নিজস্ব প্রতিবেদক। ইউনাইটেড নিউজ ২৪.কম
ঘটনাস্থল থেকে: গাজীপুরের টঙ্গীতে ফয়েলস কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এ পর্যন্ত ২৫ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। বিস্ফোরণের পর পাশের ভবনেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
শনিবার ভোর ৫টা ৫৫মিনিটে বিস্ফোরণের এ ঘটনাটি ঘটে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আহতদের টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল, গাজীপুরস্থ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১১ জনের লাশ রয়েছে ঢাকা মেডিকেলে।
ফায়ার সার্ভিসের ডিডি আক্তারুজ্জামান জানান, টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে টাম্পাকো কুটিংস লিঃ ফয়েলস কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। আগুনের ভয়াবহতা দেখে পর পর সদর দফতরসহ জয়দেবপুর, কুর্মিটোলা, মিরপুর, উত্তরা, ঢাকা ক্যান্টনম্যান্টসহ প্রায় সব খবর ফায়ারকে জানানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে কারখানার চতুর্থতলা বিশিষ্ট ভবনটি উপরের ছাদ ধসে বিসিকের রাস্তার ওপর এবং সোনালী ব্যাংকের পেছনের অংশে ও কাসেম মাতবরের বাড়িতে এবং একটি গোডাউনের ওপর গিয়ে পড়ে।
ওই রাস্তায় চলাচলকারী রিকশারোহী মহিলা যাত্রীসহ তিনজন নিহত হন। এদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
নিহতের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন- আনোয়ার হোসেন (৪০), দেলোয়ার হোসেন (৪৫), কারখানার শিফট ইন চার্জ শুভাষ (৪০), প্রিন্টিং হেলপার রফিকুল ইসলাম (২৮), সিকিউরিটি গার্ড হান্নান (৪৫), অপারেটর মামুন (৪০), অপারেটর জয়নুল (৩৪), ক্লিনার শংকর (৩৮) ও ক্লিনার রেদোয়ান (৩৫)।
এদিকে উত্তরা ফায়ার বি.গ্রেডের আমিনুল ইসলাম ৭টা ২৯ মিনিটে দুর্ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি গুরুতর আহত হন।
এ ছাড়া আরও ১৯জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে বার্ন ইউনিটে ভর্তি রিপন দাশ (৩৫) ও দিলীপ চন্দ্র দাশ (৩৬)। রিপন দাশের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। দিলীপ চন্দ্র দাশের ৮ শতাংশ পুড়েছে।
বাকিরা জরুরি বিভাগের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত।
টঙ্গী ৫০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: মো. পারভেজ জানান, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে আগুনে দগ্ধ ও শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
নিহতদের ময়নাতদন্তের জন্য লাশ শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গুরুতর আহত ওই কারখানার শ্রমিক রুবেল জানান, তারা ভোরে কাজে যোগদানের পর পরই কারখানার বয়লার বিস্ফোরিত হয়। কারখানাটিতে প্লাস্টিক পেপারের প্রিন্টিং কাজ করা হয় এবং গতকাল ২৫টন কেমিক্যাল কারখানায় আনা হয়েছিল।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, ফায়ার সার্ভিসের জয়েন্ট সেক্রেটারি এডমিন আনিস মাহমুদ, মহাপরিচালক লে. কর্নেল মোশারফ, ফায়ার হেড কোয়াটারের স্টেশন অফিসার সারোয়ার এ খান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সুপার সোয়েব আহম্মেদ।
জানা গেছে, রাতে শিফটে দেড়শতাধিক লোক কাজ করছিল। সকালেও শিফটের কিছু লোকও কারখানায় প্রবেশ করেছিল।
বিস্ফোরণের পর ওই কারখানা দাহ্য পদার্থ থেকে আগুন ধরে যায়। দ্রুত আগুন পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ফলে চার তলা ওই ভবনের একাংশ ধসে পড়ে এবং সমস্ত কক্ষে আগুন লেগে সকল মালামাল পুড়ে যায় এবং আহত নিহতের ঘটনা ঘটে।
কারখানাটির মালিক বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন বলে জানা গেছে।