একটি ছোটগল্প
শফিক রৌদ্র :: সময়টা মে মাসের ১০ তারিখ অন্যসব দিনের মতোই পার করছিল নীল। হঠাৎ মাথায় আসলো ১১ মে তার ভালোবাসার মানুষটার জন্মদিন। জন্মদিনে একটা গিফট দেয়া চাই! এটাই তার জীবনে কোনো মেয়েকে প্রথম গিফট দেয়া সে ভেবে পাচ্ছে না ভালোবাসার টুনটুনিকে কী গিফট দিবে। একবার ভাবছে ডায়েরি দিবে আবার ভাবছে না অন্য কিছু দেবো, ধ্যাত, কিছুই মাথায় আসছে না, বিভিন্ন প্রোডাক্ট লিস্ট মাথায় ঘুরছে। আধুনিক বাজারে কত রকমের প্রোডাক্ট আছে কোনটা রেখে কোনটা নিবে আর কী দিলে টুনটুনি খুশি হবে তা ভেবে নীল
অস্থির।
দেবার মতো কিছুই যখন ভেবে পাচ্ছিলো না তখন নীল এ বিষয়টি খুব কাছের এক বন্ধুর সাথে শেয়ার করলো আর দুজনে মার্কেট ঘুরে চয়েস করে কিনে আনলো শোপিস।
মার্কেট হতে বাসায় আসতেই নীল
কল্পানার জগতে ফিরে গেলো- ভালোবাসার মানুষের জন্য প্রথম কোনো গিফট কিনতে পেরে খুব আনন্দ হচ্ছে তার, আর মনে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে-
– ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়! নীল গিফট দেয়ার ব্যবস্থা করতে সেই পুরনো ভাবনা ভাবছে কীভাবে দিবে গিফট!
আবার কি বন্ধুর সাহায্য নিবে? না এটা করা যাবে না। ইদানিং টুনটুনি নীলকে সহ্য করতে পারছে না, আর বন্ধু! খুব খারাপ হয়ে যাবে।
নীল টুনটুনিকে মোবাইলে ম্যাসেজে লিখলো, “আমি তোমার জন্য একটা গিফট কিনেছি, দয়া করে নেবে কি?” টুনটুনি গিফট নিতে অনিহা প্রকাশ করলে নীলের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কত আশা নিয়ে, কতো কষ্ট করে বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে গিফট এনেছিল নীল। আর টুনটুনি এটা কী করলো! টুনটুনি খুব জেদি, নীল তা ভালো করেই জানতো। নীলও কম নয়, ওর গিফট যেভাবেই হোক দেয়া চাই ই চাই।
নীল মেসেজে বলে দিল, “তুমি গিফট না নিলে আমি এ মূহুর্ত থেকে কোনো কিছু খাব না, সারারাত বাইরে বসে কাটাবো।” কিন্তু টুনটুনি এতে কান দিলো না। এদিকে নীল প্রায় সারারাত গিফট নিয়ে বাহিরে বসে ছিল। টুনটুনি নীরব দর্শকের মতো চেয়ে চেয়ে দেখেছে তবু মন গলেনি। নীল এর এতো রকম পাগলামো দেখে টুনটুনি রাত প্রায় ৩ টায় গিফট নিতে এক প্রকার রাজি হলো। নীল গিফট টি দিতে পারবে ভেবে রাতে ওর ঘুম হয়নি। কখন সকাল আসবে সে প্রতীক্ষায় সময়টা ছটফট করে কেটেছে।
সকালে গিফট দিতে গিয়ে ফেরত
এসেছে নীল, টুনটুনি গিফট নেয়নি। নীল টুনটুনিকে খুব বিশ্বাস করে এবং ভালোবাসে। তাই ভেবেছিল, টুনটুনি যেহেতু বলেছিল, তো অবশ্যই গিফট নিবে। কিন্তু সেই পুরনো কাহিনী।
এরপর থেকে নীল দুদিন ভাত না খেয়ে থেকেছে। আর টুনটুনি তা জেনেও তার জেদকে পরাজিত হতে দেয়নি।
লেখকের ইমেইল: shafiqpoet@gmail.com