পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে দারে দারে ঘুরছে মাজাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি :: কেশবপুর উপজেলার রাফেজা নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী তার ৫ মাসের শিশুর পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে গত এক বছর ধরে মানুষের দারে দারে ঘুরছে। এলাকার এক যুবকের প্রেম প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় রাতের আধারে তার শয়ন কক্ষে ঢুকে জোরপূর্বক উপর্যুপরি ধর্ষন করে।

এতেই সে গর্ভবতী হয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জন্ম দেয় রাফিদ হাসান (৫ মাস) নামের শিশুটিকে।

এ ঘটনায় মামলা হলেও দীর্ঘদিনে আসামী আটক করতে পারেনি পুলিশ। ভিকটিম মামলাটি নিষ্পত্তির জন্যে দু্রত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করে সরকারসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বায়সা (নূরপুর) গ্রামের এরশাদ আলী মোল্যার মেয়ে রাফেজা খাতুন কেশবপুর পাইলট বালিকা বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সে যখন নবম শ্রেণীর ছাত্রী তখন থেকে স্কুলে যাতায়াতের পথে একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মোল্যার ছেলে রাশেদুল ইসলাম প্রায় সময় তাকে কুপ্রস্তাবসহ বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে আসছিল।

এতে সে রাজি না হওয়ায় ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে রাশেদুল ইসলাম তার শয়ন কক্ষে ঢুকে মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। ফলে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এ সময় ওই ছাত্রী বিয়ের প্রস্তাব দিলে রাশেদুল ইসলাম আশ্বাস দিয়ে শুধু সময় ক্ষেপন করার এক পর্যায়ে তাদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে।

এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে কয়েক দফা সালিস হলেও বিষয়টি অমিমাংশিত থেকে যায়। অবশেষে ২০১৫ সালের ২৪ জুন রাফেজা খাতুন বাদি হয়ে রাশেদুল ইসলামকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেশবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। যার নং-২২।

রাফেজা খাতুনের দাবি, আমি সস্তানের পিতৃ পরিচয়সহ তার অধিকার চাই। শিশুটিকে নিয়ে এখন কী করবো তা ভেবে পাচ্ছি না। এ নিয়ে আমার পরিবার থাকে সারাক্ষণ উদ্বিগ্ন। মামলা হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি পুলিশ রাশেদুল ইসলামকে আটক করেনি বা আটক করার তেমন চেষ্টা করেনি।

এমনক সে সে আদালতেও হাজিরা দেয়নি। এক জানুয়ারী থেকে সে শিশুকে রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে রাশেদুল ইসলাম বাড়িতে এসে আদালত থেকে এ মামলা তুলে নেয়ার জন্যে হুমকি দিচ্ছে। ফলে তার পড়াশুনা বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে।

রাফেজা খাতুনের পিতা এরশাদ আলী মোল্যা জানান, আমি একজন দীনমজুর কৃষক।

পরের ক্ষেতে হালচাষ করে চলে আমার সংসার। এ মামলার খরচ চালানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি মামলাটি নিষ্পত্তির জন্যে দু্রত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করে সরকারসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে মামলার তদন-কারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক দীপক দত্ত বলেন, থানায় মামলা হওয়ার দু‘দিন পর ২৭ জুন যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. লুৎফুন্নাহার লাকী ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন করেন এবং প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন সে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট আসামীকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে চার্জসীট দেয়া হয়েছে। আদালতে ভিকটিমসহ ৯ জন সাক্ষীর দেয়া জবানবন্দীতে রাশেদুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here