বাঙ্গালী জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ নামক এ দেশটিকে স্বাধীন করতে আজ থেকে ৪০ বছর আগে সারা দেশের মত মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় অনেক মুক্তি পাগল মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ২৫ মার্চ কালো রাতের মধ্য দিয়েই বাঙালী নিধন শুরু হয়।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে জুড়ীতে পাক বাহিনী প্রবেশ করে। শুরু হয় লুটপাঠ, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতন। হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাচঁতে তখন অনেকেই শরনার্থী হয়ে আশ্রয় নেয় পার্শ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মনগর ও তার আশ-পাশের এলাকায়। ৫ ডিসেম্বর জুড়ী শত্রু মুক্ত হলে শুরু হয় ঘরে ফেরা। জুড়ী শহরের বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের ৪নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের মার্কেট এবং পূরনো জনতা ব্যাংক ভবনে পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন দাউদ ও তার সহযোগীরা নির্যাতনশালা তৈরী করে স’ানীয় রাজাকার, আল্‌-বদর, আস্‌-সামস ও দালালদের সহযোগীতায় নারী-পুরুষদের ধরে এনে এখানে নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ পার্শ্ববর্তী মুক্তিযোদ্ধা মাসুক আহমদ ও জাগদারি নুনিয়ার পুকুরে ফেলে দিত পাক হায়েনারা।

মুক্তিযোদ্ধা শ্রীমনত রায় চৌধুরী, কুলেশ চন্দ্র চন্দ, বাবুল মিয়া বলেন, মুক্ত জুড়ীতে ফিরে দেখা যায়, এই পুকুরকে ঘিরে রয়েছে কুকুর ও শকুনীরা। প্রয়াত গনপরিষদ সদস্য তৈমুছ আলীসহ উৎসুক জনতা ভীর জমান পুকুরের কাছে। হাতের শাঁখা, চুল, ছেড়া শাঁড়ি, বুকের পাঁজর, হাড় আর অসংখ্য মাথার খুলি যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কুকুর আর শকুনের দল মৃতদেহ নিয়ে টানাটানি করছে। এ এক করুণ চিত্র যা দেখে তখন পুরো এলাকায় মাতম শুরু হয়। হাঁউ মাঁউ করে কেঁদে উঠেন সবাই। হারিয়ে যাওয়া আপনজনকে খুঁজতে থাকে অনেকেই। যুদ্ধ থেকে ফেরা মুক্তিযোদ্ধা ছত্তই মিয়া শনাক্ত করেন তার পিতার বিকৃত লাশ। তবে, আর কাউকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। পরে বাঁশ দিয়ে ভার তৈরি করে লাশগুলো দাফনে নেমে পড়েন সবাই।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মজম্মিল আলী, আব্দুস সহিদ চৌধুরী, আব্দুল আজিজ, আলিম মিয়া, আব্দুল হান্নান জানান, এটি জুড়ীর বৃহৎ বধ্যভূমি। কিন’ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, বড় অযত্নে পড়ে আছে এস’ানটি। এ প্রজন্মের এ বৃহৎ বধ্যভূমির তথ্যটি অনেকেরই জানা নেই। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও এ বধ্যভূমির সংরক্ষনের কোন উদ্যোগ কোন সরকারের আমলেই নেয়া হয়নি। ফলে, লোকচক্ষুর অনতরালে হারিয়ে যাচ্ছে এটি। এ বধ্যভূমিটির সংরক্ষনের উদ্যোগ নিতে বর্তমান সরকারের নিকট দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।

সজল দেব, মৌলভীবাজার                    

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here