকীয় সেবা সার্ভিসকে হরতাল ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের আওতা বর্হিভুত রাখার দাবী জানয়িছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও মহানগর কমিটি।
নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে আরো বলেন দেশের যে কোন রাজনৈতিক সংকটের সময় দেশের ১৬ কোটি ভোক্তার স্বার্থটি বারংবারই উপেক্ষিত থেকেছে। দেশের মানুষ যখন চাল, ডাল, পিয়াঁজ, সবজি, সয়াবিন তেল, চিনি, আটা, ময়দা ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি, নকল-ভেজালে ও প্রতারনায় ছেয়ে গেছে, অত্যাবশ্যকীয় সেবা সার্ভিস বিশেষ করে রিকসা, সিএনজি, বাস ভাড়া, বাড়ীভাড়া, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা সেবা, জীবন রক্ষাকারী ওষধের সীমাহীন উর্ধ্বগগিতে মধ্যবিত্ত ও সাধারন মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করা দুরহ হয়ে পড়েছে, সেখানে কোন রাজনৈতিক দল এ সমস্ত বিষয়ে একটিও উচ্চ বাক্য করেনি।
যদিও সকল রাজনৈতিক দলগুলি দেশের সাধারন মানুষের জন্য রাজনীতি করেন বলে সর্বক্ষন বুলি আওলিয়ে থাকেন। আর এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার না সর্বদলীয় সরকার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে জ্বালাও, পোড়াও, ভাঙচুর, হরতাল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল ভোগ্য পণ্যের পরিবহন সমস্যার কথা বলে ব্যবসায়ীরা বাজারে হু হু করে আগুন দিচ্ছে।
সীমিত আয়ের মানুষ ও দৈনিক আয়ের উপর নির্ভরশীল একটি বড় গোষ্ঠি হরতালও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে সীমাহীন দুঃখ ও কষ্ঠের মধ্যে দিন যাপান করতে বাধ্য হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের বিশেষ দৃষ্ঠি রাখা প্রয়োজন ছিল, তাদের এ ধরনের নেতিবাচক কর্মকান্ড জাতিকে হতাশ করছে। তাই প্রাগৈতিহাসিক যুগের ন্যায় রাজপথে মল্ল যুদ্ধের ন্যায় সমস্যার সমাধান না করে আলোচনার টেবিলে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসার জন্য সকল রাজনৈতিক শক্তির কাছে ক্যাব আহবান জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, হরতাল ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রতিদিনই ভাংচুরের শিকার হচ্ছেন গণপরিবহনের বাস, ট্রাক, সিএনজি ও কভার্ড ভ্যান। অথচ এ গুলি জাতীয় অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে। কিছুদিন ধরেই জাতীয় পরিবহন রেলও এ আক্রমন থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
এছাড়াও হরতাল পরবর্তী সহিংষতায় গণমাধ্যম, দোকান, ব্যাংক, বীমা, ক্ষুদ্র ঋনদান প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হামলার মতো ন্যাক্কার জনক ঘটনার কারনে দেশে নেতিবাচক রাজনীতিকে উস্কে দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করে অবিলম্বে এ ধরনের ঘটনা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনে সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মতৈক্য প্রতিষ্ঠার দাবী করছে। এছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে দেশের সংখ্যালগু, হিন্দু অধ্যুসিত এলাকা, জনগোষ্ঠি ও তাদের সহায়-সম্পদ লুট করার হীন মানষে সংখ্যালগু জনগোষ্ঠির স্থাপনার উপর হামলা বন্ধের দাবী জানান।
নেতৃবৃন্দ আরো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যুদ্ধকালীন সময়েও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যম কর্মীদের উপর হামলার আওতা বর্হিভুত থাকলেও চলমান রাজনৈতিক সহিংষতায় সাংবাদিক, পত্রপত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানান। অবিলম্বে এ ধরনের ন্যাক্কারজন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটার জন্য আহবান জানান। কারন এ সমস্ত ঘটনা আমাদেরকে আবারো মধ্যযুগীয় বর্বরতার যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন বিগত হরতাল ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ককসবাজার, বান্দারবান, রাঙ্গামাটিসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিপুল পরিমান পর্যটকদের আটকে থাকার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃনা প্রকাশ করে বলেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশেও পর্যটকদের বিশেষ ভাবে সম্মানিত করে তাদের নির্বিগ্নে চলাচল ও নিরাপত্তা বিধানে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের পাশাপাশি স্থানীয় জনগন ও রাজনৈতিক মহল বিশেষ যতœবান। পর্যটকগন যে দেশেরই হোক না কেন, তারা আমাদের অতিথি, আর অতিথিদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। এছাড়াও বছরের শেষ সময়ে আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষার বিষয় মাথায় রেখে রাজনৈতিক কর্মসুচি দেয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটি সদস্য এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব নেতা সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, অধ্যক্ষ দবির উদ্দীন খান, আবদুল ওয়াহাব চৌধুরী, অধ্যক্ষ মনসুর হাবিব, হাজী ইকবাল আলী আকবর, আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ফজলুল গনি মাহমুদ, রাশেদ খান মেনন, উম্মে কুলসুম আরজু, হাজী আবু তাহের, উপাধ্যক্ষ কুতুব উদ্দীন, শিক্ষক নেতা লকিয়ত উল্লাহ, অঞ্চল চৌধুরী, শাহাদৎ হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম, জানে আলম, সেলিম মিয়া, আবু ইউনুচ, ইসমাইল ফারুকী, হারুন গফুর ভুঈয়া, মোনায়েম বাপ্পী, নারী নেত্রী আবিদা আজাদ, দীপিকা বড়–য়া, সায়মা হক, রুখসানা আখতারুন্নবী, অ্যাডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিত, শাহনাজ পারভীন লুনা, কাজী সমিতির নেতা ইউসুফ চৌধুরী, মৌলানা হারুন চৌধুরী প্রমুখ।