Lionel-Messi-quitsডেস্ক : চিলির বিপক্ষে আবারও কোপা ফাইনালে হেরে ভেঙে পড়েন আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি। আর এই হারের পরেই তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন। সোমবার নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে চিলির কাছে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হেরে যায় তার দল। দলের হয়ে পেনাল্টি শ্যূটআউটে গোল করতে ব্যর্থ হন মেসি। ফলে কোপার গত পাঁচ আসরের মধ্যে চারবার ফাইনালে উঠেও শিরোপা অধরাই রয়ে গেল মেসির।

ম্যাচ শেষে মেসি বলেন, ‘জাতীয় দলের হয়ে এখানেই আমার ক্যারিয়ারের শেষ। ওহ, আর্জেন্টিনা! আমি আমার নিজের জন্যই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা আমার সঙ্গে একমত নন, তাদের জন্যও এই সিদ্ধান্ত। আমি আসলে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে কোন কিছু অর্জন করতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের জার্সি গায়ে আমি চারটি ফাইনাল ম্যাচ খেলেছি। এখনই সঠিক সময় আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার। কেননা আবার ফাইনালের মতো ম্যাচে এসে এভাবে হেরে যাওয়া আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। যেখানে আমি পেনাল্টি মিস করেছি। যেটা দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’

পুরো আসরে দুর্দান্ত খেলেছেন মেসি। সেই সঙ্গে আর্জেন্টিনা দলের পারফরম্যান্সও ছিল নজরকাড়া। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে ইনজুরির কারণে চিলির বিপক্ষে মাঠে নামতে পারেননি মেসি। তবে তাতে তেমন একটা অসুবিধা হয়নি দলের। চিলির বিপক্ষে ওই ম্যাচে ২-১ গোলের জয় পায় আর্জেন্টিনা। এরপর গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে শেষ ৩০ মিনিট মাঠে উপস্থিত ছিলেন ফুটবলের এ জাদুকর। মাত্র ১৯ মিনিটেই পূর্ণ করেন হ্যাটিট্রিক। গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে দল জয় পেলেও মেসি ছিলেন গোলশূন্য।

সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মেসি আবার স্বরূপে ফিরেন। এক গোল করার পাশপাশি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন দুই গোল। ওই ম্যাচে তিনি নিজ দেশের গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার রেকর্ডের পাশে নিজের নাম লেখান। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৫৪ গোল করে এতদিন এ রেকর্ডটি ধরে রেখেছিলেন বাতিগোল (বাতিস্তুতার ভক্তদের দেয়া নাম)।

সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের। তাদেরকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে দল। ওই ম্যাচেও মেসি এক গোল করার পাশাপাশি দুই গোলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ফলে তিনি ছাড়িয়ে যান বাতিস্তুতাকেও। ৫৫ গোল নিয়ে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড অর্জন করেন। বাতিস্তুতা ৭৮ ম্যাচ খেলে করেন ৫৪ গোল। আর ৫৫ গোল করতে মেসি খেলেছেন ১১১টি ম্যাচ।

ব্যক্তিগত সাফল্য অনেক পেয়েছেন মেসি। ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে জয় করেছেন ২৮টি শিরোপা। নিজে জিতেছেন পাঁচবার ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব ব্যলন ডি’অর।

কিন্তু ক্লাবের জার্সি গায়ে যতটা সফল মেসি, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে যেন ঠিক অনেকটাই মলিন। ২০১৪ বিশ্বকাপেও নিজ দক্ষতায় দলকে ফাইনাল পর্যন্ত টেনে নেন। কিন্তু ফাইনালেই যেন যত সমস্যা। ওই ফাইনালেও তারা হেরে যান।

আর কোপার গত পাঁচ আসরের চারবারই আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেছে। কিন্তু এই ফাইনাল বাধা এখনও তারা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলো না।

আসরের শুরুতে জাতীয় দলের ২৩ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে সতীর্থদের সেরাটা দেওয়ার অনুরোধ জানান মেসি। তিনি নিজেও একই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। কিন্তু হায়! ভাগ্য তার সহায় হয়নি। দেশের হয়ে তার একমাত্র শিরোপা অর্জন ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। এরপর তিনি ক্লাবের জার্সি গায়ে বহু শিরোপা অর্জন করলেও দেশের হয়ে কোন শিরোপা অর্জন করতে পারেননি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বিদায়টাও মেসি হতাশা থেকেই নিলেন। অপ্রাপ্তির হতাশা। যা তিনি আর ঘুচাতে পারলেন না। ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অভিষেক হওয়া ২৯ বছর বয়সী এ তারকা কোপার আসরে হারের হতাশা নিয়েই বিদায় নিলেন। কেননা তিনি আগেই বলেছিলেন, এবারের ফাইনালে হারলে পরপর তিনবার ফাইনালে পরাজয় বরণ করা হবে। আর এটা ব্যর্থতার থেকেও বেশি হতাশার হবে আমার জন্য।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here