আটকে রেখে ধর্ষণপ্রতিনিধি :: ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে ১৭ বছরের এক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে দেড় মাস আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তরুণীর অভিভাবকদের সহায়তায় এই ফেসবুক প্রতারক ও ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটে চট্টগ্রামের রাউজানে। গ্রেফতার হওয়া ৫৫ বছর বয়সী এই প্রতারক-ধর্ষকের নাম নাছির উদ্দিন।

পুলিশ ও ধর্ষণের শিকার হওয়া তরুণীর ভাষ্যমতে, নাছির উদ্দিন কয়েক মাস আগে নিজেকে চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তি ও তরুণ আইনজীবী পরিচয়ে ফেসবুকে ফেক আইডি খোলেন। মিথ্যে পরিচয়ে রাউজান উপজেলার ১৭ বছর বয়সী এই তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন।

প্রতারক নাছির চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের একজন টেকনেশিয়ান। ফেসবুকে নাছির তরুণ বয়সের ছবি এবং নিজেকে ১৮ বছর বয়সী পরিচয় দিয়ে ওই তরুণীকে আকৃষ্ট করেন। একপর্যায়ে দেখা করতে রাজি করান। তরুণীটি গত ১২ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়ির কাছাকাছি স্থানে সন্ধ্যার দিকে নাছির উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে সম্মত হন।

নির্ধারিত দিনে নাছির উদ্দিনের মুখোমুখি হতেই ভুল ভাঙে তরুণীর। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার উদ্যোগ নিতেই নাছির উদ্দিন তরুণীর মুখে রুমাল গুঁজে অজ্ঞান করে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করে। এর পর থেকে এই তরুণীকে একাধিক আবাসিক হোটেল ও কয়েকটি পৃথক বাসায় বন্দি রেখে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন চালায়।

এদিকে মেয়ের সন্ধান না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে রাউজান থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরিও করা হয়। কিন্তু সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও অভিভাবকরা তরুণীর কোনো সন্ধান পেতে ব্যর্থ হন।

এর মধ্যে ওই প্রতারকের কাছে বন্দি থাকা অবস্থায় তরুণী বেশ কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। গত কয়েক দিন আগে তরুণীটি পালিয়ে আসার কৌশল হিসেবে নিজেকে মানসিক অসুস্থ হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। বন্দি থাকা বাসার সবকিছু ভাঙচুর করতে থাকলে নাছির তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে পরিবারের কাছে ফিরতে সক্ষম হন তরুণী।

বাড়ি ফিরে ঘটনা খুলে বলেন। গত সোমবার পরিবারের পরামর্শে ফাঁদ পেতে প্রতারক নাছির উদ্দিনকে তরুণীর বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় ডেকে আনা হয়। এ সময় এলাকাবাসী তাকে আটক করে ব্যাপক গণপিটুনি দেয়। পরে তাকে রাউজান থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নাছির উদ্দিন ওই তরুণীকে দেড় মাস ধরে আটকে রেখে যৌন নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নাছির জানান, তিনি প্রথম বিয়ে করেন ১৯৯১ সালে। ওই ঘরে ২০ বছর বয়সী কন্যাসন্তানকে বিয়ে দিয়েছেন। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন ৯৮ সালে। এই ঘরেও রয়েছে তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে।

তিনি ২০ বছর ধরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রণাধীন সদরঘাট মেমন হাসপাতালে মেডিক্যাল টেকনেশিয়ান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি এলএলবি পাস করে চট্টগ্রাম আদালতে একজন সিনিয়র আইনজীবীর অধীনে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন বলে জানিয়েছেন।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here