কক্সবাজার: নব্বইয়ের স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িক বিরোধী আন্দোলনের নির্যাতিত এবং ওই সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির ক্যাডারদের হাতে রক কাটার শিকার , বিগত জোট সরকারের পুলিশী রিমান্ডে নির্যাতিত ও কারাভোগী সাবেক ছাত্র নেতা কবি সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিক এখন খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তিনি এ কষ্ট লাগবে অচিরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাড়্গাতপ্রার্থী। ১৯৮৭ সাল থেকে শুরম্ন করে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী, সাম্প্রদায়িকতা এবং বিগত জোট সরকারে বিরোধী আন্দোলন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে সংঘটিত আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলেন। বিগত জোট সরকারের আমলে খালেদা নিজামী বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তারেক জিয়া হত্যা প্রচেষ্টা মামলার বহু মিথ্যা মামলার শিকার হতে হয়। এমনকি জোট সরকারের সময় জিয়া পরিষদের তার গ্রামের বাড়ির জিয়া পরিষদের ক্যাডারা তার বাড়িঘর লুটপাট করে ভেঙ্গে দেয় এবং বাড়িতে পুরুষশূণ্য অবস্থায় তার দুই ভাবী ভাতিজাদের উপর হামলা চালায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধা দেয়।
নির্যাতিত ও শারিরীকভাবে প্রতিবন্দ্বী কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের গত জেলা কমিটির সিনিয়র সদস্য সাইফুদ্দিন মানিক। একাধারে ছিলেন চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, চকরিয়া কলেজ ও লক্ষ্যাচর ইউনিয়ন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাইফুদ্দিন আহমদ মানিক মেধাশক্তি সম্পন্ন যুবক হিসেবে লেখালেখিতে অভ্যসত্ম থাকায় মানিক বৈরাগী নামেও তাকে অনেকে চেনেন। জোট সরকারের আমলে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং জেলা কমিটির সিনিয়র সদস্য থাকাকালে তারেক জিয়া হত্যা প্রচেষ্টা মামলাসহ বহু মামলার আসামী হওয়ার সুভাগ্য হয় তার । এ অবস্থায় এসব মামলায় ফেরারী হয়ে যান ছাত্রলীগের তুখোড় যুক্তিবাদী এ নেতা। এমনকি জোট সরকারের সময় জিয়া পরিষদের তার গ্রামের বাড়ির জিয়া পরিষদের ক্যাডারা তার বাড়িঘর লুটপাট করে ভেঙ্গে দেয় এবং বাড়িতে পুরম্নষশূণ্য অবস্থায় তার দুই ভাবী ভাতিজাদের উপর হামলা চালায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধা দেয়। ওই সময় হাইকোর্টে মামলার জামিন এবং মামলার পরিচালনা করতে বহু মূল্যবান জমি অর্ধ মূল্যে বিক্রি করতে হয়। ওই মামলার তার চার ভাই, দুই ভাবীসহ ৩৩ জন আত্মীয় স্বজনকে আসামী করা হয়। যা এখনো পর্যনত্ম ভাংগা ঘর সাক্ষী হিসেবে রয়েছে। আহতও হয় বাড়ীর ৫জন সদস্য। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের ভর্তি করা হয়। কোন আওয়ামীলীগ নেতা তাদের দেখতেও যায়নি। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় থানায থানায় মামলা হয়। ওই সময়ে চকরিয়া থানার ওসি ওয়াহিদুর রহমান মানিকের বড় ভাই কমরেড জাফর আলমের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ আদায় করলে তাদের পুলিশী নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি মানিক। গ্রেফতারও কর হয় মানিককে।
মানিক বৈরাগী জানান, ওই সময় তার উপর পুলিশ ব্যাপক নির্যাতন চালায় । ভেঙ্গে দেয়া হয় কোমর । সোজা হয়ে হাটা চলা করতে পারেনা। অর্ধ পঙ্গুত্ব ও অসুস্থ অবস্থায় কক্সবাজার শহরে এখনো বেকার জীবনের ঘানি টানছেন তিনি।
তিনি আরো জানান, ২৮ মিথ্যা মামলার আসামী! ফেরারী থাকা অবস্থায় তার মাতা ও পিতাকে হারান। কিন্তু দুভাগ্য, সনত্মান হয়েও উপস্থিতির কারণে জন্মদাতা মা বাবার জানাযায়ও অংশ নিতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার আওয়ামীলীগের প্রয়াত সভাপতি এ কে এম মোজাম্মেল হকের শোকসভায় অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে কক্সবাজারে এসেছিলেন। হিলটপ সার্কিট হাউসে শেখ হাসিনার সামনে এই সাইফুদ্দিন মানিক তার করুন পরিণতির কথা উপস্থাপন করেন। ওই সময় শেখ হাসিনা তার কথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। ওই সময়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু (বর্তমানে সাংসদ), সহ সভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন, তৎকালিন কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগের