“কাকড়া ধরে জীবন চলে”সরোজ দত্ত, পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: উপকূলে এখন কাকড়ার মৌসুম। যে কারণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাকড়া শিকারীরা। কম পুঁজিতে বেশি লাভ আর কাঙ্খিত মাছ ধরা না পরায় অনেকেই এখন পেশা বদল করে কাকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে।

ভোররাত চারটা। পটুয়াখালীর মনোহরপুর গ্রাম থেকে একদল কাকড়া শিকারী ট্রলারযোগে যাত্রা শুরু করলো সুন্দরবন সংলগ্ন কুয়াকাটার পশ্চিমে ফাতরার বনের উদ্দেশ্যে। ভোর সাড়ে ছয়টায় গন্তব্যে পৌছে সকালের খাবার ওখানেই সেরে নেয়। এরপর লোহার তৈরি বিশেষ শিক আর মাটি কাটার খোন্তাসহ যাবতীয় সামগ্রি নিয়ে বনের উদ্দেশ্যে যাত্রা।

শুরু হয় কাকড়া সন্ধানের পালা। বড় বড় গর্তে লোহার শিক দিয়ে অনুসন্ধান করে কাকড়ার উপসি’তি টের পাওয়া। অভিনব এ পদ্ধতিতে কাকড়ার উপস্থিতি থাকলে ওই গর্ত থেকে বের করে আনা হয় ৫শ’-৬শ’ গ্রামের এক একটি বড় বড় কাকড়া। আর এভাবেই ভোর থেকে জোয়ার আসার আগ পর্যন্ত পনের থেকে বিশটি কাকড়া ধরে শিকারীরা।

কাকড়া শিকারী সন্তোষ, গৌতম, বাদল জানান, বর্ষায় প্রজননের পর ছোট কাকড়া শীতমৌসুমে বড় হয়ে সাগরকূলবর্তি বিভিন্ন বনের বড় বড় গাছের গোড়ায় গর্ত করে আবাসস’ল তৈরি করে। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পূর্নাঙ্গ কাকড়ারা এভাবে থাকায় খুব সহজে ধরতে পারায় এই সময়কে কাকড়ার মৌসুম বলা হয়ে থাকে।

যেকারণে অনেকে পেশা বদল করে এখন কাকড়া শিকার করছে। পটুয়াখালীর উপকূলীয় ফাতরা, গঙ্গামতি, সোনারচরসহ অর্ধশতাধিক বনাঞ্চলে অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষ এ পেশায় জড়িত। এতে অনেকেই স্বাবলম্বি হয়েছে। আবার অনেকে কাকড়া বিক্রি করে এক থেকে দেড় হাজার টাকা উপার্জন করে খুব ভালভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছে।

তবে বিভিন্ন জাল বা চাই দ্বারা মাছ শিকার করতে গিয়ে অনেকেই ছোট কাকড়া মেরে ফেলছে। এতে করে কাকড়ার পরিমান দিন দিন কমে যাবার আশংকাও করছেন কেউ কেউ।

পটুয়াখালী সরকারী কলেজ প্রানীবিদ্যা বিভাগ প্রাক্তন অধ্যক্ষ পিযূষ কান্তি হরি, কাকড়ায় প্রচুর পরিমানে প্রোটিন থাকায় শিশুসহ সকলের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ন। দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় কাকড়ার প্রচুর চাহিদা থাকায় এটি রপ্তানিযোগ্য একটি গুরুত্বপূর্ন মৎস্য পন্য হিসাবে বিবেচিত।

তার মতে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্র্জনে শুধু মাত্র চিংড়ি খাতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে কাকড়ার উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত এবং উপকূলীয় এলাকায় কাকড়া চাষকে জনপ্রিয় গড়ে তোলা গেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত হতে পারে এটি।

কুয়াকাটার আলীপুর-মহিপুর কাকড়া আড়তদার হরিদাস জানান, পরিবহন সমস্যার কারণে অনেক কাকড়া মারা যাওয়ায় সেগুলো রপ্তানিযোগ্য না হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তা সত্বেও পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকার আড়ত থেকে প্রতিমাসে প্রায় কোটি টাকার কাকড়া বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে তার দাবী।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here