indexঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার হাটফাজিলপুর বাজার এলাকা,মদনপুর গ্রাম,কমিড়াদহ গ্রামসহ ১১নং আবাইপুর ইউনিয়নে সর্বনাশা মরণ নেশা ইয়াবা,গাজাঁ-ফেন্সিডিল,অনৈতিক নারী ব্যবসায় গোটা ইউনিয়ন ছয়লাব হয়ে গেছে। গুটি কয়েক সন্ত্রাসি,কালোবাজারি,চাদাঁবাজরা মাদক ব্যবসার মাধ্যমে রাতানাতি লক্ষ লক্ষ,কোটি কোটি টাকার মালিক বনেগিয়েছেন।

তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে হাটফাজিলপুরের বাজারের সকল ব্যবসায়ি-দোকানীরা। জীবনের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে সাহস পাইনা। হাটফাজিলপুর ক্যাম্প পুলিশের চোখের সামনেই চলছে মাদক বেচাঁকেনা ও সেবন। সাপ্তাহিক হপ্তার রফাদফায় দেখেও না দেখার ভান করেন । হপ্তা না পেলেই মাদকের আসত্মানায় হানা দেন।

তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় উপজেলা শৈলকুপা। ১৪টি ইউনিয়ন আর ১টি পৌরসভার মধ্যে বিসত্মীর্ণ এলাকা জুড়ে এখন চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা, অনৈতিক নারী ব্যবসা ও জুয়ার আসর। এর মধ্যে ১১ নং আবাইপুর ইউনিয়নের হাটফাজিলপুর বাজার ও শেখপাড়া বাজার এলাকায় মাদক ও জুয়ার জন্য অন্যতম। সেখানে ফেন্সিডিল, মদ-গাজার পাশাপাশি জুয়া ও তাস-ফ্লাসের কারবারও জমজমাট।

অন্যদিকে মাদক ও জুয়ার হাটে পরিণত হয়েছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া বাজার ও হাটফাজিলপুর বাজার এলাকা। শুধু হাটই নয় মাদকের নিরাপদ রুট এই শৈলকুপার শেখপাড়া বাজার ও হাটফাজিলপুর বাজার এলাকা । এখানে গাঁজার পাশাপাশি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা ও ফেন্সিডিল। যা উঠতি বয়সি তরুন-তরুনীদের হাতে খুব সহজেই পৌছে যাচ্ছে।

ইয়াবা নামের এই মরণ নেশার বড়িটির আকৃতি ছোট হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক সেবীদের হাতে এমনকি বাড়িতে বাড়িতে খুব সহজেই পৌছে দিতে সক্ষম হচ্ছে। ওই এলাকার অনেক পরিবারের মধ্যে মরণ নেশা ইয়াবা ঢুকে পড়েছে। পরিবারের উঠতি বয়সী স্বজন এমনকি ভাই-বোন মিলে একসাথে বসেও এই মরণ নেশা ইয়াবা সেবন করছে বলে জানা গেছে।

ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়ার মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হতো শেখপাড়া এলাকাটি। যেখানে এক সময় বস্তা বস্তা গাঁজা আমদানি হয়ে তা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তো। কিন্ত বর্তমানে মাদক সেবীরা গাঁজা ছেড়ে মরণ নেশা ইয়াবার দিকে ঝুকছে। যে কারনে অধিকাংশ গাঁজা ব্যবসায়ীরা গাঁজার ব্যবসা ছেড়ে ইয়াবা ব্যবসার দিকে ঝুকছে।

ইয়াবা আকৃতিতে ছোট হওয়ায় খুব সহজেই তারা লুকিয়ে রেখে অত্যান্ত গোপনে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। শেখপাড়া ও হাটফাজিলপুর বাজার এলাকায় মাদকের অবাধ বিচরনে শংকিত হয়ে পড়েছে উঠতি বয়সী তরুন-তরুনী ও ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শৈলকুপার সীমানত্মবর্তী এলাকার শানিত্মডাঙ্গা গ্রামের ইয়াবা সম্রাট ইসরাইল, শেখপাড়া এলাকার তালিকাভূক্ত গাঁজা ব্যবসায়ী বুদো মন্ডলের ছেলে শিপন, সাকিম মোল্লার ছেলে লিটন, বড়দা গ্রামের ইদ্রিস, মথুরাপুর গ্রামের সিদ্দিক, বসনত্মপুর গ্রামের আবু সাঈদ, রেজা, মাজু, রামচন্দুপুর গ্রামের রেজা, ত্রিবেনীর কামু ও খোকনের মাধ্যমে ইবিসহ শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে ইয়াবা ও গাজা।

