ষ্টাফ রিপোর্টার :: ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (নিক)। আগামী ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৪ দিন সেনাবাহিনী দুই মহানগরে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে তারা। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।

আগামী ২৮ এপ্রিল তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য বিভিন্ন মহল সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছিল।

এর আগে গত রোববার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসির সম্মেলনকক্ষে সিটি নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। বৈঠক শেষে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে দু-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, এনএসআই, ডিজিএফআইর মহাপরিচালকরা, পুলিশের মহাপরিদর্শক, নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুল মোবারক, আবু হাফিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী ও মো. শাহ নেওয়াজ, নির্বাচন কমিশনের সচিব মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলী, ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং অফিসার শাহ আলম, দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসার মিহির সারোয়ার মোর্শেদ এবং চট্টগ্রামের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আবদুল বাতেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ মঙ্গলবার কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিস্থিতি ভালো হলেও জনমনে যেন ভীতি না থাকে, সেজন্য সেনাবাহিনীকেও আমরা ব্যবহার করব।’
তিনি জানান, অন্যান্য বাহিনীর মতো সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৪ দিন তিন সিটি করপোরেশন এলাকায় ‘রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং’ ফোর্স হিসেবে থাকবে। রিটার্নিং অফিসার চাইলে তারা ‘সাড়া দেবে’।
এর আগে কখনোই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করেনি নির্বাচন কমিশন। ৪ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের কাছে চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন নির্বাচন কমিশন।
তখন ইসির পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সেনা মোতায়েন সম্ভব হয়নি।
এবার নির্বাচনের আগে মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়া সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ফিরবেন ভোটের ৫ দিন আগে, ২৩ এপ্রিল।
বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা
নামানোর দাবি বিএনপির
এদিকে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানোর দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করে, বিচারিক ক্ষমতা না দিয়ে শুধু টহল দেয়ার জন্য সেনা মোতায়েন করলে লক্ষ্য সফল হবে না। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এই দাবি জানান।
রিপন বলেন, ২৬ এপ্রিল থেকে নয়, এখন থেকেই সেনা মোতায়েন করার জন্য তারা দাবি জানান। সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের পরও ৫ দিন পর্যন্ত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরের ওপর হামলার ঘটনাকে প্রধানমন্ত্রী ‘নাটক’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে সন্ত্রাসীরা আরো আশকারা পাবে। সরকারের দায়িত্ব তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু সরকার তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা যে একদলীয় শাসনে বিশ্বাসী, সেটাই প্রমাণ করেছে।
বিএনপির বর্তমান মুখপাত্র আরো বলেন, তাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তারেক রহমান ও সজীব ওয়াজেদ জয়। তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক রাজনীতি প্রত্যাশা করেন। তাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ভাবমূর্তি তারা যদি নষ্ট করেন, সেটা শুধু বিএনপি বা আওয়ামী লীগের ক্ষতি নয়, পুরো জাতির ক্ষতি।
তিনি বলেন, জয় সোমবারের ঘটনা নিয়ে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এটা খুবই সুন্দর। তারা খুব খুশি। তবে তিনি বলেছেন, জনগণ ক্ষোভ থেকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাহলে প্রশ্ন, জনগণের ক্ষোভ কি শুধু বিএনপির ওপর?
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক জহুরুল হক শাহজাদা মিয়া, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকার, সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আক্তার প্রমুখ।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here