বিনোদন ডেস্ক। ইউনাইটেড নিউজ ২৪.কম
ঢাকা: ধর্ষণ নিয়ে তাঁর মন্তব্যে উত্তাল দেশ। যদিও সলমন খান আছেন নিজের মতোই। ঠাট্টার মোড়কে সিরিয়াস কথা বলেন। আবার সিরিয়াস কিছুকে থোড়াই কেয়ার! ‘সুলতান’ মুক্তির আগে মুম্বইয়ে তাঁর মুখোমুখি…
পরিচালক আলি আব্বাস জাফর দু’বছর আগে এই ছবির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন বলেছিলেন, ৫০ বছর বয়সে গিয়ে ছবিটা করবেন। এটা সত্যি?
একেবারেই। আলি যখন এসেছিল, তখন আমার একদম ডেট খালি ছিল না। তাই ওদের ৫০ বছরের কথাটা বলেছিলাম। ওরা আমাকে বলে, ৫০ বছর বয়সে বড় পোস্টারে আমার ল্যাঙট পরা ছবি বেজায় হাস্যকর লাগবে! আসলে আমাকে পটানোর জন্য ওই সব বলছিল। কিন্তু তখন সত্যিই পারতাম না ছবিটা করতে। যদিও গল্পটা ভাল লেগেছিল।
• ৫০ বছর বয়সে এসে শরীর নিয়ে পরীক্ষা করার ঝুঁকি নিলেন কেন?
আমি তো ৫০’এর কাছাকাছিই ছিলাম। চেহারাতেও একই রকম। তাই শারীিরক কোনও সমস্যা হয়নি। তবে এই ছবির জন্য যাচ্ছেতাই কাণ্ড করতে হয়েছে! এই লোকটা (পাশে বসা পরিচালকের দিকে ইঙ্গিত করে) আমাকে পাগল করে দিয়েছে। নিজে কোনওদিন জিমে যায় না। আর ভাবে, ১৫ দিন অন্তর চেহারা বদলে ফেলা যায়! ওকে কে বোঝাবে সেটা সম্ভব নয়! নিজে পারবে না। অন্যকে বলবে ১৫ দিনে চেহারা তৈরি করে দেখাও! চেহারা তৈরি করতে গেলে ট্রেনিং নিতে হয়। ডায়েটের ধরন বদলাতে হয়। কিছুদিন পর ফের সেগুলো বদলে ফেলতে হয়। প্রথমে ওজন বাড়াও, তারপর কমাও— এতে অনেক পরিশ্রম হয়। সবচেয়ে কঠিন ছিল টানা ৬-৮ ঘণ্টা ধরে কুস্তি করা। তা সত্ত্বেও বলব এটা কিন্তু স্রেফ কুস্তির ছবি নয়। একজন মানুষের লড়াইয়ের ছবি। তার জার্নির ছবি। হারানো জিনিস ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ের
গল্প ‘সুলতান’।
• ভারতে ক্রিকেট অনেক বেশি জনপ্রিয়। অন্যান্য খেলা একেবারেই… (প্রশ্ন শেষের আগেই জবাব হাজির)
আপনি নিজে কি সেই অন্য খেলাগুলো দেখেন? যেদিন থেকে দেখতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে খেলাগুলো ক্রিকেটের মতোই জনপ্রিয় হয়ে যাবে।
• অন্যান্য খেলা নিয়ে ছবি তৈরি হলে কি লোকের মানসিকতা বদলাবে?
কুস্তি কিন্তু একটা বিরাট ব্যাপার। শহর-গ্রাম সর্বত্র চলে এই খেলা। ছবিতে যাঁদের দেখা গিয়েছে তাঁরা প্রত্যেকেই কুস্তি চ্যাম্পিয়ন। পঞ্জাব, নয়তো হরিয়ানার। কুস্তির জন্য এক কোটি টাকা পুরস্কার মূল্য থাকে। সেটা কোথা থেকে আসে? নিশ্চয়ই খেলাটার জনপ্রিয়তা আছে। যদিও সেই টাকাটা জেতার জন্য প্রায় ১০০ জন খেলোয়াড় নিজেদের জান-প্রাণ লড়িয়ে দেয়। মাসল ছিঁড়ে যায়, হাড় ভেঙে যায়। তারপর কী হয়? কিচ্ছু না। কেউ ভাবেও না তাঁদের কথা। এটাই আসল সমস্যা।
• আপনি তো বেশ ভাল হরিয়ানভি উচ্চারণ রপ্ত করেছেন!
