নূসরাত ইমা :: এ কেমন চলে যাওয়া ? এভাবে কি যেতে হয়? এভাবে কি কেউ যায় ? মেয়েটা ভাবছে। এই সময়টা এলেই এই চিন্তাগুলো মনে ঘুরপাক খেতে থাকে। এত চেষ্টা করে এত ভাবে যে আর ভাববো না। কিন্তু না, নিজের অজান্তেই ভাবতে শুরু করে। হঠাৎ কাজের মাঝেই চমকে উঠে আবার কেন এসব ভাবছি!
অসম্ভব চঞ্চল মেয়েটা, হাসি আড্ডা গান প্রজাপতির মত উড়ে বেড়ানো যেন। অল্পতেই রাগ অল্পতেই সেরে যাওয়া। একটুতেই অভিমান। আবার ভুলে যাওয়া, তবে জেদি। আর সবার মতই। তারপর একদিন কি হলো সব উল্টে পাল্টে গেলো।
ঠিক এইরকম সময়ে। কনো এক বসন্তদিনে আচমকা দমকা হওয়ার মতোই ছেলেটা এলো। আর পাঁচটা প্রেমের গল্পের মত হতেই পারতো এই গল্পটাও। কারণ গল্পটায় ভালোবাস ছিল, প্রান ছিলো, অভিমান ছিলো নির্ভরশীলতা ছিল, বিশ্বাস ছিল।
চুপচাপ শান্তমত একটা ছেলে। খুব একটা মিশুকও না। কিন্তু অন্যের উপকারটা যেচেই করে। একদম অচেনা কাউকে কষ্ট পেতে দেখলেও তার খারাপ লাগে। একরোখা জেদি। নিজের খুব কাছাকাছি যেতে দেয়না কাউকে সহজে। নিজের ব্যাপারে আলাপি না একদমই। তবে যারা তার আপন তাদের ব্যপারে খুব খেয়াল। তারা জানে তার সেন্স অফ হিউমার দারুন। নিজের চেহারায় সিরিয়াসনেস টা ধরে রেখেই অন্যকে হাসাতে পারে।
যা হোক দুই জন দুররকমের প্রায় আকাশ পাতাল পার্থক্যের মানুষ কেমন করে যেন বন্ধু হয়ে গেলো।
ছেলেটার রাগ জেদ সামলাতে ব্যাস্ত মেয়েটা নিজের নিয়ে আর ভাবার সময় পায় না। মায়া লাগে আহা ছেলেটা কাউ কে তো কিছু বলতে পারে না। যা বলারা যা কষ্ট তা আমায় বলে হাল্কা হয়। মাঝে মাঝে অবাক হয় এই গম্ভীর মুখ চোরা ছেলেটার মাঝে এমন একটা শিশু কি করে বাস করে! দিন কেটে যায়। মেয়েটা ছেলেটা কে সাম্লাতে গিয়ে নিজের জগৎ টা আস্তে আস্তে গুটিয়ে আনে। নিজেও অনেকটা নির্ভর করে ওর উপর। ছেলেটাও প্রচণ্ড খেয়াল রাখে মেয়েটার। আস্তে আস্তে একটু একটু করে পরিবর্তন করে নিজে কে। এতো নির্ভরশীলতা এতো টান কিন্তু ভালোবাসি কথাটা অনুচ্চারিতই থেকে যায়।
তারপর হঠাৎ কনো এক বসন্তদিনে মেয়েটা টিপ পরে, চোখ ভরে কাজল পরে, পায়ে পায়েল পরে কাঁচের চুড়ি, বাসন্তী শাড়ি পরে অপেক্ষায় থাকে ছেলেটা যে খুব পছন্দ করে এমন সাজলে। ব্যাস দিন কেটে যায়। ছেলেটা কিছু না বলেই হারিয়ে যায়। অস্থির মেয়েটা ভাবে বিপদ হলো না তো? খোঁজ নিতে থাকে পাগলের মতো । নেই নেই কোথাও নেই সে। যেন ঝড়ের মত এসে সব ভেঙ্গে চুরমার করে ঝড় থেমে গেলো। মেয়েটার জীবন টা এক মুহূর্তে স্থির হয়ে গেল। নিশ্চল নিরব। মেয়েটা আর কাজল পরে না। টিপ পরে না। পায়েল পরেনা। কাঁচের চুড়ি, শাড়ি পরা বাদ দিয়েছে।
তিন বছর পর আজ বসন্ত দিন। অনেক ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো মেয়েটার। অসম্ভব ব্যাস্ত মানুষ সে। কর্ম ক্ষেত্রে তার উন্নতি ঈর্ষনিয়। অসম্ভব ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করে সে। কাজপাগল ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড। কক্ষন সময়ের এদিক সেদিক হয় না। আজ ঘুম ভেঙ্গেই মনে হলো আর একটা বসন্তের প্রথম দিন। শুধু এই একটা দিন সে নিজের মাঝে থাকে না। না চাইলেও ভয়ঙ্কর মন খারাপ থকে তার। আজকে অনেক্ষন বারান্দায় বসে ভোর হতে দেখলো । মনে হলো আর কত বুকে পাথর চেপে রাখবো আজকে আত্মাকে মুক্ত করে দেয়ার দিন। আজকের পর জিবনের একটা অধ্যায় মুছে দিব। যে চলে গেছে কিছু না বলে, যে কিছু না ভেবেই একা করে দিয়েছে আমাকে যে শুধু তার চাওয়া কেই চেয়েছে আমি আজ তাকে মুছে ফেলব। আজ থেকে শুরু হোক আমার নতুন যাত্রা। আজ আমি মুক্ত স্বাধীন। এই বসন্তেই হোক শেষ।
অনেক সময় নিয়ে মেয়েটা স্নান করে কাঁদে, যেন সব কষ্ট ধুয়ে যায় যখন বেরিয়ে আসে তখন সে অনেক হাল্কা। অনেক স্থির। বসন্তের সময়টা এলেই যে অস্থিরতাটা শুরু হয় সেটা আর নেই। খুব ভার মুক্ত লাগে। মেয়েটা আজ শাড়ি পরে তবে বাসন্তি নয়। চোখে কাজল পরে, টিপ পরে সাজে মনের মত করে।
প্রতিদিনের মতই তৈরি হয় অফিসে যাবে। গেট থেকে বের হয়ে সামনে তাকাতেই বজ্রাহতের মত স্থির হয়ে যায়। অসম্ভব পরিচিত একজন শান্ত চোখে, হাতে তার পছন্দের এক গুচ্ছ হলুদ জারবেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিন বছরে খুব একটা বদলায়নি শুধু স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে। এক আকাশ অভিমান কষ্ট আছড়ে পরে মনে। মনে হয় কেন? আজ কেন? মেয়েটা ভেবে পায় না কি করবে। সামনে এগিয়ে যাবে নাকি ঘুরে চলে যাবে অফিসের গাড়িটার দিকে। মেয়েটার সিদ্ধান্ত পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম। কি করা উচিৎ তার ?
১২.২.১৬
লেখকের ইমেইল: haider_nusrat@yahoo.com