তরুন দেবনাথের উদ্ভাবন: মোবাইল ফোনে চলবে হুইল চেয়ার   কলিট তালুকদার, পাবনা প্রতিনিধি :: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশের কৃতি শিক্ষার্থীরা আবিষ্কার করছেন নিত্য নতুন নানা প্রযুক্তি। এরই ধারাবাহিকতায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুদে বিজ্ঞানী তরুন দেবনাথ উদ্ভাবন করেছেন ‘অ্যানড্রয়েড ফোন কন্ট্রোলড স্মার্ট হুইল চেয়ার।’ অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধি বা পক্ষাঘাতগ্রস্থ ব্যক্তি অন্যের সাহায্য ছাড়া এই স্মার্ট হুইল চেয়ারে নিজেই চলাচল করতে পারবেন।

এই চেয়ার বিদেশ থেকে আমদানী করতে গেলে খরচ হয় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। আর তরুন দেবনাথে এই হুইল চেয়ারে খরচ হয়েছে মাত্র ৭০ হাজার টাকা। রিচার্জেবল ব্যটারী দিয়ে তৈরী এই স্মার্ট হুইল চেয়ারটি একবার ফুল চার্জে প্রতি ঘন্টায় অন্তত ৩০ কিলোমিটার যেতে পারবেন প্রতিবন্ধি ব্যক্তিরা। সরকারী সহযোগিতা পেলে আরও কম খরচে তরুণ দেবনাথের এই আবিষ্কার শারীরিক প্রতিবন্ধি ও পক্ষাঘাতগ্রস্থ’ ব্যক্তিদের জীবন পাল্টে দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা গেছে, গত ১১ জুন রাজধানীর খামারবাড়িতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিৰার্থীদের উদ্ভাবন নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন সামিট। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় এই আয়োজনে বুয়েট-চুয়েট সহ ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ২০টি স্কুল-কলেজের ২০০টি দল তাদের নতুন উদ্ভাবন নিয়ে অংশ নেন।

মেলায় ‘ইন্টারন্যাশনাল রোবটস গট ফ্রিডম’ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুদে বিজ্ঞানী তরুন দেবনাথের উদ্ভাবিত ‘অ্যানড্রয়েড ফোন কন্ট্রোল স্মার্ট হুইল চেয়ার ফর ডিজেবিলিটিস’ প্রজেক্টটি। এই হুইল চেয়ারটি শারীরিক প্রতিবন্ধি ও পক্ষাঘাতগ্রস্থ’ ব্যক্তিরা অন্যের সাহায্য ছাড়াই স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে নিজেই ব্যবহার করতে পারবেন। চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় প্রতিবন্ধি ব্যক্তিটি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার পরিবারের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে যাবে।

ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের তপন দেবনাথের ছেলে তরুন দেবনাথ। এক ভাই ও এক বোনোর মধ্যে তরুন দেবনাথ বড়। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম ব্যাচের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তিনি। আলাপকালে তরুন দেবনাথ জানান, ৬ মাস আগে অ্যানড্রয়েট ফোনে রেসিং গেম খেলতে গিয়ে এমন আবিস্কারের কথা মাথায় আসে। চিন্তা করি এ বিষয়টিকে কিভাবে মোবাইলের বাইরে নিয়ে আসা যায়। এরপর আমি ওই সিস্টেমকে সেটের বাইরে নিয়ে এসে দুই-তিন হাজার টাকা খরচ করে ছোট্ট একটি ডিভাইস তৈরী করি। তখনই চিন্তা করি এই সিস্টেমটাকে তো মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা যায়। সেখান থেকে কাজ শুরু করে সফল হই। তরুন দেবনাথ আরও জানান, প্রাথমিক অবস্থায় এটি তৈরীতে আমাদের খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। তবে বাণিজ্যিকভাবে তৈরী করলে এর খরচ আরও কমে মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকায় সাধারন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা সম্ভব।

এ বিষয়ে প্রজেক্টটির সুপারভাইজার ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (আইসিই) সহকারী অধ্যাপক আ ফ ম জয়নাল আবেদীন বলেন, উন্নত ল্যাব ও যন্ত্রপাতির অভাবসহ নানা সীমবাদ্ধতার মধ্যে থেকে আমাদের কাজ চালাতে হচ্ছে। আমাদের দরকার একটি স্বয়ংসম্পূর্ন রোবোটিকস ল্যাবরেটরী। সরকার যদি আমাদের ফান্ডিং করে তাহলে আমরা অবশ্যই এটিকে ক্রয়সীমার মধ্যে রেখে বাজারে সরবরাহ করতে পারবো।

প্রজেক্টটটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (আইসিই) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কল পেয়েছি। আশা করি এই স্মার্ট হুইল চেয়ারকে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করতে সরকার আমাদের সহযোগিতা করবে।

তরুন দেবনাথের এই ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর ড. আল নকীব চৌধুরী। তিনি বলেন, তার এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here