এছাড়াও গাঁজা ও ফেন্সিডিলসহ নারীদের নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ১১নং আবাইপুর ইউনিয়নের হাটফাজিলপুর গ্রামের মধ্যপাড়ার ওলিয়ার,পাঁচপাখিয়া গ্রামের অহেদের ভাই-ভাবী, দূর্গা রানী সরদার ও ভুন্ডুলেসহ পাচঁপাখিয়া গ্রামের খবির হোসেন এবং হিতামপুর গ্রামের সাহেব আলীসহ নাম না জানা অনেকে।এলাকার তরুন এক সন্ত্রসী-নেতা,গরু চুরি সিন্ডিকেটের প্রধানহোতা এই এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। অন্যদিকে চড়িয়ারবিল ও মদনডাঙ্গা বাজারে পদমদী গ্রামের কাঞ্চন, মথুরাপুর গ্রামের দবির ও হানেফ জুয়ার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা গেছে,১১নং আবাইপুর ইউনিয়নের হাটফাজিলপুর বাজার এলাকাসহ কুমিড়াদহ গ্রাম ও মদনপুর গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় গাঁজা,ফেন্সিডিল ও সরদার পাড়ার মহিলাদের দিয়ে চলছে অনৈতিক ব্যবসা।হাটফাজিলপুর বাজারের দোতলা ঘরের ছাদের উপর ও মদনপুর শশানঘাটের উপর নদীর তীরে,কুমিড়াদহ গ্রামে সন্ধার পর বসে গাঁজা সেবনের আসর।মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ভ্রাম্মমান আদালত কয়েক জনকে ধওে শাস্তি,জেল-জরিমানাও করেছে।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, শৈলকুপায় যেখানেই মাদক ব্যবসা,অনৈতিক নারী ব্যবসা বা জুয়ার আসরের খবর পাওয়া যাবে সেখানেই অভিযান চালানো হবে। মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে এবং থাকবে।তিনি আরো বলেন,হাটফাজিলপুর বাজার এলাকার সন্ত্রাসি চাদাঁবাজ ও মাদক ব্যবসায়িদের চিহিুত করে দ্রম্নত তাদেও বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাদকের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণে করনীয় বিষয়ে বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেডের পরিচালক আলহাজ নূর আলম বিশ্বাসের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের বর্তমান যুবসমাজ আজ ড্রাগ এর কারণে ধংশের মুখে, তাদেরকে সামাজিক ভাবে ড্রাগ এটাক্ট না বলে সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে বন্ধু সুলভ আচরণ করে ফিরিয়ে আনতে হবে। ড্রাগ এর সহজ লব্যতা এবং ভয়াবহতা আজ জাতিকে ধংশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

নৈতিক ভাবেই আমাদের সকলের দায়িত্ব মাদককে না বলা এবং গণসচেতনতা তৈরী করতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামুলক করতে হবে।

তিনি আরো বলেন,আমাদের নিজ এলাকাতেও গুটি কয়েক লোক রাতারাতি কোটিপতি হবার লোভ-লালশায় মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়ে এলাকার যুবসমাজকে মারাক্তক ধবংশের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।ইতিমধ্যে আমরা পদক্ষেপও নিয়েছি,এলাকার যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রড়্গার জন্য যা যা করা দরকার সব পদক্ষেপই হাতে নিয়েছি। দ্রম্নত মাদক ব্যবসায়ি ও মাদক সেবনকারিদের এলাকার মানুষদের সাথে নিয়ে তাদের প্রতিহত করা হবে।

আবাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন মোল্লা ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হেলাল বিশ্বাস বলেন, আসলে মাদক নেশার সাথে যারা জড়িত তারা বেশীর ভাগই কম বয়সের, বুঝার বয়স বা বিবেক হয় নি। আমরা এর খারাপ প্রভাবটা সম্পর্কে ওদের শিক্ষা দেই। কিনু্তু সেটাই পর্যাপ্ত নয়।

এজন্য পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা খুবই জরম্নরী। কিশোরদের সাথে পরিবারের সদস্যদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত। তারা কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মিশে সে ব্যপারে খোঁজ খবর রাখতে হবে। বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরাই সঙ্গ দোষে মাদকাসক্ত হচ্ছে। আর কিছু মাদক ব্যবসায়ী টার্গেট করে কিশোর বয়সে মাদকাসক্ত করছে। আবার এই মাদকসক্তরাই নিজেদের নেশার টাকার জন্য ঝুঁকছে মাদক ব্যবসায় দিকে ।”

নেশার জন্য নির্ভয়ে-নির্দিধ্বায় এসব কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে খুন, চুরি, ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপকর্মে।আমরা এলাকার জনগণ ও পুলিশ প্রশাসনকে সাথে নিয়ে মাদকের বিরম্নদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো এবং বিক্রেতা ও সেবনকারীদের নির্মুল করে এলাকাকে মাদক মুক্ত ঘোষনা করবো।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, প্রতিনিয়তই বাড়ছে শিশু-কিশোর মাদকাসক্তদের সংখ্যা। চরম অশান্ত পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক শৈশব ও কৈশোর জিবন ধ্বংস করে ফেলেছে প্রায় ১৪ লাখ শিশু-কিশোর।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here