ডেস্ক রিপোর্ট::  প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) আওতায় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় মুরগি ও ছাগলের ঘর নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকার চেকের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের টাকা বিতরণ করলেও সেই টাকা তাদের কাছ থেকে ফেরত নিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, অডিট এলে তাদেরকে ঘুষ দিতে হবে, তাই যে কোনোভাবে আমাকে এই টাকা বাঁচাতেই হবে। এমনকি সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নিয়েও এখনো ঘরের কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলডিডিপি এর আওতায় সদর উপজেলায় মোট ৭৩ জনকে মুরগির ও ৩০ জনকে ছাগলের ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাদের সবার নামেই বিশ হাজার টাকা করে আলাদা চেক ইস্যু হয়। এরপর সুবিধাভোগীরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে চুক্তিপত্র সই করে এ টাকাগুলো উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে তাদের সেই টাকা দিয়ে শর্ত মেনে ছাগল ও মুরগির ঘর নির্মাণের কথা থাকলেও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস তাদেরকে টাকাটা আবার অফিসে জমা দিতে বলে। তাই অনেক সুবিধাভোগী ২০ হাজার টাকা তুলে কর্মকর্তার হাতে আবার ফেরত দিয়ে আসেন। টাকা জমা নেওয়ার পরও এখনো অনেক সুবিধাভোগীকে ঘর নির্মাণ করে দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যেটুকু তৈরি করা হয়েছে তার মাঝেও অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

সিরাজগঞ্জ সদরের পুঠিয়াবাড়ি এলাকার ছাগল পালন সমিতি নামে একটি সংগঠনের ৩০ জন সদস্য এই ঘরের জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন। সমিতিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রথমে ২০ হাজার টাকার একটি চেক দেওয়া হয়েছিল। পরে আমরা ৫০০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তি করে এবং ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে এই টাকা উত্তোলন করি। এসব করতেই আমাদের প্রায় ১৫০০-২০০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। পরে আমাদেরকে অফিস থেকে সেই টাকা আবার তাদের হাতে জমা দিতে বলা হয়। তারাই নাকি ঘর করে দেবে। তাই পরে আমরা সেই ২০ হাজার টাকা তুলে তাদের কাছে জমা দিয়ে আসি।

ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, কিন্তু টাকা নিয়ে তারা যে ঘর করে দিচ্ছে সেই ঘরে বিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে আমাদের মনে হয় না। ঘর দেখে মনে হচ্ছে নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে ঘর করার কথা তারা সেভাবে ঘর নির্মাণ করছেন না। এছাড়া আমাদেরকে চেকের মাধ্যমে টাকা দিয়েও দেওয়া হলো আবার সেই টাকা নগদ জমাও নেওয়া হলো। কিন্তু কেন এগুলো করা হলো এটা জানি না। এরকম কোনো নিয়ম আছে কিনা সেটাও আমরা জানি না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ঘর নির্মাণে অনিয়ম করা হচ্ছে এই অভিযোগটি সত্য নয়। আসলে ঘর নির্মাণে সরকার যে রিকোয়ারমেন্ট দিয়েছে ২০ হাজার টাকায় সেটা মেনে ঘর করা কঠিন। মুরগির ঘর এই টাকার মধ্যে নির্মাণ করা গেলেও ছাগলের ঘর নির্মাণ করা খুবই কঠিন।

তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পে সর্বমোট ৭৩ জন মুরগির ঘর ও ৩০ জন ছাগলের ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন। এর মধ্যে ছাগলের ঘরের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ৩০ জনের মধ্যে ২৮ জন আমার কাছে টাকা জমা দিয়েছেন এবং মুরগির ঘর বরাদ্দ পাওয়া ৭৩ জনের মধ্যে মাত্র ১৩ জন আমার কাছে টাকা জমা দিয়েছেন। ঠিকাদারের মাধ্যমে তাদের ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। কিছু উপকরণ না পাওয়ায় কাজ এখনো সম্পন্ন করা যায়নি। তবে বাকিরা নিজের মতো করে ঘর নির্মাণের কাজ করছেন।

কেন টাকা ফেরত নিয়ে আপনারা ঘর নির্মাণ করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা তো এই টাকার মধ্যে ঘর নির্মাণ করতে পারবেন না, সেটা ভেবেই আমরা করে দিচ্ছি।

কথোপকথনের এক পর্যায়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলেও ১৮ হাজার ৫শ টাকার মধ্যে মুরগির ঘরটি নির্মাণ করা সম্ভব হবে। তবে এই টাকার মধ্যে ছাগলের ঘর নির্মাণ করা কঠিন। আবার অডিট এলে সব স্বচ্ছ থাকার পরেও তাদেরকে ৫ শতাংশ হারে ঘুষ দিতে হবে। তাহলে ২০ হাজার টাকায় ১ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হবে, এটা আমি কোথায় পাব? তাই মুরগির ঘর থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে অডিটের ঘুষের জন্য জমানো হচ্ছে। যে কোনোভাবে এই টাকা আমাকে বাঁচাতেই হবে। যারা ছাগলের ঘর পেয়েছে তাদের কাছ থেকেও অডিটের সময় ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হবে। সুবিধাভোগীরা না দিলে আমাকে পকেট থেকে দিতে হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জেলা ট্রেনিং অফিসার ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। এমন হওয়ার কথা না। আপনারা যেমন চান সবকিছু স্বচ্ছ হোক, আমিও তেমনটাই চাই। তারপরও কেন এটা করা হলো এবং তিনি কেন অডিটে ঘুষ দেওয়ার কথা বললেন বিষয়গুলো আমি যাচাই করে দেখব।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here