ব্যাটিং নৈপুণ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ড্রষ্টাফ রিপোর্টার :: প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ড্র করার হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনে।  সেটা আর ফসকে যেতে দেয়নি সাকিব ও শুভাগত হোম।  তাদের হাত ধরেই শেষ পর্যন্ত খুলনা টেস্ট ড্র হয়েছে। যা পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ড্র। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো টেস্টে ড্র করতে পারেনি টাইগাররা। আগের আট টেস্টের সবকটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ।

পঞ্চম ও শেষ দিনের তৃতীয় সেশনে ৬ উইকেট হারিয়ে ৫৫৫ রান তোলার পর তামিম সাকিবকে ব্যাট করা চালিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু সাকিব মনে করেছে তামিম তাকে চলে আসতে বলেছে। তাই তিনি পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলান। এর মধ্য দিয়ে প্রথম টেস্টের নানা নাটকীয়তার অবসান ঘটে। ড্র হয় টেস্ট।  সাকিব ৭৬ ও শুভাগত হোম ২০ রানে অপরাজিত থাকেন।

তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের রেকর্ড জুটিতে চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ২৭৩ রান। পাকিস্তানের থেকে ২৩ রানে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তামিম ১৩৮ ও ইমরুল ১৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন। সেখান থেকে শনিবার শেষ দিনে ব্যাটিংয়ে নামেন তামিম ও ইমরুল।

তামিম-ইমরুল দুজনই ব্যক্তিগত ১৫০ রান পূরণ করেন। ১৫০ রান করেই ফেরেন ইমরুল। অবশ্য তার আগেই তামিমের সঙ্গে ৩১২ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন এই বাঁহাতি। টেস্টে ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনো টেস্টের তৃতীয় বা চতুর্থ ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে এটাই সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে ১৯৬০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে ২৯০ রান করেছিলেন ইংল্যান্ডের কলিন কাউড্রে ও জিওফ পুলার।

ইনিংসের ৭৬তম ওভারে জুলফিকার বাবরের বলে দ্বাদশ খেলোয়াড় বাবর আজমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইমরুল। ২৪০ বলে ১৬ চার ও ৩ ছক্কায় ১৫০ রানের ইনিংসটি সাজান এই বাঁহাতি। দলীয় ৩৪৫ রানে জুনাইদ খানের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মুমিনুল হক। ২১ রান করেন তিনি।

ইনিংসের ৯৩তম ওভারে ইয়াসির শাহর পর পর দুই বলে ছক্কা মেরে ৯০-এর ঘরে পৌঁছান তামিম। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে তার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯৫ রান। এর পরের ওভারে জুনাইদ খানের বলে ছক্কা মেরে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করেন তামিম। টেস্টে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। এর আগে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। অবশ্য ২০০ রান করে আউট হয়েছিলেন তিনি। ফলে মুশফিককে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের মালিক এখন তামিম।

ডাবল সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তামিম। মোহাম্মদ হাফিজের বলে উঠে এসে ডিফেন্স করতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হন তিনি। তার আগেই খেলেন ২০৬ রানের চমৎকার এক ইনিংস। ২৭৮ বলের ইনিংসে ১৭টি চার ও ৭টি ছক্কা হাঁকান তামিম। দলীয় ৩৯৯ রানে তামিমের বিদায়ের পর সাকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলের লিড বাড়িয়ে নিতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ উইকেটে ৬৪ রান যোগ করে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ। জুনাইদ খানের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহর সংগ্রহ ৪০ রান।

দলীয় ৪৬৩ রানে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর স্কোরবোর্ডে আর ১ রান জমা হতেই ফেরেন নতুন ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। ডাক মারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মোহাম্মদ হাফিজের বলে এলবিডব্লিউ হন মুশফিক। ইনিংসের ১২৩তম ওভারে মোহাম্মদ হাফিজের বলে চার মেরে ক্যারিয়ারের ১৮তম ফিফটি তুলে নেন সাকিব।

এরপর দলীয় ৫২৪ রানে আউট হন সৌম্য সরকার (৩৩)। আসাদ শফিকের বলে হাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। এরপর ড্র হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্রিজে টিকে থাকেন সাকিব ও শুভাগত।

খুলনা টেস্টে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩৩২ রানের জবাবে ৬২৮ রান করে পাকিস্তান।  দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করে ৫৫৫ রান।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here