গোলাম আজমষ্টাফ রিপোর্টার :: বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের শেষ ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর তার জানাজা পড়াবেন তার বড় ছেলে। গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী  জানান, তার বাবা বরাবরই ইচ্ছা পোষণ করেছেন মৃত্যুর পর তার জানাজা পড়াবেন তার বড় ছেলে।

কিন্তু গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা অবস্থায় তিনি বলেছেন, কোনো কারণে বড় ছেলে অসমর্থ হলে, জামায়াতে ইসলামীর আমির ও যুদ্ধাপরাধের মামলায় বিচারাধীন মতিউর রহমান নিজামী, কিংবা যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ও জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ইমামতিতে তার জানাজার নামাজ পড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

লন্ডনে বসবাসকারী গোলাম আযমের বড় ছেলে এই মুহূর্তে তুরস্কে রয়েছেন, বলে জানিয়েছেন আযমী।

আযমী আরো জানিয়েছে, বিদেশে অবস্থানরত তার ভাইয়েরা দেশে ফেরার পর তার বাবার দাফন হবে। এক্ষেত্রে তার বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী মগবাজারে পারিবারিক কবরস্থানে তার (গোলাম আযমের) বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।

এদিকে, গোলাম আযমের জানাজা পড়ানোর জন্য মতিউর রহমান নিজামী বা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্যারোলে মুক্তি চাওয়ার কোনো ‘যৌক্তিকতা’ নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

তবে এ বিষয়ে আবেদন করা হলে আদালত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দেবে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির এই সদস্য।

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আযমের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর তার ঢাকার মগবাজারের বাসভবনে রাখা হয়েছে। মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসার পর তার অনুসারীরা বাড়ির সামনে ভিড় জমায়।

ওদিকে গোলাম আযমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরার পর বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশে জড়ো হয়ে অনেকে আনন্দ মিছিল করছে। গোলাম আযমের মরদেহ বাংলাদেশে মাটি না দেবার দাবি তোলেন অনেকে।

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ৯০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এই আমির বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান। ৯২ বছর বয়স্ক গোলাম আযমের শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ার কারণে বুধবার বিকেল থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন তিনি। এরপর বৃহস্পতিবার রাত নয়টার পর তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে বলে খবর আসে। রাত দশটার দিকে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছে তার পরিবার। তবে ঘোষণা আসে রাত ১২ টার দিকে।

বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক আব্দুল মজিদ ভুঁইয়া সাংবাদিকের কাছে তার মৃত্যুর ঘোষণা দেন। রাতে হাসপাতালের আশপাশে গিয়ে দেখা গেল, গোলাম আযমের মরদেহ ময়না তদন্তের প্রস্তুতি চলছে। সেখানে তার দলের কর্মীদের কোনো উপস্থিতি নেই। হাসপাতালটির আইসিইউ যে ভবনে অবস্থিত সেখানে ঢোকার মূল প্রবেশপথে কয়েকজন পুলিশ। ঢোকার প্রবেশ পথ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পরে বাড়তে থাকে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি।

তার পরিবার ময়না তদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফন করার আগ্রহ দেখায়। মরদেহ কখন হস্তান্তর করা হবে বা ময়না তদন্ত হবে কিনা সে বিষয়ে রাতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

গোলাম আযমের একজন আইনজীবী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন রাতেই মরদেহ ময়না তদন্ত না করার জন্যে একটি মানবিক আবেদন নিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে যাওয়া হয়েছিল তবে তা তিনি রাখেননি।

রাতে তিনটার দিকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অ্যাম্বুলেন্সে করে গোলাম আযমের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। মরদেহ রাতেই ময়না তদন্তের পর সকাল সাতটার পরে তা পরিবারের কাছে তা হস্তান্তর করা হয়।

গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আজমী জানান মরদেহ হস্তান্তরের পর বিদেশে থাকা আত্মীয়দের জন্য কিছুদিন মরদেহ মরচুয়ারিতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তবে তাকে মগবাজারে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

একাত্তর সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের জুলাই মাসে গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারা দণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তার অপরাধ মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার যোগ্য হলেও বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাকে এই দণ্ড দেয়া হলো বলে জানায় আদালত। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগের আওতায় মোট ৬১টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছিল। এসব অভিযোগগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উস্কানি এবং সংশ্লিষ্টতার।

ওদিকে গোলাম আযমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশে জড়ো হয়ে অনেকে আনন্দ মিছিল করেন। গোলাম আজমের মরদেহ বাংলাদেশে মাটি না দেবার দাবি তোলেন অনেকে। সূত্র: বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here