ফরহাদ খাদেম, ইবি সংবাদদাতা ::  
অতিদ্রুত আইন প্রণয়ন করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনের দৃশ্যমান ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ, গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা  গ্রহণ, শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসিককরণ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত মেধা, অর্থনৈতিক অবস্থা ও দূরত্বের বিবেচনায় হলে সিট বণ্টন নিশ্চিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করাসহ ১১০ দফা দাবি জানিয়েছেন শাখা ছাত্রশিবির। 
শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ১১৬ নম্বর কক্ষে ‘জুলাই বিপ্লবোত্তর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সংস্কার প্রস্তাবনা’ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব দাবি জানানো হয়।
শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় সভাপতি এইচ এম আবু মুসা এসব দাবি তুলে ধরেন। এসময় সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ আলী, ইবি প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ, সাধারণ সম্পাদক আজাহারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন রেদওয়ান, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজমুল হক জাইম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন রিফাত ও প্রচার সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ রিয়াদ সহ অন্য সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
তাদের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট যেসকল ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো তাদেরকে চিহ্নিত করে অতিদ্রুত একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, ২০১২ সালে গুমের শিকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাসের সন্ধান পেতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ ও গুমের সাথে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা, গত ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব-নিকাব ইস্যুতে ছাত্রীদের সাথে আক্রমণাত্মক আচরণসহ ইসলামবিদ্বেষী কার্যক্রমের সাথে জড়িতদেকে বিচারের মুখোমুখি নিয়ে আসা, বিগত সময়ে হলগুলোতে মাদক, অস্ত্র ও সিট বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ ও তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, ইবির যে সকল স্থাপনা ও ফলক ফ্যাসিবাদের আইকনদের নামে নামকরণ করা হয়েছে তা অবিলম্বে পরিবর্তন করা, নন-ক্রেডিট বাংলাদেশ স্টাডিজ কোর্সকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করে কোর্স কন্টেন্ট হিসেবে জুলাই বিপ্লবের পটভূমি ও ইতিহাস পাঠযুক্ত করা এবং জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে একটি কর্ণার ও সংগ্রহশালা গড়ে তোলা।
হল পরিচালনা ও সিট বণ্টনসহ যাবতীয় কার্যক্রম রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে ‘প্রতি হলে আবাসন, নিশ্চিত করবে প্রশাসন’ এই স্লোগানকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন করে গণরুম-গেস্টরুম কালচার চিরতরে বিলুপ্ত করা, আবাসিক শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে রিডিং রুম, লাইব্রেরির পরিসর বৃদ্ধি, পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত, ইন্টারনেট সেবা ও খাবারের মান উন্নতকরণ এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সংবিধিতে অন্তর্ভুক্ত ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব অনুষদ অনতিবিলম্বে খোলা পাশাপাশি কৃষি অনুষদ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য অনুষদসমূহে যুগোপযোগী বিভাগ চালু করা, প্রত্যেক বিভাগে নন-ক্রেডিট ইসলামিক স্টাডিজ কোর্সকে ক্রেডিট কোর্সে রুপান্তর ও মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য মৌলিক ইসলাম শিক্ষা নিশ্চিত করা ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব-স্ব ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা ও সেরা শিক্ষকের জন্য বেস্ট টিচার অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ব্যবস্থা করা, সকল বিভাগে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শুরু করা এবং ক্লাস চলাকালীন দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত নামায ও মধ্যাহ্নভোজের বিরতি কার্যকর করা, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য কমন রুম ও নামাজের কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া, শেসনজট নিরসনে একাডেমিক কেলেন্ডার বাধ্যতামূলক করা ও পরীক্ষার অন্তত ৭ দিন পূর্বে টিউটোরিজল ও ক্লাসে উপস্থিতির নম্বর নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে দেওয়া।
নিরাপদ ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টাসহ নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক অবস্থান নিশ্চিত করা, র‍্যাগিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, ক্যাম্পাসের সকল রপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে লাইটিং ও সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা, বিশ্বিবদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সপ্তাহে সাতদিন সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা রাখার পাশাপাশি গ্রন্থাগারে প্রয়োজনীয় বই, সাময়িকী, জানাল, গবেষণাপত্র, দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও ডিজিটাল রিসোর্স নিশ্চিত করক ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে জব এইড কর্ণার চালু করা, চিকিৎসা কেন্দ্রের সামগ্রিক আধুনিকায়ন, দক্ষ জনবল নিয়োগ ও একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্রে উন্নীত করা, চিকিৎসা কেন্দ্রে ওয়ার্ড ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষার্থীর জন্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র প্রদান করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগসমূহে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ও তা প্রকাশ নিশ্চিত করা, প্রত্যেক বিভাগে মানসম্মত ইংরেজি শিক্ষা নিশ্চিত করা ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুষ্টিয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে ক্যাম্পাসকে অন্তর্ভুক্ত করে ঝিনাইদহের কোটচাদপুর পর্যন্ত রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা করা।
আইআইইআর-এ নীতি ও আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া, শিক্ষার্থীর দক্ষতা নিশ্চিত করতে নামমাত্র কোর্স ফিতে আইটি, ফরেইন ল্যাংগুয়েজ (ইংরেজী, আরবী, চাইনিজ,জাপানিজ, কোরিয়ান ও অন্যান্য) ও বেসিক রিসার্চ প্রভৃতি কোর্স চালু করা, মরণব্যাধী নিরাময় তহবিল ও ছাত্রকল্যাণ ফান্ড সমৃদ্ধ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে পদ্ধতি জটিলতা মুক্ত করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা সরাসরি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া চালু করতে হবে এবং ক্যাফেটেরিয়ার পুরাতন ও অস্বাস্থকর সরঞ্জামাদি পরির্তন করে স্বাস্থসম্মত খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে করা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য টিএসসিসিতে রুম বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করা, জমি অধিগ্রহণ করে মানসম্মত স্টেডিয়াম তৈরী করা ও ক্যাম্পাসে একটি সুইমিং পুল তৈরী করা পুকুর সংস্কার করে গোসল ও সাঁতারের উপযোগী করা।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ কার্যক্রম রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক প্রভাবমুক্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকসহ সকল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ইবি লেক ও বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন পুকুরপাড় সংস্কার করে সারা বছর পানির ব্যবস্থা, লাইটিং নিশ্চিত এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা, নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য মেইনগেটে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা করা, ইবি থানা ঝাউদিয়াতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিল করা ও ফ্যাসিজমের স্টেকহোল্ডার ব্যতিত ক্যাম্পাসের সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকসহ সকল সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এর আগে দুপুর ১২ টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বরাবর এসব দাবি স্মারকলিপি আকারে উপস্থাপন করেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এইচ এম আবু মুসা বলেন, আমরা আমাদের দাবিগুলো ভিসি স্যারের কাছে স্মরকলিপি আকারে দিয়েছি। আমরা আমাদের সবগুলো দাবি আদায়ে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই যৌক্তিক দাবিগুলো পুরন করার চেষ্টা করবো। অনেক কাজ অলরেডি শুরু করে দিয়েছি। সামনে আরও সংস্কার হবে। আমি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে চাই। ইকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে নেই, ইকসু চালুর জন্য নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রণয়ন করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here