imagesggggggকলিট তালুকদার,পাবনা: পাবনায় বছরের পর বছর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় আদালতে বাড়ছে মামলাজট। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মিলে ৪২ হাজার ৩১৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বিচারক ও বিচার কক্ষের সঙ্কট, সনাতন পদ্ধতির বিচার প্রক্রিয়া ও তদনেত্মর দীর্ঘ সময় এবং তুচ্ছ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রবণতারসহ নানা কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘসূত্রিতা। অপরদিকে বিচারের আশায় আদালতপাড়ায় ঘুরতে ঘুরতে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের (২০১৫) মার্চ মাস পর্যন্ত মোট বিচারাধীন ৪২ হাজার ৩১৯টি মামলার মধ্যে দেওয়ানি মামলা ২৮ হাজার ৫২০টি এবং ফৌজদারি মামলা রয়েছে ১৩ হাজার ৭৯৯টি। এই সময়ের মধ্যে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মিলে মোট ১২ হাজার ৯০০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনা জেলা জজ আদালতে বিচারকের মোট ২৯টি পদের মধ্যে বর্তমানে শূন্য রয়েছে ৩টি। এ ছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণীর একটি প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ছয়টি কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী মন্ডল জানান, জজ আদালতে বিচারকরের সঙ্কট, সনাতন পদ্ধতির বিচারপ্রক্রিয়া ও তদন্তে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে মামলা জট বাড়ছে। একজন বিচারক বদলি হয়ে চলে যাচ্ছে, সেই পদটি মাসের পর মাস শূন্য থাকছে এটিও মামলা জটের একটি কারণ। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যেই ইউএনডিপির সহযোগিতায় জাস্টিজ সেক্টর ফ্যাসালিটি প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রম্নত বিচার নিষ্পত্তির পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ খান রতন জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালেই নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার মামলা। পুলিশি তদনেত্মর ধীরগতি, সাক্ষী ঠিকমতো হাজির না হওয়া প্রভৃতি কারণে মামলা নিষ্পত্তি হতে দেরি হচ্ছে। সনাতন পদ্ধতির বিচার প্রক্রিয়া সংশোধন ও যে আদালতে মামলার চাপ বেশি সেখানে একাধিক বিচারক নিয়োগ দেয়া গেলে মামলা জট কমবে বলে তিনি মনে করেন।

জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পার্টটাইম আইনজীবী জিনাত আরা চৌধুরী এ বিষয়ে জানান, পারিবারিক বিরোধসহ সব ধরনের বিরোধ আদালতের নির্দেশনায় এ ডি আরের (অলটারনেটিভ ডিসপুট রেজুলেশন) মাধ্যমে উভয় পরে সমঝোতার ভিত্তিতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আদালতে মামলা জট কমে যেতে পারে। এটা করলে মামলার দীর্ঘসূত্রিতাও কমে যাবে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রাম আদালতকে চালু ও সচল করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে দুই পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তিতে উদ্যোগী হলে মামলা জট অনেকাংশেই কমে আসবে। আদালতে মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর ঘুরছেন এমন বিচারপ্রার্থী ভুক্তভোগীরা বলেন, মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে হয়রানি হতে হচ্ছে তাদের। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক অবস্থার ওপর। একটি মামলার রায় না হতেই দায়ের হচ্ছে নতুন নতুন অসংখ্য মামলা। আর আইনজীবীরা বলছেন, বিচারক ও বিচার কক্ষের সঙ্কট, সনাতন পদ্ধতির বিচার প্রক্রিয়া ও তদন্তে দীর্ঘ সময় এবং তুচ্ছ ঘটনায় মামলা দায়েরসহ নানা কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হচ্ছে । বিচারপ্রার্থীদের প্রত্যাশা, দ্রম্নত মামলার বিচারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়নে যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা যেন দ্রম্নততম সময়ে নেয়া হয়। তাহলেই তাদের ভোগান্তি কমে যাবে। কমে যাবে মামলাজট।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here