বেশিক্ষণ লাগেনি। শ্যুটিং জোনে যাওয়ার সময় আলি গাড়িতে জোরে জোরে হরিয়ানভিতে কিছু পড়ত। ‘সুলতান’এর ফার্স্ট টিজারে হরিয়ানা কেশরি বলে যে ভয়েস ওভারটা— ওটা আলির।
• সলমন খানের ছবি মানে ডিস্ট্রিবিউটর, এগজিবিটরদের তুমুল প্রত্যাশা। এগুলোতে চাপ অনুভব করেন?
কোই প্রেশার নেহি হ্যায়। প্রেশার নিতে নেই। দিতে হয় (হাসি)! প্রেশার, অ্যাটেনশন এগুলো অন্য লোকেদের দিকে ঠেলে দাও। কিন্তু কোনও ছবি যদি না চলে, তাহলে দায় এড়িয়ে যেও না। যদি ছবি চলে তাহলে ভাল করে কাজ করো। না চললে, আরও ভাল করে কাজ করো। যদি মনে হয় ভাল সময় যাচ্ছে, আর কিছু করতে হবে না, তাহলে ভুল করবে। নতুন একজন আসবে আর তোমাকে শেষ করে দিয়ে যাবে। কখনও ভাববে না, তুমি যে ছবিটা করছ সেটাই সেরা।
• বলিউডে সবকিছুই নির্ধারিত হয় বক্স অফিস সাফল্যের নিরিখে। এটা কি অস্বস্তি দেয়?
ছবির প্রাথমিক ব্যবসার অঙ্ক নিয়ে মূর্খেরা মাতামাতি করে। আরে বাবা, হল’এ লোক কম আসছে। তুমি টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিয়ে বলছ, ২০ কোটি টাকার ওপেনিং হয়েছে। ছবি শেষ দিনে কত টাকার ব্যবসা করল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। একটা ছবি দু’কোটি টাকার ব্যবসা করেছে ওপেনিংয়ে। কিন্তু অনেকদিন ধরে চলছে। তখন বুঝবেন, লোকে আসলে ছবি দেখছে। টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিয়ে লাভ দেখানো হচ্ছে। এদিকে লোকের হল’এ এসে সিনেমা দেখার সংখ্যা কমছে। এটা কিন্তু খুব দ্রুত ইন্ডাস্ট্রিকে শেষের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মরাঠি, পঞ্জাবি, ভোজপুরির মতো আঞ্চলিক ছবিগুলো ভাল ফল করছে। ওরা ৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করছে। অথচ টিকিটের দাম ৭০-৮০ টাকা। বলিউডে টিকিটের দাম ৩০০ টাকা হবেই। কখনও তো ৯৫০ টাকাও! আঞ্চলিক ইন্ডাস্ট্রি ক্রমশ বলিউডকে পিছনে ফেলে দেবে।
• শাহরুখ খান তাঁর ‘রইস’ পিছিয়ে দিলেন। ‘সুলতান’এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে চান না বলেই কি এটা করলেন?
আমার মনে হয়, ওদের ছবিটা তৈরি ছিল না। তাই পিছিয়ে দিয়েছে। দু’টো বড় ছবির জন্য ২৫ হাজার স্ক্রিন দরকার পড়ে। আমাদের বড়জোড় ৫০০০ আছে। এর মধ্যে আঞ্চলিক ছবিও আছে। দু’টো বড় ছবি মুক্তি পেলে মুশকিল! বড় ছবি একসঙ্গে রিলিজ করা বোকামি। এটা আমার আর শাহরুখের বিষয় নয়। ব্যবসায়িক মডেল অনুযায়ী দু’টো বড়় ছবি একসঙ্গে রিলিজ করলে ব্যবসা মার খাবে। শুধু আমাদেরই বা কেন, বেশি স্ক্রিন এখন নতুনদেরও প্রয়োজন।
• আপনি ‘সুলতান’এ অনেক ক’টা গান গেয়েছেন। কিন্তু একটাও ছবিতে নেই!
এটাও আলির জন্য। আমার গলাটাই ওর পছন্দ নয়। ওদের বক্তব্য, ‘তুমি গান গেয়েছ বটে, কিন্তু সেটা মোটেও ভাল হয়নি! তাই রাখিনি।’ আমি ভেবেছিলাম, সলমন খান গান গাইলে ছবিটা অতিরিক্ত মাইলেজ পাবে। ‘যশ রাজ ফিল্মস’ আরও লাভ করতে পারবে। যাক গে, ওদের দুর্ভাগ্য! আপনি শুনেছেন আমার ‘জগ ঘুমেয়া’? ভাল লেগেছে কিনা বলুন?
