bengali-lsএই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বাংলা সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে কি না, তা নিয়ে তর্কবিতর্কের শেষ নেই৷ বইমেলার ভিড় এ ব্যাপারে খানিকটা ইতিবাচক ইঙ্গিত দিলেও, বাংলার প্রকাশকদের বই বিক্রির হিসাব অনুযায়ী ছবিটা খুব আনন্দদায়ক নয়৷

 দক্ষিণ কলকাতার এক চাকুরিরতা মহিলা, সায়ন্তিকা রায়ের মতে, নগরকেন্দ্রিক সচ্ছল পরিবারগুলির অধিকাংশ ছেলেমেয়ে এখন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ছে, স্কুলের সব বিষয়গুলি ইংরেজিতেই পড়তে হয় ৷ সেইসঙ্গে স্কুলের যা পড়ার চাপ তাতে বাংলা সাহিত্য আলাদাভাবে পড়ার সময় থাকে না ৷
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, সিনেমা, সিরিয়াল, ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দাপট এবং একাধিক বিনোদনের জায়গা তৈরি হওয়ায় এই প্রজন্মের সাহিত্য পড়ার প্রতি আগ্রহ কমেছে ৷ তাঁর প্রশ্ন, আমাদের অভিজ্ঞতায় এখন কজন শিশু শুকতারা, সন্দেশ, রূপকথার গল্প পড়ে? বরং তার চাইতে অনেক বেশি সংখ্যক নাবালক-নাবালিকা কম্পিউটারে গেমস খেলে৷

samaresh-mazumderসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার বলেন, বর্তমান প্রজন্মের পড়ার মতো লেখা এখন আর হয় না৷ঠাকুরমার ঝুলি, বুড়ো আংলা, পথের পাঁচালী, চাঁদের পাহাড় কিংবা পদিপিসির বর্মিবাক্স-র মতো সাহিত্য কি আর দেওয়া যাচ্ছে এখনকার প্রজন্মকে? এখন সব মিলিয়েই বাংলা সাহিত্যের দুঃসময় ৷ ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭৫ সাল, এই দীর্ঘ সময়কালে গড়ে প্রায় ৩০-৪০ জন লেখক ছিলেন, যাঁদের লেখা সব ধরনের পাঠকের মনোরঞ্জন করত৷ এখন প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য প্রকাশনার হাতে গোনা ৩-৪ জন৷ ভবিষ্যতে এঁরা না থাকলে বাংলা সাহিত্যও মিউজিয়ামে চলে যাবে৷

একদা স্কুলে শিক্ষকতা করতেন তৄপ্তি দত্ত৷ তিনি বললেন, বাঙালি নিজের মাতৃভাষাটাই বিকৃত করে বলছে ৷ বাংলা-হিন্দি-ইংরেজি শব্দের সংমিশ্রণে কথা বলছে ৷ যারা ঠিকমতো বাংলা ভাষাটাই বলতে পারছে না, তারা বাংলা সাহিত্য পড়বে, এটা ভাবা যায় না ৷

যদিও এ ব্যাপারে ভিন্ন পোষণ করেন তথ্যচিত্র-নির্মাতা তারেক কাজি৷তাঁর মতে, বই নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই প্রজন্ম বরং অনেক বেশি সচেতন৷ তাদের একটা নিজস্ব পছন্দ তৈরি হয়েছে ৷ তাঁর প্রশ্ন, বর্তমান প্রজন্ম যদি সাহিত্য না পড়ে, তাহলে এত বই বিক্রি হচ্ছে কীভাবে?

চিত্রপরিচালক তথা একটি দৈনিকের সম্পাদক ঋতব্রত ভট্টাচার্যের দাবি, শুধু বাংলা নয়, অন্যান্য সাহিত্যের প্রতিও আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে৷তিনি বলেন, আনুপাতিক সংখ্যা হয়তো এখন একটু কমেছে, তবে সব সময়ই এক শ্রেণির সাহিত্যমনস্ক মানুষ থাকে ৷ কোনও লেখা চলচ্চিত্রায়িত হওয়ার পর সেই লেখা পড়ার প্রতি ঝোঁক বাড়ে৷ যেমন, ‘সপ্তপদী’র মতো উত্তম-সুচিত্রার বহু হিট সিনেমা হয়েছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে৷সিনেমাটি দেখার উৎসাহী মানুষ তারাশঙ্করের কাহিনিটি পড়তে ঝাঁপিয়ে পড়েছে৷এভাবেই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েও বিভিন্ন প্রজন্মের বাংলা সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ৷

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here