শামীম মিয়া::
গ্রাম আমদির পাড়া। চারদিক সবুজে ঘেরা, আমাদের পাড়া। মাঠে, মাঠে, রাখালের বাঁশি বাজানো সুর, চলে যায় গ্রাম পেড়িয়ে বহুদুর। গাছে, গাছে, হরেক রকম ফুল, ফল,পাখির ডাক। রাতে জোনাকী পোকার মিটমিট আলো,আহা খুব সুন্দর লাগে দেখতে ভালো। এই গ্রামকে কেন্দ্র করে, আছে একটা বটগাছ। বটগাছটার বয়স প্রায়, একশত বছর হবে। এই বটগাছটার চারদিক দিয়ে গড়ে উঠেছে জনপদ। বটগাছের দক্ষিনে যমুনা নদী, এবং পশ্চিমে বাঙ্গালী নদী। বটগাছের আশে পাশে বেশ কয়টা দোকান আছে। দড়্গিনে জুমারবাড়ী বাজার, উত্তরে সাঘাটা থানা, কয়েক কিলো দুরে গাইবান্ধা জেলা। বটগাছের নিচে বসে অনেক শ্রমজীবি লোকজন বিশ্রাম নেয়। বটগাছটা থাকার কারনে ভ্যান চালক ভাইয়েরা ও গ্রামের লোকেরা এর নাম দিয়েছে বটতলী। বটতলী নামেই এই জায়গাটা বর্তমান পরিচিত। এই বটগাছের ইতিহাস বলা বাহুল্য।
আমি আর দাদা একদিন আমাদের গ্রামের সৌন্দর্য্য নিয়ে কথা বলতেই, উঠে আসে অনেক কথা, দাদার মুখে। এই কথা ঐকথা বলতেই দাদা বলেন, এক শিকারীর দশার কথা। আগে এই বটতলী থেকে পশ্চিম দিকে তাকালেই দেখা যেতো ধূ,ধূ, মাঠ আর মাঠ। বন্যার সময় শাপলা ফুলের মেলে দেওয়া পাপড়ির ডানা, চারদিকে বিছানো, ছিটানো, যেন একটা শাড়ী সাদা। হাজারো রকমের বকের খেলা, আরো যেন বাড়িয়ে দিতো সুন্দরের ডানা। সে অনেক কথা, এখন আর তা নাই। সব কিছু উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে। উঠেছে বহু জনপদ।
সে কালে, এই আমদির পাড়া গ্রামের, এই মাঠেই এই রকম বন্যার সময়।
(বকদের সাথে আসতো কিছু অসাধু বন্দুক ধারী শিকারী। একেক জন,একেক গ্রাম থেকে আসতো। প্রতিদিন বিশ ত্রিশটা করে বক মারতো একেক জন। তা আবার বাজারেও বিত্রিম্ন করতো। তা আমাদের মত সহস সরল শিড়্গিত মানুষ জন ত্রম্নয় করতো। তবে কেউ প্রতিবাদ করতো না। আজও তো মানুষ এই রকম বন্য পাখি ত্রম্নয় করে এবং তা খায়। এতে প্রাকৃতিক এর ভারসাম্য নষ্ট হয়, হচ্ছে। আমরা জানি যেনও তা করি কারন, আগে থেকে এভাবেই আসছে। প্রতিকার নাই , প্রতিরোধ নাই, নাই প্রতিবাদ আগে ছিলোনা এখনো নাই। তবে আছে পত্র পত্রিকায় আর মিডিয়া মাধ্যম। এই সব অসাধু শিকারীদের কথা, কর্মকান্ড গুলো প্রকাশ বা প্রচার হলে শুধু আপচস করি আমরা। তখনী আবার অন্য কিছু ভাবী, ভাবী না কী ভাবে সবাই মিলে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করা যায় । আমাদের দেশ, রড়্গা করা যেন আমাদের র্কতব্য, তেমনী প্রাকৃতিক রড়্গা করাও আমাদের দায়িত্ব। আসুন এসো এর প্রতিরোধ করি। দরকার পরলে প্রতিবাদও করি।)
দাদার গল্প শোনার পর আমার মনে হলো এই রকম। একটা গাছে ছিলো দুটি বক পাখি, স্বামী স্ত্রী আর ছেলে মেয়েদের নিয়ে সুখেই ছিলো। সনত্মান দু“টাই ছোট্ট। তাই বাবা মা আসতো বন্যার মধ্যে আমদির পাড়ার গ্রামের এই বিশাল মাঠে, নিজের এবং শিশু সনত্মান বকদের ড়্গুধা মিটানোর জন্য। কিন্তু সেদিন স্বামী স্ত্রী বক দুটির মধ্যে স্বামী বকটা আটক হয় বা বন্দি হয় একটা শিকারীর ফাঁদে। স্ত্রী বকটাও আটকের হাত থেকে বেচে যায়। স্বামী বকটাকে স্ত্রী বকের সামানেই জবাই করে অসাধু শিকারীটা। লুকিয়ে স্ত্রী বকটা সব দেখে। স্ত্রী বকটা নিজের চোখে দেখে তার স্বামীর মৃত্যু। বকটা খাবার সংগ্রহ করা বাদ দিয়ে উড়ে যায় তার বাসায়। বক ছেলে মেয়ে মায়ের কন্ঠ শুনে হা করে আছে মা খাওয়াবে