অজ্ঞান হলে হয়তো আর ফেরা হতো নাঢাকা ::  হজ থেকে ফিরে এলেও পদদলনের দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারছেন না অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া অনেক বাংলাদেশি হাজি। চোখের সামনে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুদৃশ্য এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের।

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা সাইদুল শামিম দেওয়ান রাবি্ব জানান, ‘অনেকের মতো আমারও সেদিন হিটস্ট্রোক হয়েছিল। ধাক্কাধাক্কিতে পড়েও গিয়েছিলাম, কিন্তু সেন্সলেস হইনি। সেন্সলেস হলেই হয়তো আর ফেরা হতো না।’

পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র সন্তান রামিশা বস্নাড ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর ‘সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেদের সমর্পণ’ করতে স্ত্রী ফারজানা সুলতানা সোহানাকে নিয়ে হজ করতে গিয়েছিলেন রাবি্ব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাবি্ব ও সোহানার সঙ্গে তাদের শান্তিনগরের বাসায় কথা হয়। দীর্ঘযাত্রায় ক্লান্ত স্ত্রীকে তাঁবুতে রেখে ২৪ সেপ্টেম্বর রাবি্বও কাফেলার সঙ্গে ‘শয়তানের স্তম্ভে’ পাথর ছুড়তে বের হন। তারা বলেন, ‘আমরা মুজদালিফা থেকে জামারার দিকে যাচ্ছিলাম।

এর আগের দুদিন-দুরাত ঘুম, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হয়নি। কেউই আসলে তখন চাপ নেয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। হঠাৎ দেখলাম সামনের দিকে আর এগোনো যাচ্ছে না। আমি রাস্তার ডান পাশে ছিলাম, কিন্তু ধাক্কাধাক্কির কারণে বাম পাশে চলে যাই। এরপর দেখি লক্ষ লক্ষ মানুষ ছন্নছাড়া হয়ে গেছে, কারোরই সেন্স কাজ করছে না।’

ভয়াবহ সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে রাবি্ব বলেন, ‘একটা পর্যায়ে যখন মানুষের চাপে মাটিতে পড়ে যাই, নিজেকে বাঁচাতে তখন অন্যদের উপরে ভর দিয়ে উপরে উঠতে হয় আমাকে। আমি যেখানে পড়ে গিয়েছিলাম তার চারপাশে অনেকেরই লাশ দেখেছি।’

৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কারণে ওইদিন অনেকের মতো তারও হিটস্ট্রোক হয়েছিল জানিয়ে রাবি্ব আরো বলেন, ‘ইরানিরা তাদের তাঁবুতে নিয়ে গিয়ে খাওয়ার জন্য ও গায়ে ছিটানোর জন্য প্রচুর পানি দেয়। তাঁবুর পাশে রাখা পানির লাইনের কারণে সৃষ্ট কাদায় গড়াগড়িও করি।’
বাংলাদেশি তাঁবুতে থাকা অবস্থায় দুর্ঘটনার খবর পান তার স্ত্রী সোহানা।

তিনি বলেন, ‘পাশের তাঁবুর এক আঙ্কেল দুর্ঘটনার কথা জানালে আমি তাকে ফোন করতে থাকি। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তাকে পাচ্ছিলাম না, ফোন সুইচ অফ দেখাচ্ছিল।’
‘আমি কান্নাকাটি করছিলাম, আর দোয়া করছিলাম যেন সে সুস্থভাবে ফিরে আসে।’

‘দুর্ঘটনার বেশ পরে যখন রাবি্ব ফোন করে জানায় সে ঠিক আছে তারপরও কিছুটা উৎকণ্ঠায় ছিলাম,’ যোগ করেন সোহানা।
ঘটনার পর থেকে রাবি্বদের হোটেলের সাতজন হাজি নিখোঁজ হন বলে রাবি্ব জানান।

মিনার পদদলনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৭ বাংলাদেশির মৃত্যুর সংবাদ জানা গেছে। তবে হতাহত সবার নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
এখনো ১০৯ জন হাজি নিখোঁজ রয়েছেন বলে বাংলাদেশ হজ মিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ওই ঘটনায় সৌদি কর্তৃপক্ষ ৭৬৯ জন নিহতের কথা জানালেও এই সংখ্যা কয়েক হাজার বলে দাবি করেছে ইরান।

কী কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছিল জানতে চাইলে রাবি্ব বলেন, ‘শুনেছি, সৌদি প্রিন্স তার বিশাল গাড়িবহর নিয়ে পাথর মারতে এলে দুটি ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। বাকি একটি ফটক দিয়ে মানুষ যাওয়া-আসা করায় প্রচ- চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এ দুর্ঘটনা ঘটে।’

সৌদি প্রিন্সের গাড়িবহরের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে কয়েকটি ইরানি গণমাধ্যমে খবর এলেও তা নাকচ করে দিয়ে উল্টো দুর্ঘটনার জন্য ইরানি হাজিদেরই দায়ী করেছে সৌদি সরকার।

এবছর প্রায় ২০ লাখ মুসলমান হজ করেছেন, যার মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। খবর-বিডিনিউজ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here