ষ্টাফ রিপোর্টার :: চাহিদার চেয়ে বেশি ছোলা আমদানি করে গত রমজানে বিপাকে পড়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আগামী রমজান আসতে আসতে এই ছোলায় পোকা ধরে যাবে।

তাই দেশের ভোগ্য পণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কেনা দামের চেয়ে প্রতি মণে সাড়ে ৩০০ টাকা লোকসান দিয়ে ছোলা বিক্রি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

এর পরও বাজারে পর্যাপ্ত ক্রেতা মিলছে না। খাতুনগঞ্জের পাইকারিতে এখন প্রতি মণ ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১৮ শ থেকে ১৯ শ টাকা। আর এগুলো কিনে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে গুদামে পৌঁছাতে খরচ পড়েছে দুই হাজার ১৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মণে লোকসান গুনতে হচ্ছে সাড়ে ৩০০ টাকা।

এখন ছোলার বিক্রির অফ সিজন। ছোলা পোকা ধরার পাশাপাশি চাহিদার চেয়ে বেশি মজুদ থাকা, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ এবং ক্রমাগত লোকসান ঠেকাতে প্রতিযোগিতা দিয়ে ছোলা বিক্রি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ ছোলা ব্যবসায়ী ও খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সোলায়মান আলম বাদশা বলেন, ‘রমজানে এই অস্ট্রেলিয়ান ছোলা আমরা প্রতি মণ বিক্রি করেছিলাম সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪০০ টাকা; এখন বিক্রি করছি এক হাজার ৮০০ থেকে এক হাজার ৯০০ টাকা। অথচ এই ছোলা অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করে খাতুনগঞ্জে পৌঁছতে খরচ পড়েছে দুই হাজার ১৫০ টাকা।’

তিনি বলেন, এখন ছোলা বিক্রির মৌসুম নয়, চাহিদাও বেশি নেই। আগামী রমজান আসতে আসতে এই ছোলায় পোকা ধরে যাবে। ইদানীং পোকা আসতে শুরু করেছে। তাই যত দ্রুত বিক্রি করা যায় ততই বাঁচি।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের আমদানির তথ্য মতে, বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১২ মাসে আমদানি হয়েছিল এক লাখ ৬৯ হাজার টন ছোলা। এবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসেই আমদানি হয়েছিল এক লাখ ২২ হাজার টন। এটি শুধু চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছোলা আমদানির তথ্য; এর বাইরে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকেও প্রচুর ছোলা আমদানি হয়েছে।

ট্যারিফ কমিশন ও সরকারি হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ছোলার চাহিদা ১২ হাজার টন কিন্তু রমজান উপলক্ষে ছোলার চাহিদা বেড়ে এক মাসেই ৮০ হাজার টনে উন্নীত হয়। এই কারণে তখন বাজারে দাম বাড়ার প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। কিন্তু গত রমজান ছিল ব্যতিক্রম। রমজান শুরুর আগে থেকে বাজারে অস্থিরতা দেখা যায়নি। মূলত বাজারে ছোলার দাম কম শুরু হয় তখন থেকেই। ফলে ব্যবসায়ীরা গত রমজানে ভালো ব্যবসা করতে না পেরে অনেকেই পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ডাল মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম মহিউদ্দিন বলেন, ছোলা দাম ক্রমাগতভাবেই কমছে পাইকারি বাজারে। দাম বাড়লে চারদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। এখন কেনা দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে লোকসান গুনতে গিয়ে বিপুল ব্যবসায়ী যে পথে বসেছে তার খবর কেউ নিচ্ছে না। এখন ব্যাংকের দেনা শোধ করতে গিয়ে লোকসান দিয়ে বিক্রি করছেন আড়তদাররা।

তবে গত রমজানে চট্টগ্রামে ছোলার ব্যবসা ভালো না হলেও ঢাকার বাজারে কিন্তু চাঙ্গা ছিল ঠিকই। এর কারণ হিসেবে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলছেন, চাহিদার তুলনায় ছোলার আমদানি বেশি হয়েছে এটা ঠিক কিন্তু চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে ওজন স্কেলের নিয়ন্ত্রণের কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে। আগে ২০ টন পণ্যভর্তি গাড়ির ভাড়া ছিল ৩০ হাজার টাকা এখন ১৩ টন ওজনের গাড়ি ভাড়া একই ফলে পণ্য পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এতে চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসা ঢাকায় চলে গেছে। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে আন্দোলনও করেছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা কিন্তু সুফল মেলেনি।

আড়তদারদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে ওজন স্কেলের নিয়ন্ত্রণ কড়াকড়ি করায় ঢাকার বড় ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ না ভিড়িয়ে বহির্নোঙরে আসা বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে ছোলা স্থানান্তর করেই নৌপথে ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ নিয়ে যান। সেখান থেকেই তাঁরা সরবরাহ দিয়েছেন, এতে তাঁরা বাড়তি পরিবহন খরচের বোঝা থেকে বেঁচে যান। পক্ষান্তরে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বাড়তি পরিবহন খরচের কারণে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছেন।

পাইকারি বাজারে ক্রমাগতভাবে ছোলার দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব তেমন নেই। পাইকারিতে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩৮ কেজি) ছোলার দাম ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি ছোলার দাম পড়ে ৪৮ টাকা থেকে প্রায় ৫১ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে সেই ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। অথাঁৎ কেজিতে ২০ টাকা বাড়তি।

কেন এমন হচ্ছে জানতে চাইলে কাজীর দেউড়ী খুচরা বাজারের খুচরা দোকানি আল মদিনা স্টোরের মালিক নাসির উদ্দিন  বলেন, ছোলা নিয়ে তো কোনো মাতামাতি নেই, চাহিদাও নেই। রমজানে বস্তা বস্তা কিনলেও পাইকারি বাজার থেকে এখন ছোলা কিনি মাত্র পাঁচ কেজি করে। কারণ কিনে এনে বসিয়ে রাখলে তো পোকা ধরবে।

বেশি দাম রাখার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, এখন এক কেজি ছোলা কেনে এমন ক্রেতা খুবই কম। আধা কেজি ঘরে খাওয়ার জন্য নিয়ে যায়। তাই ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি করি। বিভিন্ন উপলক্ষে ছোলা ক্রেতারা সরাসরি খাতুনগঞ্জ গিয়ে একসঙ্গে অনেক বস্তা কিনে আনে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here