• আপনি কি অরিজিৎ সিংহকে ক্ষমা করে দিয়েছেন? উনি তো অনেকবার ক্ষমা চেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ফেসবুকেও লিখেছিলেন।
অরিজিৎ সিংহ? সেটা কে? প্রত্যেক ছবিতেই অনেকে গান করে। কত নতুন লোক আসে। প্রযোজক, পরিচালকেরা ঠিক করেন সে সেরা হবে কি না। দেখছেন না, আমার গান পর্যন্ত বাতিল করে দিয়েছে! তাতে মন খারাপ করার কিছু নেই। কেউ বলতেই পারে, গানটা আমি অমুককে দিয়ে গাওয়াব না। যারা স্মার্ট তারা পাল্টা কিছু বলে না। কমেন্টস, পোস্ট— এগুলো থেকে বোঝা যায় কে কী বলতে চাইছে বা কতটা স্মার্ট!
• আপনি নাকি ‘দঙ্গল’এর জন্য আমির খানকে ট্রেনিং দিতে নিজের ট্রেনারকে পাঠিয়েছিলেন?
হ্যাঁ। আমার মনটা তো বড় (হাসি)! যদিও রাকেশ, মানে আমার ট্রেনার আমিরের সঙ্গে আগেও কাজ করেছে। তাই আমির ওকেই চেয়েছিল। আমিও না করিনি। আমি একাই ওয়ার্কআউট করি। রাকেশ সঙ্গে থাকে। আমার বডিগার্ডেরা থাকে। ওরাও আমার সঙ্গে ওয়ার্কআউট করে। তাই কোনও সমস্যা হয়নি। আমির মুশকিলে পড়ে গিয়েছিল। একজন কাউকে দরকার ছিল যে ওকে মোটিভেট করতে পারবে। ঠিক মতো দেখভাল করতে পারবে। যেটা রাকেশ খুব ভাল পারে।
• সিলভেস্টার স্ট্যালোন ৭০ বছর বয়সেও চেহারা তৈরি করছেন। আপনারও কি সে রকমই ইচ্ছে?
আমি তো ১৭০ বছর পর্যন্ত করতে চাই (হাসি)!
• ‘সুলতান’এ আপনার ছবি প্রকাশ হওয়ার পর বলা হয়েছিল, ফোটোশপ করা। অথচ ‘দঙ্গল’এর সময় আমিরের বিরুদ্ধে সে রকম কিছু শোনা যায়নি। এটা কেন?
ফোটোশপ করা হয়েছিল তো! কোনও কারণে আমার মাথাটা বড় লাগছিল ছবিতে। ফোটোশপ কথাটা হয়তো ভুল। কিন্তু ছবিটায় মাথার অংশটা টাচআপ করা হয়েছিল। ছবির শ্যুটিং চলাকালীন আমার যেমন চেহারা ছিল, তার সঙ্গে ছবির চেহারার পার্থক্য আছে। দাঁড়ান আপনাকে জিমের ছবি দেখাই। (ফোন খুলে জিমে নিজের কসরতের চেহারা দেখালেন। একেবারে টোন্ড চেহারা। যেগুলো কোনওভাবেই ফোটোশপ করা হতে পারে না) ছবিতে যে অংশগুলোয় আমাকে মোটা দেখাচ্ছে, সেগুলোই বরং বানানো। জিমের ছবিগুলো ফোটোশপ করা নয়। একেবারেই সাধারণ।
• গত বছর আপনি বলেছিলেন, হলিউড ক্রমশ বলিউডকে গ্রাস করে নেবে। দেখা যাচ্ছে, সেটাই হচ্ছে। কী বলবেন?
আমার মনে হয় ‘নিশ’ তকমাধারী ছবিগুলো এবার বানানো বন্ধ করা উচিত। কারও ডেট পেয়ে যাচ্ছি বলেই একটা ছবি তৈরি করে ফেললাম, সেটাও বন্ধ করতে হবে। সেই ছবিটাই বরং করা হোক, যেটা সত্যিই বড় মাপের। আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে তার থাকা উচিত। ভাল লেখকের অভাব রয়েছে। ছবি তৈরির প্যাশনটাও যেন কোথাও কম দেখি। টেকনোলজি নেই ভাল। সময়ের বিপরীতে চলছি আমরা। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের ধৈর্য নেই। আমরা ঠকু-মাস্টার! সবটাই দায়সারা। হলিউডের সঙ্গে পাল্লা দেওয়াটা দিনে দিনে কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
• আপনার পরবর্তী ছবি তো ফের কবীর খানের সঙ্গে?