বলে। কিন্তু মার চোখে পানি। মাকে ছেলে-মেয়ে সনত্মান দুটি জিজ্ঞাসা করে, মা তোমার কী হয়েছে, বাবা কোথায় ? মা অনেকড়্গন পর বললো, তোমাদের বাবা আর নাই। বক সনত্মান দুটি আবারো প্রশ্ন করলো, বাবা নাই মানে কোথাই গেছে আমাদের খাদ্য আনার জন্য। মা বললো, তোমাদের বাবা আর ফিরে আসবেনা। অসাধু একটা শিকারী তোমাদের বাবাকে প্রথমে গুলি করে। আমরা পালাতে চাইলে আবারো গুলি করে আর তোমাদের বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমি বাঁচাতে পারিনী তোমাদের বাবাকে। ছেলে বক আর মেয়ে বক অনেকড়্গন কাঁদলো। কাঁদতে কাঁদতে ছেলে বক, মা বককে বললো, মা আমি শিকারী দেখবো, তারা কী আমাদের চাইতে বড়। আমাদের চাইতে শক্তি শালী । মা বললো, হ্যা বাবা, তুমি আরো বড় হও দেখতে পাবে তাদের।
একমাস পর: বন্যার পানি কমতে লাগলো। এখন খাবার যোগার করতে সুবিধা এই কথা গুলো মা বক বললো, ছেলে বককে। কারন ছেলে বক এখন বড় হয়েছে। উড়তে পারে তবে খুব বেশি না। মা, বকের পড়্গে একা সম্ভাব না একা সে সহ তিন জনার খাদ্য সংগ্রহ করা।
তাই সেদিন মা বক ছেলে বককে সঙ্গে আনে, খাদ্য সংগ্রহ করতে। আসার পথে মা বক ছেলে বককে অনেক কথা শিখিয়ে দেয়। মা ছেলে মিলে আসে এই আমদির পাড়ার এই বিশাল মাঠেই। এসে দেখে হাজার হাজার বক অথাৎ তাদের সঙ্গি। বক ছেলেটার সাথে অন্য বকদের পরিচয় করিয়ে দেয় মা বক। ছেলে বক মুক্ত আকাশ বিশাল খেলার মত মাঠ পেয়ে খুব খুশি। খুব আনন্দের সাথে পেট ভরে খেলো। খেয়ে বোন বকের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করছে ছেলে বকটা। এমন সময় অসাধু শিকারীরা লুকিয়ে থেকে গুলি করতে থাকে চার দিক থেকে। ছেলে বকটার গায়ে গুলি না লাগলেও পানিতে পড়ে যায়। পানিতে তার ডানা দুটাই ভিজে যায় আর উড়তে পারেনা সে। এর মধ্যে আসে শিকারী। এসে ছেলে বকটাকে ধরে। মা বক দুর থেকে দেখছে আর কাঁদছে। আজ বুঝি আমার ছেলেটা মারা যায়। ওর বাবার মত। ছেলে বক মা মা ও মা বলে ডাকছে। মাও শুনতে পারছে। কিন্তু কি আর করবে মা শুধু দুর থেকেই কাঁদছে। ছেলে মাকে ডাকা বাদ দিয়ে ভাবছে কী করা যায় ? আমার বিশ্বাস এরাই আমার বাবাকে মেরেছে। আমি এদের ছাড়বো না। ছেলে বকটাকে শিকারী নিয়ে আসে পানি থেকে উচু একটা জায়গায়। এখন জবাই করবে, এক হাত দিয়ে বকটাকে ধরে আছে অন্য হাত দিয়ে ছুড়ি বেড় করছে ব্যাগ থেকে,এমন সময় ছেলে বক তার ঠোট দিয়ে ঠোকর দেয় শিকারীর চোখে অমনী শিকারীর চোখটা উঠে আসে। শিকারী রাগের চোটে বকটাকে চেপে ধরে অমনী আরেকটা ঠোকর দেয় আরেকটা চোখে, উঠে আসে এই চোখটাও। এবার শিকারী বকটাকে ছেড়ে দেয়। প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যায় ছেলে বক। বকের মা খুশি হয়। কিন্তু মারা যায় লোভি এই শিকারীটা। বক মা এবং ছেলে বক বাসায় আসে। এসে বলে ছেলে বক মাকে, মাগো আজ আমার বাবার খুনের প্রতিশোধ নিয়েছি। মা বক আর ছেলে-মেয়ে বক ঠিক করে তারা এই গ্রাম এই দেশ ছেড়ে চলে যাবে কোন দেশে আর কোনদিন ফিরে আসবে না এই আমদির পাড়া।
আমি আশা করি দাদার গল্পের সাথেই এই গল্পের মিল আছে। এই শিকারীর দশার পর সেই থেকে এই গ্রামে বকের সংখ্যা দিন দিন কমতেই থাকে এখন বক যেন চোখেই পড়েনা। তবে শিকারীর সংখ্যা আজও কমেনী। ঐ রকম শিকারীদের দেখা যায় বন্দুক নিয়ে মাঠে মাঠে ঘুরছে। তবে বক না পেলোও অন্য অন্য পাখি গুলো মারছে।