১১১১নিউজ ডেস্ক :: নতুন চুল গজানোর জন্যে আর চুল পড়া বন্ধের জন্যে আপনার স্বাভাবিক কিছু বিষয় খুব গুরুত্ব সহকারে লক্ষ রাখতে হবে। যদিও এর অনেকগুলোই আপনি নিজের জানা অজানায় করছেন।

আমাদের চুল মূলত ক্যারোটিন দিয়ে গঠিন। যা অ্যামিনো এসিড দিয়ে তৈরি এক ধরণের প্রোটিন। তাই নতুন চুল গজানোর জন্যে অবশ্যই আপনার শরীরকে পর্যাপ্ত অ্যামিনো এসিড সরবরাহ করতে হবে।

ফলে আপনাকে যথেষ্ট প্রোটিন আছে এমন খাবারগুলো গ্রহণ করতে হবে। মাছ, মাংস, পনির, দুধ, ডিম এগুলো ভালো প্রোটিনের উৎস… আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিনই এগুলোর অন্তত একটি রাখার চেষ্টা করুন। আপনি ভেজিটেরিয়ান হলে সয়াবিন, মটরশুটি, কলা,  বাদাম ইত্যাদি খেতে পারেন। তবে নন-ভেজিটেরিয়ান খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।

পরিমিত আয়রন আর জিঙ্ক রাখুন খাবারের মধ্যে – আয়রন আর জিঙ্কের অভাব অস্বাস্থ্যকর চুলের কারণ হতে পারে। আয়রন আর জিঙ্ক আপনার মাথার কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে নিতে সহায়তা করবে আর নতুন টিস্যু তৈরীতে এবং ক্ষয়রোধে সহায়তা করবে। পরিমিত পরিমাণে আয়রন আর জিঙ্ক নতুন এবং দ্রুত চুল গজানোর জন্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। মটরশুটি, বাদাম, প্রাণীর কলিজা, মাংস, দুধে আপনার প্রয়োজনীয় জিংক আর আয়রন পেয়ে যাবেন। এছাড়া কাচা মরিচও জিঙ্ক, আয়রন এর উৎস।

প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি এর সরবরাহ নিশ্চিত করা – শরীরে যেন পর্যাপ্ত ভিটামিন সি এর সরবরাহ থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। রুক্ষ, শুষ্ক, আর দূর্বল চুল হওয়া থেকে মুক্তি দিবে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি। কাচা মরিচে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি আছে, শুনেছিলাম একজন মানুষের শরীরে একদিনে যতটুকু ভিটামিন সি দরকার তার সবটুকুই নাকি পাওয়া যাবে মোটামোটি আকারের একটি কাচা মরিচে। তাছাড়া পেয়ারা, লেবু, কমলা, আনারস, কামরাঙাও ভিটামিন সি এর উৎস।

কালোজিরা – কালোজিরা চুল পড়া বন্ধে এবং নতুন চুল গজানোর জন্যে সহায়ক। মাথায় কালোজিরার তেল ব্যবহার করা আর খাবারে কালোজিরা ব্যবহার আপনাকে স্বাস্থোজ্জল চুল দিতে পারে।

মৌসুমি ফল, শাকসবজিগুলো এড়িয়ে যাবেন না, এগুলো শরীরের জন্যে খুবই উপকারী। তাছাড়া মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এগুলোও মাঝে মাঝে খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন। আর হঠাত করে খাদ্যাভ্যাসে খুব বেশি পরিবর্তন না এনে, ধীরে ধীরে আনুন। এতে আপনার শরীর অভ্যস্ত হওয়ার সময় পাবে। আর খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ফলাফল আপনার চুলে পেতে বেশ দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে।

চুল পড়ার পিছের কারণ খুজে বের করুন

স্বাভাবিকভাবে চুল পড়া আর বিশেষ কোন কারণে চুল পড়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। আর সেটাই খুজে বের করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষের ৭০-১০০টা পর্যন্ত চুল পড়তে পারে। আর এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এর থেকে বেশি পড়লে সেটা অস্বাভাবিক হবে বৈকি। কিন্তু এই অস্বাভাবিকতার পিছে কি কাজ করছে সেটা খুজে বের করে সমাধান করে ফেলতে হবে।

