স্পোর্টস নিউজ: ক্রিকেট প্রশাসক সৌরভের ক্ষেত্রেও কোচ নির্বাচন নিয়ে সঙ্গী হল বিতর্ক। বিরাট কোহলিদের নতুন কোচ বাছাই নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ধিকি ধিকি আগুন জ্বলতে শুরু করেছিল। এবার তা বিস্ফোরণের আকার নিয়ে নিল।
ভারত অধিনায়ক থাকাকালীন গ্রেগ চ্যাপেলকে কোচ বেছেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিতর্ক তৈরি হয় তাঁকে ও গুরু গ্রেগকে নিয়ে।
ক্রিকেট প্রশাসক সৌরভের ক্ষেত্রেও কোচ নির্বাচন নিয়ে সঙ্গী হল বিতর্ক। বিরাট কোহলিদের নতুন কোচ বাছাই নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ধিকি ধিকি আগুন জ্বলতে শুরু করেছিল। এবার তা বিস্ফোরণের আকার নিয়ে নিল।
এবং, গুরু গ্রেগের সেই পুরনো অধ্যায়ের মতো এবারও বিতর্কের কেন্দ্রে সেই সৌরভ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে যে, অন্যতম প্রধান প্রার্থী রবি শাস্ত্রীর ইন্টারভিউ যখন চলছিল, তখন তিনি উপস্থিত ছিলেন না। ‘এবেলা’য় সর্বপ্রথম এই খবর প্রকাশিত হয়। তারপর সর্বভারতীয় সংবাদপত্র এবং চ্যানেলে সেই খবর প্রচারিত হয়।
মঙ্গলবার ‘ইন্ডিয়া টুডে’ চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাস্ত্রী সরাসরি আরও বড় অভিযোগ করেন সৌরভের বিরুদ্ধে। বলেন, ‘‘সৌরভ সেই সময় উপস্থিত না থেকে একজন প্রার্থীকে তো অপমান করেইছে, যে দায়িত্বটা ওকে দেওয়া হয়েছিল, সেটাকেও অসম্মান করেছে।’’ শাস্ত্রীকে চ্যানেলটির সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হয়, সৌরভের প্রতি আপনার কোনও উপদেশ আছে? সদ্য প্রাক্তন হওয়া কোহলিদের ডিরেক্টর বলেন, ‘‘বলব, পরের বার যেন এত গুরুত্বপূর্ণ একটা পদের ইন্টারভিউ যখন চলবে, তখন মিটিংয়ে উপস্থিত থেকো।’’
ভারতীয় বোর্ড থেকে এখনও এই বিতর্ক নিয়ে কেউ মুখ খোলেননি। বোর্ড সচিব অজয় শিরকে-কে অনেকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া গেল না। সৌরভ মঙ্গলবার কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। দিন দুই আগে সিএবি’তে সাংবাদিকেরা তাঁকে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে সৌরভ বলেছিলেন, ‘‘কমিটির আরও দুই সদস্য আছে। তাদের জিজ্ঞেস করে দেখা হোক।’’
শাস্ত্রীকে রাতের দিকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি অবাক হয়েছিলাম, কী করে আমার ইন্টারভিউ চলাকালীন একজন অনুপস্থিত থাকে।’’ তিন সদস্যের অ্যাডভাইসরি কমিটিতে সৌরভ ছাড়াও রয়েছেন আরও দুই প্রাক্তন তারকা সচিন তেন্ডুলকর এবং ভিভিএস লক্ষ্মণ। ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে এই তথ্য যে, শাস্ত্রীর ইন্টারভিউয়ের সময় সৌরভ ছিলেন না। ওয়াকিবহালমহলের কথায়, তিনি সেই সময় সিএবি’তে ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক করতে গিয়েছিলেন।
যদিও সৌরভ বা বোর্ডের কেউ এখনও সরাসরি সে কথা স্বীকার করেননি। ভারতীয় ক্রিকেটমহলে সৌরভের এই অনুপস্থিতি নিয়ে তোলপাড় চলছে। দু’জনের পুরনো সম্পর্কের ইতিহাস আগুনে আরও ঘি ঢালছে। শাস্ত্রী এবং সৌরভ— কখনওই দারুণ বন্ধু ছিলেন বলে কেউ দাবি করবে না।