উপ কমিটির সহ সম্পাদক বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিনের তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সমসত্ম চিকিৎসা ব্যয় বহন ও পুনর্বাসনের আশ্বাস দিলেও বিগত ৫ বছর ক্ষমতা থাকাকালিন সময়ে কোন খোঁজ খবর নেয়নি। কিন্তু সাবেক ছাত্রনেতা হারুন আল ছিদ্দিকী, শাহজাদা মহিউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব সাইফুজ্জামান শিখরের মাধ্যমে গত ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার আসার আগের দিন তার হাতে চিকিৎসা তহবিলের অনুদানের ৫০ হাজার টাকার একটি চেক তুলে দেন। ওই সময় ওই টাকাগুলো গ্রহণ না করে সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিক পূর্ণ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থার দাবী জানালে সাইফুজ্জামান শিখরের বিশেষ অনুরোধ (পিজিতে সর্বোচ্চ চিকিৎসার আশ্বাসে) চেকটি গ্রহণ করেন তিনি। অত:পর সাইফুজ্জামান শিখরের আশ্বাসের ভিত্তিতে তিনি পিজির ডা. ধীমান চৌধুরী ও শাহিনুল আলমের তত্বাবধানে চিকিৎসা নেন। কিন্তু ওই ৫০ হাজারের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার পরীড়্গা নিরীক্ষা ও থাকা খাওয়ায় খরচ হয়ে যায়। ওই সময়ে চিকিৎসক শাহীনুল আলম তাকে মৌখিকভাবে জানান, অনেক দেরী হয়ে গেছে। এইখানে তথা বাংলাদেশের মানিকের কোন চিকিৎসায় ভাল হবেন না। পরে ব্যর্থমনোরথে কক্সবাজারে ফিরে এসে অর্ধাহারে-অনাহারে বেকারত্বের জীবন কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি ওই সময়ে তার পা ও মেরুদন্ডের ব্যথা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে তিনি রোগ শয্যায় এবং একটু ভাল লাগলে লাঠি নিয়ে হাটাহাটি করেন। এর মধ্যেও তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সাম্প্রদায়িতা বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট এ কে আহমদ হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিগত জোট সরকারের আমলে অনেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ইতোমধ্যে দু’এক জনকে সহায়তা করা হয়েছে। আরো অনেকের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সাবেক ছাত্র নেতা সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিককেও প্রধানমন্ত্রীর বরারর একটি আবেদন করার জন্য আপনার (এ প্রতিবেদকের) মাধ্যমে জানাচ্ছি। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে আসছেন ওই সময় মানিককে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার সুযোগ দেয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেখি ব্যবস্থা করা যায় কিনা।
এ প্রসঙ্গে সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিক সাথে যোগাযোগ করা তিনি বলেন, গদ বাঁধা এ দরখাসত্ম ব্যবস্থা আমলাটান্ত্রিক জটিলতায় আবার ৫০ হাজার টাকা যা কোন কাজে আসবেনা। আমি সরাসরি আমার আপার সাথে সাড়্গাৎ করতে চাই। জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা প্রশাসন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রটোকল কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ২২ ফেব্রুয়ারির দুপুরের মধ্যে যদি সাক্ষাতের কোন আশ্বাস পাওয়া না যায় প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাত পেতে শহীদ মিনারে অনশন করবো, যতক্ষণ কক্সবাজারে অবস্থান করবেন।
তিনি বলেন, শুধু আমি নয়, আমার বন্ধু কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি তুখোড় যুক্তিবাদি বক্তা মেধাবী ছাত্র নেতা শওকত আলী কুতুবীকেও অনুসন্ধানের মাধ্যমে খোঁজে বের করে তার পূর্ণ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবী জানাচ্ছি।
তিনি আক্ষেপ করে জানান, সরকারের ভিতরে থেকে বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে হাজারো কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু নিবেদিত কর্মীদের সরিয়ে রেখে সুষম সুনাম রক্ষা করা যাবেনা।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের অনেক ত্যাগী ও মেধাবী ছাত্রলীগ নেতা প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। অনেকের অঙ্গহানিও হয়েছে। কিন্তু কোন নেতা এই ভাগ্যহত নেতাদের দুঃসময়ে খবর রাখেনি । রাখেনা। এ অবস্থার কারণে অনেক মেধাবী ছাত্রনেতা,প্রতিভাবান মুখ অকালে ঝরে পড়েছে। ভাগ্যহতরা একটু সহানুভুতি পেলে শক্তিশালী এই ছাত্র সংগঠনের ভবিষ্যত উজ্জল হবে বৈকি।
কালাম আজাদ/