মানসিক চাপ – প্রবল মানসিক চাপ চুল পড়ার বড় কারণ হতে পারে। আর সেই সাথে নতুন চুল গজানোর প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করতে পারে বটে ! নিজেকে যথাসম্ভব মানসিক চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করবেন। একটানা কাজ না করে, নিয়মিত বিরতিতে স্বাচ্ছন্দে কাজ করাটা ভালো। সপ্তাহে একদিন নিজেকে একটু মুক্ত বাতাসে মেলে ধরুন, গাছ-গাছালিপূর্ণ জায়গায় বেড়িয়ে আসুন। পরিবার পরিজনকে সময় দিন। দিনের একটা নির্দিষ্ট অংশে হালকা ব্যায়াম কিংবা সাইক্লিং ও মানসিক চাপ কপাতে সাহায্য করতে পারে  !

ওষুধ – এমনটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে উচ্চ মাত্রার ওষুধ খাওয়ার ফলে চুল পড়ে যাচ্ছে। হয়তোবা আপনার চুল পড়ার পেছনে অন্যতম কালপ্রিট হতে পারে আপনার ওষুধ। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে যদি ওষুধ পাল্টানো সম্ভব হয় তাহলে সেটা করে নেয়াই ভালো। আর ওষুধের কারণে চুল পড়ছে কিনা সেটা আপনার পক্ষে জানাটা হয়তো সম্ভব নয়। তাই ডাক্তারের সাথে আলাপ-আলোচনা করে নিতে পারেন যে ওষুধগুলো খেলে আপনার চুল পড়ার সম্ভাবনা থাকবে কিনা।

মাথার ত্বক – মাথার ত্বকের অসুস্থতাও চুল পড়ার কারণ হতে পারে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে ভালো কোন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে আপনাকে। তাছাড়া নিয়মিত ধুলাবালিপূর্ণ স্থানে থাকলে মাথার ত্বকে প্রচুর ময়লা জমাটাও স্বাভাবিক। যদি এমন হয় তাহলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন চুলে শ্যাম্পু করা উচিৎ, এর চেয়েও বেশি করলেও সমস্যা নেই। তবে চুলের সাথে মানানসই শ্যাম্পু ব্যবহার করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে !
হরমোন – হরমোনের কারণেও মাথার চুল পড়ে থাকতে পারে। এক্ষেত্রেও ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় নেই।

বংশগত – বংশগত কারণেও চুল পড়তে পারে। এমন কিছু হলে আপনার পক্ষে করার তেমন কিছু থাকবেনা। তবুও আপনি চেষ্টা করলে কিছুটা হলেও ইম্প্রুভ করতে পারেন।

স্টাইল – চুল পড়াকে বাড়িয়ে দিতে পারে এমন চুলের স্টাইল থাকলে সেটা পাল্টাতে হবে। ঘনঘন চুলে চিরুনী ব্যবহার করলে আর জেল ব্যবহার করলেও চুল পড়তে পারে। এমন কোন হেয়ার স্টাইল রাখা উচিৎ না যার ফলে চুল পড়তে পারে।

আসলে স্বাভাবিক ভাবে যে পরিমাণ চুল পড়ে আমাদের ঠিক তার কাছাকাছি পরিমান চুল গজায় প্রতিদিনই। কিন্তু কোন কারণে যদি চুল পড়ার হার গজানোর হার থেকে বেড়ে যায় তাহলেই সেটাকে মূলত চুল পড়া বলা হয়।

কিন্তু যদি অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করা যায় তাহলে নতুন চুলগুলো স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারবে এবং চুলের ভারসাম্য বজায় থাকবে। উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে খেয়াল রাখার অনুরোধ রইলো। এতে করে মাথার চুল পড়া কমে চুলের স্বাভাবিক গজানোকে বাধাহীন করে তুলবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here