বরিশাল : বরিশাল প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে এখন প্রকাশ্যভাবে।

সরকার যেখানে শিক্ষা ক্ষেত্রে দূর্নীতি রোধে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে, সেখানে উল্টো পাল্ল্লা দিয়ে দূর্নীতি চালাচ্ছে খোদ শিক্ষা কর্মকর্তারা সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে দুর্নীতিতে।

এখানে অনিয়ম এখন নিয়মে পরিনতি হয়েছে। ওই অফিস কর্মকর্তাদের টাকা দিলেই সব কিছু সম্ভব।

বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করনের পরে শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর জন্য ফিকশন আর এ জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ৫’শ টাকা হারে টাকা নেয়া হয় এ ছাড়াও প্রত্যেক শিক্ষককে শারীরিক সুস্থতার জন্য জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক প্রত্যায়ন পত্রের প্রয়োজন।

সে ক্ষেত্রে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৌহিদুল ইসলাম জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সঙ্গে একটি চুক্তি করে এসে শিক্ষকদের জানান, যে তারা যেন সিভিল সার্জন অফিসে ৬০০ টাকা করে দিয়ে আসেন। এখান থেকেও টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দূর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্চাচারিতার গুরুতর অভিযোগ উঠছে। এতে দিন দিন ভেঙ্গে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। জিম্মি হয়ে পড়ছে জেলার শিক্ষক ও কর্মচারীরা। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়,

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ‘বাণিজ্য কেন্দ্রে’ পরিণত হয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসটি। হয়রানি, দুর্ব্যবহার ও উৎকোচ ছাড়া কাজ হয় না এ অফিসে। শিক্ষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন কর্মকর্তাদের কাছে। কোনভাবেই মিলছে না এর প্রতিকার। ধাপে ধাপে বাড়ছে কর্মকর্তাদের উৎকোচ চাহিদা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে ডেপুটেশন। সিটিতে ও সদর উপজেলায় প্রায় দেড় শত শিক্ষক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন রয়েছে । জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৌহিদুল ইসলাম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে শিক্ষকদের ডেপুটেশন দিচ্ছেন।

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষকদের পল্লী থেকে পল্লী এবং পৌর থেকে পৌর বদলী করার নিয়ম থাকলেও উৎকোচের বিনিময়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বদলি করছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৌহিদুল ইসলাম । ডেপুটেশনে থাকা শিক্ষকদের  স্থায়ী ভাবে পোস্টিং দেয়ার জন্য ঘুষ নেয় ৬০ হাজার টাকা করে ।  এছাড়া একইভাবে পরীক্ষন বিদ্যালয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এক শিক্ষককে ডেপুটেশন দেয়া হয়েছে।জানা গেছে , বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করার জন্য বর্তমান সরকার প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্লি প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে।

এ প্রকল্পে কাজ শেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিল জমা দেয়ার সময় প্রতি বিলের সাথে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৌহিদুল ইসলাম। একইভাবে গত বছরের আন্তঃজেলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সম্মানী দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে মিনা মেলায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য ২০০০ টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও তা আজও দেয়া হয়নি।এ ছাড়া  জেলা প্রার্থমিক শিক্ষা অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়না। বিশেষ দিবস ছাড়া শেষ কতদিন আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল জানেন না কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

সোমবার সকাল ১১টায় সরেজমিনে অফিস প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায় পতাকা উড়ছেনা।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৌহিদুল ইসলাম বললেন পতাকা উত্তোলন ব্যপারে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি বলেন বিশেষ দিবস ছাড়া  পতাকা উত্তোলন করা হয়না। পতাকা উত্তোলন ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকাতা আছে বলে তিনি জানেন না।এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বরিশালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর বৃত্তি পরীক্ষায় মেধাবীদের ডিঙ্গিয়ে বৃত্তির ফলাফল প্রকাশের কারসাজির অভিযোগ উঠেছিল।উৎকোচ নিয়ে মেধা বিক্রির এমন অপকর্ম করেছে তৌহিদুল ইসলাম। আর এর শিকার হয়েছে বরিশাল নগরীর সেরা বালিকা বিদ্যালয়ের ১৬ ছাত্রীসহ কম পক্ষে ২০ কোমলমতি মেধাবী ছাত্রী।অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, খাতা পরিবর্তন করেও বৃত্তি পাইয়ে দেয়া হয়েছিল। ক্ষুব্ধ বরিশালের ২০ শিক্ষার্থীর অভিভাবক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে তদন্তের জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল সে সময়।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, বৃত্তি নিয়ে প্রতিবছরই বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কারসাজি চলে। আর এ কারসাজির মুলে রয়েছেন সেখানকার কর্মকর্তারাও।

সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী নুসরাত জাহান মুনিরার বাবা নুরুল আমিন জানান, তার কন্যা বরিশালের সেরা এ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী। মেধায় সে সব সময় ১ম কিংবা ২য় হয়। অথচ বৃত্তির তালিকায় মুনিরা নেই।

তিনি জানান, বৃত্তি পরীক্ষার প্রশ্ন আগেই ফাসঁ হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া তার কন্যা পরীক্ষায় কত পেয়েছে তা ফলাফল প্রকাশের ১৫ দিন আগে যানতে পেড়েছেন। তিনি জেলা শিক্ষা অফিসের কম্পিউটার ম্যান মাসুম বিল্যাহসহ বেশ কয়েকজনকে ইঙ্গিত করে বলেন, ওদের নেটওয়ার্ক অনেক বড়। তাই মেধাবীদের খাতা পরিবর্তন করে বৃত্তি কেনা বেচা চলছে। এমন অবিচার করায় আইনী পদক্ষেপ নিবেন বলে তিনি জানান। বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী পৃথুলা সিকদার ত্রয়ী’র মা লিপ্তি ভৌমিক জানান, তার মেয়ের বৃত্তি ষ্বড়যন্ত্র করে কেড়ে নেয়া হয়েছে। সুষ্ঠ তদন্তের জন্য তিনি অভিযোগ দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, তৌহিদুল ইসলাম  ফরিদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ফরিদপুরে অনিয়ম-দুর্নীতি করার কারনে বরিশালে বদলী করা হয় ।এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৌহিদুল ইসলাম বলেন , জেলা প্রার্থমিক শিক্ষা অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়না । বিশেষ দিবসে  পতাকা উত্তোলন করা হয়। অন্য অভিযোগ অস্বিকার করেন ।

মামুনুর রশীদ নোমানী/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here