কোচ নির্বাচন নিয়ে জনপ্রিয় ব্যাখ্যা হচ্ছে, সৌরভ শুরু থেকেই অনিল কুম্বলের দিকে ঝুঁকে ছিলেন। এটা এখন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ওপেন সিক্রেট’ যে, কুম্বলের কোচ হওয়ার পিছনে সৌরভের সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
অস্বস্তিকর আরও নানা প্রশ্ন কোচ নির্বাচনকে ঘিরে উঠতে শুরু করে দিয়েছে। যেমন সৌরভ এখন সিএবি প্রেসিডেন্ট। তার মানে তিনি ক্রিকেট প্রশাসক হিসাবেও প্রভাবশালী জায়গায়। সেক্ষেত্রে তাঁকে অ্যাডভাইসরি কমিটিতে রাখা কি উচিত হয়েছে? যদিও ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটি যখন গঠিত হয়, তখনও যদিও সৌরভ সিএবি সচিব হয়ে গিয়েছিলেন। তবে একইসঙ্গে এটাও বলা হয়েছিল যে, এই উপদেষ্টা কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করবে।
আরও প্রশ্ন উঠছে, ভিভিএস লক্ষ্মণ আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মেন্টর। হায়দরাবাদের কোচ টম মুডি ভারতীয় দলের কোচের পদে বাছাই করা সাত-আটজনের মধ্যে ছিলেন। মুডি ইন্টারভিউও দেন। উপদেষ্টা কমিটিতে লক্ষ্মণের উপস্থিতি নিয়েও তাই স্বার্থসংঘাতের প্রশ্ন উঠে পড়েছে।
কোচ নির্বাচনকে ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠে পড়লেও বোর্ড থেকে এখনও এ নিয়ে উত্তর দেওয়ার কেউ নেই। যদিও বোর্ড কর্তাদের চোখ বেশি করে এখন সুপ্রিম কোর্টের দিকে। লোঢা কমিটির সুপারিশ নিয়ে আজ, বুধবার ফের শুনানি। চূড়ান্ত রায় বেরিয়ে যেতে পারে বৃহস্পতিবারেই। লোঢা কমিটি নিয়ে এমনিতেই আদালতের বাউন্সারে জেরবার বোর্ড। তার ওপর চূড়ান্ত রায়ের দিন ঘনিয়ে এল মানে আরওই উদ্বেগ।
তারই মধ্যে কোচ নিয়ে বাড়তে থাকা কাজিয়া অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের বক্তব্য কি শোনা হয়েছে কোচ নির্বাচনের ক্ষেত্রে। ভারতীয় ক্রিকেটে দু’ধরনের মতালম্বী সব সময় দেখা গিয়েছে। এক দল মনে করেন, ছাত্রদের কথা শুনে শিক্ষক ঠিক করা হয় না। যিনি সবচেয়ে বেশি করে এই মতে বিশ্বাস করতেন, সেই প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়া কোচ নির্বাচনের ব্যাপারে তখনকার অধিনায়কের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তখনকার অধিনায়ক বলতে সৌরভ এবং তিনি যাঁকে এনেছিলেন, তাঁর নাম গ্রেগ চ্যাপেল। আর এক দল মনে করেন, ক্রিকেটারদের মতামত প্রাধান্য পাওয়া উচিত কারণ নতুন কোচের সঙ্গে সংসার করবেন তাঁরাই।
বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলি সেই সুযোগ পেলেন কি না, তা পরিষ্কার নয়। যতদূর আন্দাজ পাওয়া গিয়েছে, শাস্ত্রীকে পছন্দই করেন কোহলি এবং মনে করেন, অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ব্যাটসম্যান হিসাবে তাঁর যে উত্তরণ, তার পিছনে প্রাক্তন ডিরেক্টরের অবদান রয়েছে। শুধু কোহলি নন, রোহিত শর্মা থেকে শুরু করে শিখর ধাওয়ান অনেকেই শাস্ত্রীর টেকনিক্যাল প্রজ্ঞা নিয়ে সশ্রদ্ধ। কোচ নিয়ে কাজিয়া চলার মধ্যেই আজ, বুধবার, বেঙ্গালুরুতে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হচ্ছেন অনিল কুম্বলে। কোচ হওয়ার পর প্রথম প্রেস কনফারেন্স। ধরেই রাখা যায় কোচ হিসাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই তাঁকে বাউন্সারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।