হ্যালোইন উৎসবে মাতোয়ারা যুক্তরাষ্ট্রের মানুষবাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে: যুক্তরাষ্ট্রে আবার এসেছে হ্যালোইন উৎসব। প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি ‘হ্যালোইন বা ভূত উৎসব’ পালন করে থাকেন আমেরিকানরা।

 

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে ৫০ শতাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করে ভূত বা অশরীরী কোনো শক্তি এ পৃথিবীতে আছে। তাদের অনেককেই বলা হয় ‘স্পিরিটি’ অথবা ‘গুড সোল’। হ্যালোইন শুরু হয়েছিল আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড-এ।

 

এই উৎসবকে অনেকই ‘ভূত উৎসব’ বলে থাকেন। এই উৎসবের মূল ভাবনানুযায়ী, এই দিনে সমস্ত মৃত আত্মারা পৃথিবীর বুকে নেমে আসে, নিকটজনের সান্নিধ্য লাভের আশায়।

 

সবার মাঝে থাকার বাসনা নিয়ে এরা আসে, কিন্তু পৃথিবীর মানুষ সেটা কোনভাবেই হতে দিতে চায় না। এই দিনে সকলেই নিজ নিজ বাড়ি ঘরের সামনে ‘ল্যান্টেন’ ও রঙ্গিন বাতি জ্বালিয়ে রাখে ল্যান্টেনের আলোয় যেনো মৃত আত্মারা পথ দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

 

আইরিশ ও স্কটিশ লোকসাহিত্যে হ্যালোইনকে বলা হয়েছে সুপারন্যাচারাল এনকাউন্টারস। ঐ সময়ের মানুষের বিশ্বাস ছিল যে শীতের শুরুতে হ্যালোইন সন্ধ্যায় সমস্ত মৃত আত্মীয়-স্বজনের আত্মারা নেমে আসে এই পৃাথিবীর বুকে। অষ্টম শতাব্দীতে পোপ গ্রেগরী ১লা নভেম্বর কে ‘অল সেইনটস ডে ঘোষণা করেন। এবং আগের সন্ধ্যা মানে ৩১শে অক্টোবরকে ‘অল-হ্যালোস-ইভ’ বা হ্যালোইন নামে অভিহিত করেন। মিসিসিপি রাজ্যের কলম্বাস নামক ছোট শহরের সকলেই এই শহরকে কেন্দ্র করে প্রচলিত একটি গল্প সম্পর্কে অবহিত আছে। আমেরিকান জনগণ এমনিতেই ভূত-প্রেতে বিশ্বাসী।

 

বিশেষ করে দক্ষিণী রাজ্য মিসিসিপি, লুইজিয়ানা (নিউ অর্লিন্স), আলবামা রাজ্যের সর্বত্রই ভূতেরা ঘোরাফেরা করে, এমনকি অনেকের বাড়িতেও নাকি তাহারা বসবাস করেন। হোটেল, থিয়েটার হল, প্রাচীন বাড়িগুলোতে অনেকেই রীতিমত ভূত দর্শনে আসে। বেশির ভাগ মানুষের ভাগ্যেই ভূত দর্শন ঘটে (!)। তেমনি একটি ভূতুড়ে এলাকা হচ্ছে ‘থ্রী লেগেড লেডী রোড’। ‘থ্রী লেগেড লেডী রোড’ সম্পর্কে মিসিসিপির যে কাউকে প্রশ্ন করলেই তার কাছ থেকে গা ছমছমে গল্প শোনা যায়।

 

অনেক অনেক কাল আগে, এই এলাকায় একটি পরিবারে তিন পা বিশিষ্ট একটি মেয়ে শিশুর জন্ম হয়। তিন পা নিয়েই মেয়েটি বড় হতে থাকে। মেয়েটির যখন কৈশোর উত্তীর্ণ হয়, গ্রামের মানুষ ‘ডাইনী’ আখ্যা দিয়ে মেয়েটিকে মেরে ফেলতে চায়। মেয়েটির মা-বাবা অনেক কান্নাকাটি করেছিল, মেয়েটি নিজেও অনেক কেঁদেছে, বার বার মিনতি করেছে সকলের কাছে, তাকে যেন হত্যা না করা হয়। কিন্তু গ্রামের মাতব্বর শ্রেণির লোকেরা, বিশেষ করে চার্চের কর্তাব্যক্তিরা মেয়েটিকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়।

 

নির্দেশ পেয়ে গ্রামের মানুষ মেয়েটিকে পিটিয়ে আধমরা করে গাড়ির পেছনে বেঁধে গাড়ি ছুটিয়ে দেয়, চলন্ত গাড়ির টানে মেয়েটির দেহ রাস্তার ইট পাথরের সাথে লেগে ছিন্নভিন্ন  হয়ে যায়। মৃত্যু নিশ্চিত হতেই চার্চের পাশের গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মেয়েটির দেহ দাফন করার পর থেকেই ঐ এলাকার লোকজন যখন তখন তিন পা ওয়ালা মেয়েটিকে দেখতে পেত।

 

মেয়েটির অতৃপ্ত আত্মা নানাভাবে মানুষকে ভয় দেখানো শুরু করতেই ধীরে ধীরে ঐ এলাকার মানুষজন ওখান থেকে তাদের বাস উঠিয়ে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করে। গ্রামটি জনমানব শুন্য হয়ে যায়। যে চার্চের কর্তাব্যক্তিরা মেয়েটিকে হত্যা করার হুকুম দিয়েছিল, কবে কখন যেন সেই চার্চটিও বিলীন হয়ে যায়। কেউ কেউ দেখেছে কিছু একটা গাড়ির উপর হামলে পড়তে, কেউ বা কিছুই দেখেনি, তবে গাড়ির ছাদে ঠক ঠক আওয়াজ শুনেছে অনেকে। ঐ অবস্থায় গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে না আসলে প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে। এ সবই বহুল প্রচলিত গল্প। অন্ধকারে বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। রাস্তাটির চারপাশে কোথাও কোন জনবসতির চিহ্ন নেই।

 

হ্যালোইন উৎসবের বাণিজ্যিক ভাবনানুযায়ী, আমেরিকা- ইউরোপে এই দিনে বাচ্চারা নানা ডিজাইনের ভৌতিক কস্টিউম পড়ে বাইরে বের হবে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরজায় নক করবে, গৃহস্বামী দরজা খোলার সাথে সাথে ‘ ট্রিঁক অঁর ট্রিঁট’ বলে চকোলেট, ক্যান্ডি আদায় করে নিবে।এ সবই ‘হ্যালোইন উৎসব’ এর সাথে সম্পর্কিত। আমেরিকাতে ভূত নিয়ে অনেক বেশি গল্প প্রচলিত আছে।

 

অধিকাংশ আমেরিকান ভূতে বিশ্বাস করে, প্রত্যেকের জীবনেই ভূত দেখার অভিজ্ঞতা আছে বলে তারা দাবি করে। তবে মজার ব্যাপার হলো, অনেকেই বিশ্বাস করে ভূতের পোশাক পরহিতিদের মধ্যেই সত্যিকারের ভূতও থাকে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here