নিজস্ব প্রতিবেদক। ইউনাইটেড নিউজ

70507_000000_133603_133620ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। আর সহ্য করা যায় না। দেশেটা রক্ষা করতে হবে।

রাজধানীর একটি হোটেলে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।

খালেদা জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, টাইগারগুলো কোথায় গেল, আজকে সবাইকে টাইগারের ভূমিকায় আসতে হবে। লায়নের ভূমিকায় আসতে হবে। তাহলেই দেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার সারাদেশের মানুষকে আজ বিড়াল বানিয়ে রাখতে চায়। আর তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য বাঘ, সিংহ সবকিছুই হতে চায়।

দেশ রক্ষায় দেশের মানুষকে টাইগারের ভূমিকায় আসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে সব সময় আছি, থাকব। রাস্তায় যেতে বললে এখনো রাস্তায় নামার মতো সাহস ও ক্ষমতা রাখি।’

উপস্থিত সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কথা জানেন না। কেউ এ ঘটনা নিয়ে কথা বলে না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। এর কি কোনো তদন্ত হয়েছে? কোনো তদন্ত হয়নি। কোনো বিচার হয়নি। যদি সাহস থাকে এগুলো বলবেন।’

বিডিআরের ৫৭ জন অফিসারকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের অবসরে পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘আজকে বিডিআর নেই। নামও বদলে দেওয়া হয়েছে। আমি বিডিআরই বলে যাব। এরা এক সময় বাঘ ছিল এখন বিড়াল। তাদের হাতে বন্দুক আছে কিন্তু গুলি মারে না। দেশের মানুষকে বললে গুলিটা পট করে চালিয়ে দেবে। মিয়ানমারের মতো দেশ আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে হেলিকাপ্টার নিয়ে ঘোরে কেন? একটা গুলি মারতে পারে না? বিডিআর আজকে বাঘ থেকে আজ বিড়াল হয়েছে।’

ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘যমুনা সেতুতে পার হতে হলে ৭০০-৮০০ টাকা দিতে হয়, বাস, ট্রাকের জন্য আলাদা ফি নির্ধারণ করা আছে। অথচ নামে মাত্র মূল্যে যে ট্রানজিট দেওয়া হলো এটা লজ্জার, এটাকে দয়াও বলা যেতে পারে। আজকে বাংলাদেশে নিজস্বতা, মান-সম্মান. নিজস্ব কোনো সক্রিয়তা, স্বাধীনতা নেই।’

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপানারা যুদ্ধ করেছিলেন দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সুশাসন, সকলের সমান অধিকারের জন্য। আজকে দেশে কোনোটাই নেই। দেশে চলছে এক ব্যক্তির শাসন।’

তিনি বলেন, ‘স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা বলা হয়েছে, কয়েকজন ব্যক্তির নাম বলা হয়েছে। এছাড়াও আরও অনেক ব্যক্তি আছেন। কিন্তু এটাও জানতে হবে  তারা কি কাজগুলো নিজ উদ্যোগে করেছেন? নাকি কারো নির্দেশে করেছে? তারা কারো নির্দেশেই করেছে। কাজেই সে তো (নির্দেশদাতা) বাদ যেতে পারে না। এগুলো ভুলে যেতে হবে, আমরা ভুলে যেতে চেয়েছিলাম।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘মুসলাম, হিন্দু সবাই এই আওয়ামী লীগের নির্যাতনের শিকার। সকলেই আজকে আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তি চায়।’

তিনি বলেন, ‘আমি কথা বলতে চাই, ভয় পাই না, সাংবিধানের কথা বলব। তার আগে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি অন্য কারো হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নয়।’

‘দেশ পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে নিজের আত্মীয় স্বজন মরছে। পুলিশ- র‌্যাব দিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। গণ-অভিযানের নামে ১৬ হাজার লোক কারাগারে ঢুকিয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার বিএনপির নেতাকর্মী আছেন।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ বিভিন্ন উপদেশ দেন, কিন্তু সব কথা রাখতে পারি না। আমি বলব সবাইকে নিয়ে আসেন আমি কথা বলব, সবার কথা শুনব। যেখানেই বসতে চান আমি বসব, কথা বলতে রাজি আছি। কারণ আমাদের সমানে কাজ হচ্ছে দেশটাকে রক্ষা করা।’

‘আমাদের ওপর যদি না নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাহলে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার মতো দেশে হয়ে যেতে পারে, বা এর চেয়ে উন্নত হতে পারে, সেই মেধা ও জনশক্তি আমাদের আছে’, বলেন তিনি।

বুড়িগঙ্গা শেষ হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পানি নেই। আমার কারো দয়া চাচ্ছি না। ন্যায্য অধিকারটা চাচ্ছি। আমাদের যতটুকু প্রাপ্ত সেটা চাচ্ছি। গতকাল (বুধবার) ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অত্যন্ত ভালো বির্তক হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, অন্যরা আমাদের নিয়ে কথা বলেছে আমরা কথা বলতে পারি না। কথা বললেই মামলা হবে। কথা বললেই ধরে নিয়ে যাবে, গুম হয়ে যাবে। কাজেই গুম খুনের ভয় করে লাভ নেই।’

এ সময় মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার ১৫টি মামলা উঠে গেল, শেখ হাসিনার মামলা উঠে গেলে আমার মামলাও উঠতে হবে। আমি কোনো অন্যায়, অবিচার করিনি। তাই আমি বলছি দেশে কোনো ন্যায়বিচার নেই।’

এর আগে ২০ দলীয় জোট শরিক এলডিপি প্রধান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘যারা দেশের মানুষকে বিপদে ফেলেছে, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাদের বিচার করতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিচার দাবি করেন তিনি।’

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির প্রধানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এখন দেশে চলছে এক ব্যক্তির কথায়। আপনাকে এটা পরিষ্কার করতে হবে। সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপ্রতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। আগে আপনার দলের মধ্যে গণতন্ত্র আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের অন্তত ৮ কোটি মানুষ আপনার মাধ্যমে পরিবর্তন চায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য সংখ্যা ২০ করে এর মধ্যে ১৫ জন নির্বাচিত এবং ৫ জন আপনি নিজে নিয়োগ দেবেন এটা আমার প্রস্তাব। এভাবে সারাদেশের জেলা কমিটিগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে করলে ভালো হবে।’

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজীজ উলফাতের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে যোগ দেন―বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, কর্নেল (অব.) মোদাচ্ছের, কর্নেল (অব.) জয়নাল, মেজর (অব.) আইন উদ্দিন প্রমুখ। এ ছাড়া অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ ইফতার মাহফিলে যোগ দেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here