স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে চড়াও হয়ে তাদের মারধর করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
আন্দোলনরত অন্তত সাতজন শিক্ষক সরকার সমর্থক এই ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল ইসলাম।
উপাচার্য আমিনুল হক ভূঁইয়া একই দিনে বিকাল ৩টায় একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক ডাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। এরই মধ্যে উপাচার্যকে সমর্থন দিয়ে আসা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। আন্দোলনরত শিক্ষকরা ব্যানার নিয়ে সেখানে যান সকাল সাড়ে ৭টার দিকে।
সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে উপাচার্য প্রশাসনিক ভবনের সামনে এলে ছাত্রলীগ কর্মীরা ব্যানার কেড়ে নেয় এবং শিক্ষকদের গলা ধাক্কা দিয়ে ও মারধর করে সরিয়ে দেয়। এ ফাঁকে উপাচার্য ভবনে ঢুকে দোতলায় নিজের কার্যালয়ে চলে যান।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানকে এ সময় হাত বিশেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
উপাচার্যপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রক্টর অধ্যাপক কামারুজ্জামান চৌধুরী ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারও এ সময় দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে তারা কেউ ছাত্রলীগ কর্মীদের ঠেকানোর চেষ্টা করেননি।
জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন দুই পক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও ছাত্রলীগ কর্মীদের কাছে পাত্তা পাননি তিনি।
শিক্ষকদের ওপর হামলাকারীরা এ সময় সেস্নাগান দেয় ‘শাবিপ্রবির মাটি/ছাত্রলীগের ঘাঁটি’।
উপাচার্য ভেতরে ঢুকে যাওয়ার পর ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষকদের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে নতুন করে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তাদের ধাক্কায় অধ্যাপক ইয়াসমিন হক মাটিতে পড়ে যান। এক ছাত্রলীগ কর্মীকে এ সময় এক শিক্ষকের গায়ে লাথি মারতেও দেখা যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের নেতা অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল ইসলাম পরে বলেন, ‘আমাদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে। আমাদের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। উপচার্য ছাত্রদের আমাদের ওপর লেলিয়ে দিয়েছেন।’
তিনি নিজে এবং অধ্যাপক ইয়াসমিন হক ছাড়াও মারধরের শিকার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গণি, অধ্যাপক এ ন ক সমাদ্দার, মোস্তফা কামাল মাসুদ, সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক উদ্দিন।
ইয়াসমিন হক সাংবাদিকদের বলেন, এই যে পরিবেশ নষ্ট করা হলো, এর জন্য ভাইস চ্যান্সেলরই দায়ী থাকবেন।
সকালে হামলা করার জন্য উপাচার্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাতে বৈঠক করেন বলেও অভিযোগ করেন পদার্থবিদ্যার এই শিক্ষক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন বলেন, ‘আপনারা তো সবই দেখছেন। আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না। নো কমেন্টস।’
শিক্ষকদের মারধরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পার্থ বলেন, ‘বাধা দেয়ার বিষয়টি সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্ত নয়। যার যার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে এতে অংশ নিয়েছেন।’
শিক্ষকদের ওপর হামলার খবর ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েক সাংবাদিককেও ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়।
যমুনা টেলিভিশনের সিলেট ব্যুরোপ্রধান মাহবুবুর রহমান রিপন বলেন, ‘সারাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাদের বিচার না হওয়ায় আজ তারা এ ঘটনা ঘটাল।’
সাংবাদিক লাঞ্ছিত করার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব।
আজ প্রতীকী কর্মবিরতি
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতীকী কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক ফোরাম। রোববার সকালে শিক্ষকদের ওপর হামলার কারণে ও ভিসির পদত্যাগের দাবিতে এ কর্মসূচি দেয় আন্দোলনরত ফোরামটি।
আন্দোলনকারী সহযোগী অধ্যাপক ফারুক উদ্দিন বলেন, ‘ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলবেই। আমাদের কোনোভাবেই দমিয়ে রাখা যাবে না। কর্মবিরতির পাশাপাশি আমরা সোমবার মানববন্ধন, সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচিও পালন করব। এদিকে যাদের হামলাকারী বলে শিক্ষকরা চিহ্নিত করেছেন, সেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনকারী বলেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া।
শিক্ষকদের ওপর হামলার কোনো অভিযোগ পাননি বলেও দাবি করেছেন উপাচার্য। তিনি পাল্টা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তার ওপর হামলার অভিযোগ তুলেছেন।
এ ব্যাপারে দিনভর উত্তেজনার মধ্যে গতকাল বিকালে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘হামলা তো আমার ওপর হয়েছে। আমি কার কাছে বিচার চাইব? ‘আমাকে কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী, আমি একাডেমিক কাউন্সিল করতে এসেছি। শিক্ষকদের হামলায় আমি পায়ে ব্যথা পেয়েছি। শিক্ষকদের বাধায় আমি রাস্তা দিয়ে অফিসে প্রবেশ করতে পারিনি। আমাকে কাদা মাটি ও ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে আসতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের ওপর হামলা হয়েছে_ এ রকম কোনো অভিযোগ কোনো শিক্ষক আমার কাছে করেননি। এ রকম কোনো অভিযোগ আমার কাছে এলে আমি অবশ্যই এর বিচার করব।’