ভোলাশিপুফরাজী, ভোলা :: ভোলায় দ্বিতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবারও ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কে অবরোধ চলছে।

বাস ভাঙচুর, শ্রমিকদের ওপর হামলাকারিদের গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির এবং ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতে জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতি এবং শ্রমিক সংগঠন এ অবরোধের ডাক দেয়।

তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।  জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনও অবরোধ তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।

এদিকে দ্বিতীয় দিনের মত ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কে অবরোধ থাকায় ওই রুটে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দূর দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ যাত্রীরা। বুধবার সকালে ভোলার বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনালে  গিয়ে দেখা গেছে, বুধবারের মত বৃহস্পতিবারও বাস টার্মিনালের সামনে ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কে জ্বলছে টায়ার।

আড়াআড়িভাবে যাত্রীবাহী বাস রেখে ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়েছে। একটি পুলিশের পিকআপ ভ্যান ও ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মোঃ আসাদসহ কয়েকজন পুলিশকে বৃহস্পতিবারও ভোলা বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনালের সামনে অবস্থান করে নিরব দর্শকের মত দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, অবরোধ চলাকালে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনালের সামনে একটি মালবাহী ট্রাক ভাঙচুর করেছে বাস শ্রমিকরা।

আকস্মিক বাস ধর্মঘটের কারনে দুরপাল্লার মালবাহী বিভিন্ন ট্রাকও আটকে পড়েছে। সেখানে কথা হয় একটি মালবাহী ট্রাকের হেলপার মোঃ জাফরের সঙ্গে।

তিনি জানান, লালমোহন থেকে সুপারি নিয়ে ট্রাকটি বুধবার রাত ২টার দিকে ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনালের সামনে এসে আটকে যায়।

সারারাত সেখানে অবস্থান করেছেন তারা। জাফর বলেন, সুপারি নিয়ে ট্রাকটি মধুপুরে যাবে। বাস মালিক সমিতির ডাকা এ অবরোধ থেকে রেহাই পেয়ে কবে নাগাদ তারা গন্তব্যস্থানে যেতে পারবেন তাও বলতে পারছেননা তিনি।

জাফর আরো বলেন, ট্রাকের চালক আব্দুল মন্নান চেষ্টা করছেন বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দদেরকে বলে কিভাবে এখান থেকে পার পাওয়া যায়।

বাস টার্মিনালে শিশু, নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধসহ বহু যাত্রীদেরকে পায়ে হেটে হাতে মালামাল নিয়ে দিগবেদিগ ছুটোছুটি করতে দেখা গেছে।

তারা কেউ বাস ধর্মঘটের খবর জানেননা। তাই আকস্মিক এ বাস ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। হাতে ভারি মালামল নিয়ে বাস টার্মিনাল দিয়ে পায়ে হেটে চলেছেন অনিক নামের এক যুবক।

তার বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ভাষান চর এলাকায়। তিনি দৌলতখানে জুয়েলারী দোকানে কাজ করেন।

বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছেন। অনিক বলেন, ঘর থেকে বের হওয়ার পর জেনেছি ভোলা-চরফ্যাশন সড়কে কোন বাস চলাচল করেনা।

চলছে অনিন্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট। ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চলছে অলিতে গলিতে। অনেক কষ্ট করে টেম্পোতে চরে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনাল পর্যন্ত এসেছি। এখন বরিশাল যাবো কিভাবে তা ভেবে পাচ্ছিনা।

তিনি আরো বলেন, মালামাল নিয়া এই পর্যন্ত আইতে অনেক কষ্ট অইছে। অবরোধের খবর আগে জানলে এতো কষ্ট কইর‌্যা আইতামনা।

এ ব্যাপারে ভোলা জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বৃহস্পতিবার বিকেলে  বলেন, বুধবার সকালে চরফ্যাশন উপজেলায় যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে অটোরিক্সা ধাক্কা লাগায় স্থানীয় অটোরিক্সা মালিক ও শ্রমিকলীগ নেতা কুতুব জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে শত শত শ্রমিক আমাদের বাস টার্মিনালে হামলা চালিয়ে অন্তত ১৫টি বাস ভাঙচুর করে। এর প্রতিবাদে এবং অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা বন্ধের দাবিতে বুধবার দুপুর থেকে ভোলা-চরফ্যাশন সড়কে অনিন্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেয় বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠন।

ব্যাপারে ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজা ও পুলিশ সুপার মোহাঃ মনিরুজ্জামান বৃহস্পতিবার বিকেলে  বলেন, এ বিষয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেলা বাস মালিক সমিতি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা মালিক সমিতি নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টদেরকে নিয়ে সমজোতা বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে।

আশা করা যাচ্ছে, ওই সমজোতার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এবং অবরোধ তুলে নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুরে ভোলার চরফ্যাশনে যাত্রীবাহী বাস শ্রমিক ও ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। এ সময় অন্তত ১৫টি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর হয়েছে। এর জের ধরে বিকেলে ভোলা সদরে ও চরফ্যাশন উপজেলা সদরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এর বিচার দাবিতে জেলা বাস মালিক সমিত অনিন্দিষ্টকালের জন্য ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। ফলে ওই সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

একই দাবিতে তারা বুধবার রাতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here