ঢাকা :: সকালে ঘুম ভেঙেই দেখা গেল আকাশ মেঘলা। তখন বৃষ্টি দেখে মন পুলকিত না হয়ে, অনেকেরই মনে ভর করে নানা ধরনের চিন্তা। কারণ কাজের দিনগুলোতে বৃষ্টি মানেই তো উটকো ঝামেলা। কাব্য, রসবোধ কিছুই কাজ করে না সে সময়। তখন শুধু মাথায় ঘোরে, ‘ছাতাটা যেন কোথায়?’
বৃষ্টিতে হিম হওয়া বিছানা ছেড়ে, প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য ছেড়ে তখন ছাতাকেই ত্রাতা বানিয়ে ছুটতে হয়। তাই মনে যতোই মেঘ জমুক, মেঘলা দিনে ছাতার চেয়ে আপন আর কেউই হতে পারে না। প্রিয় মানুষের খবর না নিলেও, সেদিন ছাতার খোঁজ না করলেই নয়। তাই বেপরোয়া এই মৌসুমে ভালো ছাতা এবং ছাতার ভালো থাকা অনেক জরুরি।
ছাতার আছে নানান ধরন। কোনোটা এক ভাঁজের, কোনোটা দুই-তিন বা চার ভাঁজেরও হয়ে থাকে। আছে অটো ছাতা, প্লাস্টিক ছাতাসহ নানান ধরনের ছাতা। বর্তমানে ফ্যাশনের অনুষঙ্গও হয়ে উঠেছে ছাতা। ঝালর বসানো কিংবা এক পাশে নকশা করা ছাতা তরুণীদের কাছে খুবই প্রিয়। এটি এখন ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গে এতই মিলে গেছে যে, তরুণীরা তো ইদানিং পোশাকের রঙের সঙ্গে মানিয়ে ছাতা বেছে নেয়। ময়ূরের মতো পেখম তোলার জন্য তারা এখন বর্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করে না।
রোদ কিংবা বৃষ্টি লাগে না তাদের, ফ্যাশনেবল সত্ত্বাকে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য যখন-তখনই তারা মেলে ধরে ছাতা। গ্রীষ্মকালে ঝালর বসানো আর নকশা করা ছাতার কদর বেড়ে যায় অনেক। আর বৃষ্টির দিনের জন্য ফ্যাশনেবল ডাবল-লেয়ার কিংবা রেক্সিনের ছাতার চাহিদা অনেক বেশি। গ্রীষ্মকালে রঙিন ছাতার চাহিদা বেড়ে যায় অনেক। আর বৃষ্টির সময় উপকারি একরঙা ছাতা।
কারণ, বৃষ্টির দিনে নকশা করা ছাতা মনের মতো করে ব্যবহার করা যায় না। তখন বৃষ্টি থেকে বাঁচতে পারলেই হয়। আর গ্রীষ্মের সময় বিষয়টি বদলে যায়। তখন রোদ থেকে বাঁচার পাশাপাশি ছাতা হতে হয় লুকের সঙ্গেও মানানসই। সবসময় ফ্যাশন সেন্সকে মাথায় রেখে ছাতা বেছে নিতে নেই। ছাতা কেনার সময় কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল করা জরুরি। তা না হলে, ফ্যাশনেবল তকমা পাবেন ঠিকই, তবে এর বিনিময়ে নিজের স্বাচ্ছন্দ্যকে জলাঞ্জলি দিতে হবে।
রোদ থেকে বাঁচতে হলে কালো ছাতা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ কালো রঙ অধিক মাত্রায় তাপ শোষণ করে। তাই খুব সহজেই কালো রঙের ছাতা রোদের আঁচে গরম হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে গ্রীষ্মের জন্য সবচেয়ে উপযোগী রঙিন কিংবা প্রিন্টেড ছাতা। এ সময় প্লাস্টিকের ট্রান্সপারেন্ট ছাতাগুলোও এড়িয়ে চলা ভালো। কালো রঙের ছাতা এবং প্লাস্টিক ট্রান্সপারেন্ট ছাতা বৃষ্টি-বাদলার জন্যই সবচেয়ে বেশি মানানসই। আর যদি মেঘলা দিনে কালো রঙকে এড়িয়ে যেতে চান তাতেও সমস্যা নেই। ডাবল-লেয়ারের রঙিন কোনো ছাতা হতে পারে আপনার রোদ-ঝড়-বৃষ্টি সব সময়কার সঙ্গী।
বাজারভেদে ছাতার দাম ওঠা নামা করে থাকে। নিউমার্কেট-গাউছিয়া এলাকায় প্রিন্টেড কিংবা রঙিন ছাতা পাওয়া যায় সুলভ মূল্যে। এক ফোল্ডের ছাতার দাম শুরু হয় ১৫০ টাকা থেকে যা, ৪০০ টাকা পর্যন্ত যায়। দুই/তিন ফোল্ডের ছাতার দাম হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। আর বাজারে চার ফোল্ডে পার্স ছাতার দাম সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে, যা শুরুই হয় ৩০০/৩৫০ টাকা থেকে। একরঙা ছাতার চেয়ে প্রিন্টেড ছাতার চাহিদা এখন বেশি। তাই বছরের শুরু দিকে একরঙা আর প্রিন্টেড ছাতার দাম বেশি থাকলেও এখন প্রিন্টেড ছাতার দাম আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। ফ্যাশন অনুষঙ্গের সঙ্গে মানিয়ে ঝালড় বসানো ছাতা কিনতে চাইলে তার জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
নিউমার্কেট-গাউছিয়া-চাঁদনী চক এলাকায় মিলবে সব ধরনের ছাতা। তাছাড়া ফার্মগেট, মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, মৌচাক, মতিঝিলসহ শহরের সব ছোটবড় মার্কেটে পছন্দসই নকশার ছাতা পাওয়া যাবে। ব্র্যান্ডেড ছাতার জন্য ঢুঁ মারতে পারেন বড় শপিংমল কিংবা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। সেক্ষেত্র কর্ণফুলি গার্ডেন সিটি, বসুন্ধরা শপিংমল, ইস্টার্ন প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
তবে ছাতা কেনার আগে অবশ্যই এর ভেতরের স্ট্যান্ড আর কাপড় ভালো করে যাচাই করে নিতে হবে। তা না হলে দুপুরের রোদের শেষে যদি বিকেলে দমকা হাওয়া ছাড়ে, তাতেই দুমড়ে মুচড়ে যেতে পারে শখের ছাতা।