কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছেজাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর(যশোর) প্রতিনিধি :: কেশবপুর উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে ওষুধ সরবরাহ, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মী নিয়োগ দেয়ায় গ্রামের মহিলা, গর্ভবতী মা, প্রসূতি মা ও নবজাতসহ হতদরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা পাচ্ছে। নিয়োগ প্রাপ্ত সিএইচসিপি কর্মীরা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করায় স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌছা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে নিয়মিত বেতন-ভাতাদি না পাওয়া, ইনক্রিমেন্ট না থাকা, চাকুরী রাজস্ব খ্যাতে অন্তর্ভূক্ত না করায় সিএইচসিপি কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলার নবনির্মিত ২টি ক্লিনিকসহ ২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। স্বাস’্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌছাই দিতে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামলে বন্ধ থাকা কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো বর্তমান সরকার সচল করে। প্রতিটা কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মী নিয়োগ ও সরকারী ভাবে প্রায় ৩০ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করে।

কর্মরত প্রোভাইডার কর্মীরা সপ্তাহে ৬দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। চিকিৎসার জন্য রোগিদের ৪০/৫০ টাকা পরিবহন খরচ করে উপেজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হতো, সামান্য সমস্যায় বাজারের যে কোন পল্ল্লী চিকিৎসকের কাছে গেলে ওষুধের জন্য ১০০/২০০ টাকা খরচ করতে হতো।

বর্তমান কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো সচল থাকায় সেই সকল রোগের ঔষুধ বিনামূল্যে রোগিরা পাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগিদের মধ্যে মহিলা, গর্ভবতী মা, প্রসূতি মা ও নবজাতকের সংখ্যাই বেশি । ক্লিনিকে এনটিবায়োটিক, শিশুদের ওষুধের যে পরিমান চাহিদা তার তুলনায় সরবরাহ খুবই কম। ফলে প্রতি দুই মাসের শিশুদের জন্য বরাদ্দ ঔষধ মাত্র ১/২ সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যায় বলে প্রোভাইডার কর্মীরা জানান ।

সরেজমিনে গত ১৫ নভেম্বর উপজেলার ভালুকঘর কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন কালে দেখা গেছে, ক্লিনিকটিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ নাই, টিউওবয়েল ও সংস্কার না করায় টয়লেট ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সরকার র্কতৃক সরবরাহকৃত নোট বুকটিও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এতসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে প্রোভাইডার মিজানুর রহমান হাসি মুখে রোগিদের স্বাস্থ্য সেবা ও ওষুধ দিচ্ছেন।

প্রোভাইডার মিজানুর রহমান জানান, এখানে সেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে সাধারণত মহিলা, গর্ভবতী মা, প্রসূতি মা ও নবজাতকের সংখ্যাই বেশি। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ক্লিনিকে ৩০ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়। শিশুদের ঔষধ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ খুবই কম।

এ সময় ভালুকঘর কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা খোদেজা বেগম (৪২) জানান, চিকিৎসার জন্য ৪০/৫০ টাকা পরিবহন খরচ করে উপেজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হতো কিন্তু এখন বাড়ীর পাশে কমিউনিটি ক্লিনিক হওয়ায় খুব সহজে সেবা পাচ্ছি।

ভালুকঘর কমিউনিটি ক্লিনিকের জমিদাতা সাবেক ইউপি সদস্য ইব্রাহিম হোসেন জানান, এলাকার কৃষক ও হতদরিদ্র সুবিধা বঞ্চিত মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ পাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো সচল করা বর্তমান সরকারের একটি জনবান্ধব ও প্রশংসানীয় কর্মসূচি বলে তিনি জানান ।

একই দিন উপজেলার দোরমুটিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন কালে দেখা গেছে, সেখানে কর্মরত সিএইচসিপি শাহানাজ পারভিন বেশ আন্তরিকতার সহিত নারী, শিশু রোগিদের স্বাস্থ্য সেবা ও ওষুধ দিচ্ছেন। তিনি জানান, নিয়মিত বেতন-ভাতাদি না পাওয়া, ইনক্রিমেন্ট না থাকা, চাকুরী রাজস্ব খ্যাতে অন্তরভূক্ত না করায় সিএইচসিপি পদে কর্মরতদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা র্কমর্কতা ডাঃ শেখ আবু শাহীন জানান, উপজেলায় নবনির্মিত ২টি ক্লিনিকসহ মোট ২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে চলতি বছর জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন- ১লক্ষ ৫৬ হাজার ৫শ’৫৫ জন সেবা গ্রহন করেছেন। এর মধ্যে ৩হাজার ৬শ’ ১৭ জনকে র্গভকালীন ও ১হাজার ৮শ’ ৭৯ জন মাকে প্রসব পরর্বতী সেবা প্রদান করা হয়েছে। ২হাজার ৪শ’ ১২ জন রোগীকে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থায় মফস্বলে চিকিৎসা সচেতনতায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

এদিকে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে সেই সিএইচসিপি কর্মীরা ভালো নেই। তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছে না, নেই ইনক্রিমেন্ট, তাদের চাকুরীও রাজস্ব খ্যাতে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে না। এসব কারণে প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা। সএইচসিপি কর্মীরা তাদের চাকুরি রাজস্ব খ্যাতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here