সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার পারকুমিরার বধ্যভূমি নামক স্থানে ৭৯জন ব্যক্তিকে পাক সেনারা ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। পরে সেখানেই শহীদদের গণকবর দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর একে একে ৪০টি বছর অতিবাহিত হলেও সরকারীভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সেই বধ্যভূমিতে এখন সবুজ ফসলের সমারহ। তাদের আটকে রাখা ঘর গুলি অযত্ন আর অবহেলায় বর্তমানে বন্যা কবলিত মানুষের আবাসস্থল।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, থানার পারকুমিরায় গণহত্যা একটি সম্মুখ যুদ্ধ। ১৯৭১সালের ২৩এপ্রিল পাটকেলঘাটার সন্নিকটে পারকুমিরা নামক স্থানে ৭৯জন গ্রামবাসীকে পাকসেনারা সেদিন ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। এর মধ্যে ৪৯জনের লাশ পারকুমিরার বধ্যভূমিতে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। কাশীপুর গ্রামের শেখ হয়দার আলীকে পাকসেনারা গায়ে পাট জড়িয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে। শহীদ পরিবারের সন্তান তালা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম সেদিনের সেই বর্বরস্থ্য হত্যাযজ্ঞের লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, সেদিন ছিল শুক্রবার। মসজিদে জুম্মার আযান হচ্ছিল এ সময় পাটকেলঘাটা থেকে পাকিস্তানী হায়নারা বীর দর্পে পারকুমিরায় গিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীকে আলোচনার কথা বলে একত্রিত করে পারকুমিরা স্বাস্থ্য কমপেক্সে আটকে রাখে। এ সময় সহজ সরল গ্রামবাসীর উপর ব্রাশ ফায়ার করলে ঘটনাস্থলেই ৭৯জন নিহত হয়। যাদের পরিচয় পাওয়া যায় তাদের অনেককে পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়। বাকী যাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি তাদেরকে পারকুমিরার ঐ বধ্যভূমিতে গণকবর দেওয়া হয়। স্বাধীনতার ৪০বছর অতিবাহিত হলেও আজও সেই বীর শহীদদের গণকবর রক্ষার্থে ও আটকে রাখা ঘর গুলি সংষ্কারে সরকারীভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯২সালের ৪ঠা মে কাশীপুর বিদ্যালয় মাঠে জনসভা শেষে পারকুমিরা বধ্যভূমির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু অদ্যবধি এই বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে আজও কোন উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। প্রতি বছর ২৩এপ্রিল শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন দলীয় ভাবে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। কিন্তু বাকী দিন গুলি এই গণকবরের বুকে চাষাবাদ হয়ে থাকে। বর্তমানে সেখানে হলুদ, ধান চাষাবাদ করে সবুজ ফসলের সমারহ। বর্তমানে শহীদ পরিবারের সরকারের কাছে একটাই চাওয়া শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই বধ্যভূমি রক্ষা করা।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নাজমুল হক/সাতক্ষীরা