হ্যাঁ। ছবির নাম ‘টিউবলাইট’। সোহেল আর আমি দু’জনেই কাজ করছি এখানে। ১৯৬০ সালের পটভূমিতে তৈরি ছবি।
• এখানেও কি ‘বজরঙ্গি ভাইজান’এর মতো কোনও বাচ্চা থাকছে?
হ্যাঁ। তবে আমার বাচ্চা নয়! আর এটা একেবারেই ‘বজরঙ্গি ভাইজান’এর মতো নয়। জুলাই মাস থেকে শ্যুট শুরু হবে। আগামী বছর ঈদে মুক্তি।
• ‘আন্দাজ আপনা আপনা’র রাইট্স কিনেছে অনুরাগ কাশ্যপের প্রযোজনা সংস্থা। ওরা সিক্যুয়েল তৈরি করতে চায়। কী বলবেন?
ওদের জন্য ভাল খবর।
• আপনার আর আমিরের চরিত্রের জন্য কাদের নেওয়া উচিত?
সেটা ওরা বুঝবে। আমি কোনও বুদ্ধি দিতে যাব না।
• ‘জুড়ওয়া’র রিমেক হচ্ছে। আর কোনও ছবি রিমেক হলে আপনার ভাল লাগবে?
আমি আর রেবতী ‘লাভ’ বলে একটা ছবি করেছিলাম। ওটা করলে ভাল হয়। বরুণকে (ধবন) ভাল মানাবে।
• আপনি অনেকদিন কোনও মজার ছবি করেননি। ‘পার্টনার’ বা ‘হ্যালো ব্রাদার’এর মতো।
চেষ্টা করছি। সে রকম কিছু পাচ্ছি না। যে চিত্রনাট্য শুনে আমার হাসি পাবে, সে রকম কিছু না হলে করব না।
• আপনার সম্পর্কে চারদিকে নানা রকম লেখা হয়। একাধিক বিতর্কে জড়ান। এগুলোকে কতটা গুরুত্ব দেন?
আমাকে নিয়ে কে কী বলছে তাতে একেবারেই গুরুত্ব দিই না। খালি মনে হয়, হাউ ক্যান দিস ইডিয়ট্স থিংক লাইক দ্যাট অ্যাট অল? নিজেরা ভুল জেনেও সকলকে বোকা বানাতে চায়। স্রেফ তাদের লেখাগুলো টিআরপি পাবে বলে। কিছু লোক দিনের পর দিন এই মিথ্যেটা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কোনও ‘জমীর’ নেই। সকলেই একে অপরকে টেনে নামাতে চাইছে। মনুষ্যত্ব, আদর্শ কিচ্ছু নেই।
• শাহরুখ খান বলেছেন, উনি এবার থেকে বছরে তিনটে ছবি অন্তত করতে চান। আপনি কী ভাবছেন?
আমিও এখনই করতে চাই! মাঝে মধ্যে ভাবি আগে একটা ছবির জন্য ৩০ হাজার টাকা পেতাম। তারপর দু’লক্ষ। সেটা বেড়ে হল ২০ লক্ষ। তার জন্য দিনে তিনটে করে শিফ্ট পর্যন্ত করতাম। আর এখন কোটি টাকা পাই। অথচ মোটে একটাই ছবি করি। কোনও মানে হয় এই বোকামির! পাঁচ-ছ’মাসের মধ্যে একটা করে ছবি মুক্তি পাওয়া উচিত। বছরে দু’টো করে তো বটেই। আসলে এখন পাবলিসিটির পিছনে অনেকটা সময় চলে যায়। আগে এটা হতো না। এত পাবলিসিটির কী আছে জানি না! যাদের ছবি দেখার তারা দেখবেই। আপনারা ছবি নিয়ে কত লেখেন! দেখা যাচ্ছে, এই পাবলিসিটিতে আপনাদেরই সুবিধে হচ্ছে। আমাদের নয়।
• আপনি এত ছবি করেছেন কিন্তু কোনওদিন খল চরিত্রে দেখা যায়নি আপনাকে। কেন বলুন তো?
ওই ব্যাপারটা আমার পছন্দ নয়। আমি ভিলেন হতে চাই না। আমি বিনোদন দিতে চাই। এমন একটা চরিত্র যাকে মানুষ ভালবাসবেন। যদি বাস্তব জীবনে সেটা দিতে না পারি, তাহলে অন্তত পরদায় যেন সেটা দিই। এমন একটা গল্প বলতে চাই, যাতে দর্শক মানসিকভাবে জোর পান। তাঁরা যেন লড়াই করতে পারেন। শুধু এটুকুই চাই আমি।