ঈদ উপলক্ষে জাসদানি  কারিগড়রা ব্যস্ত শাড়ি তৈরিতেএম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ : মসলিন নেই, তাকে কি। ঐতিহ্য তো এখনো হারায়নি। জামাদানী তৈরী করে আমরা এখনো ধরে রেখেছি আমাদের ঐতিহ্য। সামনে ঈদ তাই আমাদের ব্যস্ততা একটু বেশী। বাজার ধরতে হবে। এই মওসুমে জামদানী কারিগরদের ব্যস্ততা বেশী থাকে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা গুলো বলছিলেন সোনারগাঁওয়ের নয়াপুরের জামদানী কারিগর জাহাঙ্গীর হোসেন।

তিনি বলেন, শাড়ি বুনন ও নকশার কাজে এখন ব্যস্ত সময় কাটছে জামদানি কারিগরদের। একটা জামদানি শাড়ি বুনতে সময় লেগে যায় ১৫/২০দিন। আর যদি ভালো নকশা করা হয় তাতে এক মাসও সময় লাগে।  ৪/৫ রোযা থেকে বাজারে নিয়ে আসতে হয় জামাদানি শাড়ি। তাই রাত দিন কাজ করতে হয়।

সরেজমিন দেখা দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁষে নোয়াপাড়া গ্রাম। মূলত এখানেই এক সময় রমনি মোহন মসলিন তৈরি হতো। এখন তৈরি হয় জামদানি। গ্রাম জুড়ে সারিসারি তাঁত। চোখে পড়ে শিল্পীদের কর্মচাঞ্চল্য। প্রায় প্রতিটি ঘরে তাঁতের কাজ চলছে। কেউ সুতা কাটছে, কেউ ব্যস্ত হাতে তাঁত টানছে। সুতা ভরছে কেউবা সহযোগিতা করছে অন্যজনকে। তৈরি হচ্ছে হরেক রকম ডিজাইনের জামদানী শাড়ি। বাজারে এ শাড়িই ঢাকাই জামদানি নামে পরিচিত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নোয়াগাঁও বারদী সন্মাদি নয়াপুর আনন্দবাজার বৈদ্যের বাজার, তাহেরপুর পিরোজপুরসহ প্রায় এলাকায় প্রতিটি পরিবারই কোন না কোনভাবে জামদানী শিল্পের সাথে জড়িত। কেউ সরাসরি কাপড় উৎপাদন করে, কেউ তাঁতী, কেউ সুতা বিক্রেতা আবার কেউ বিদেশে কাপড় রফতানির কাজে জড়িত। প্রতি পরিবারেই গড়পরতা ২/১ টা তাঁত রয়েছে। তাঁতীরা সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত ঈদ উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে পুরম্নষের পাশাপাশি নারীরাও শাড়ি বুনার কাজ করছেন।

মোগরাপাড়ার জামদানী কারখানার মালিক আবুল হাসেন জানান, আগে জামদানী শিল্পীরা শুধু শাড়ি তৈরিতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। তবে বর্তমানে জামদানি শিল্পে এসেছে নতুনত্ব। শাড়ি তৈরির পাশাপাশি থ্রি পিস, ওড়না, পাঞ্জাবি, পর্দার কাপড়ও তৈরি হচ্ছে এখানে। ঈদকে সামনে রেখে জামদানী শাড়ির চাহিদা বেড়ে গেছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী এবার আরো উন্নত এবং নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করছেন এখানকার কারিগররা।

জামদানী শাড়ি বিক্রেতা  শিমুল হোসেন জানান, একটি ভালো শাড়ি তৈরিতে দুতিন মাস পর্যনত্ম সময় লেগে যায়। সময় আর কাজের ওপর দাম নির্ভর করে। এ বস্ত্রের জমিন একাধিক রঙের হয়ে থাকে। জামদানি তাঁতীদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। কেবল রয়েছে বংশানুক্রমিক হাতে-কলমে অর্জিত দক্ষতা। কেবল নারায়ণগঞ্জ জেলার নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রামেই এ শাড়ি তৈরি হয়।

বারদী এলাকার জামদানী ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, ঈদ উপলক্ষে কারিগরদের কর্মব্যস্ততা অনেক বেড়েছে। আগে সপ্তাহে গড়ে দুই হাজার পিস শাড়ি বেচাকেনা চলত। বর্তমাতে তা ছয় হাজার পিসে উন্নীত হয়েছে। শাড়ির পাশাপাশি থ্রি পিস, পাঞ্জাবি, পর্দার কাপড়েরও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে গোটা রূপগঞ্জে ১০ কোটি টাকার জামদানী বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, দেশের তিন হাজার পরিবারের ১৫ হাজার মানুষ জামদানি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। প্রতি সপ্তাহে দুই হাজার জামদানি শাড়ি দেশে প্রস্তুত হয়। আর ঈদ কেন্দ্রিক তা অনেক বেড়ে যায়।

সূত্র মতে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এ দেশ থেকে ৪৮ লাখ ডলারের জামদানি শাড়ি রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ লাখ ডলারের জামদানি রপ্তানি হয়েছে শুধু ভারতেই। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে এক কোটি চার লাখ ডলারের জামদানি রপ্তানি হয়, যার মধ্যে ভারতেই গেছে ৬১ লাখ ডলারের জামদানি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here