ঝিনাইদহে বিনা ধান চাষ কৃষকদের মাঝে এনে দিয়েছে আগাম নবান্ন উৎসবের আমেজ। আমন ধান উঠতে এখনও বেশ কিছুদিন দেরী থাকলেও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উঠতে শুরু করেছে আগাম ফলনশীল বিনা ধান -৭ ।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, যেসকল জমিতে প্রচলিত আমন ধান চাষ করা হয়েছে সে সব জমিতে ধান পাকতে এখনও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। কিন্তু যেসকল জমিতে বিনা ধান চাষ করা হয়েছে সে সকল জমির ধান পেকে গেছে । ফলে এসকল অঞ্চলের কৃষাণ- কৃষাণীরা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ধান কাট, মাড়ানো এবং শুকানোর কাজে।

জেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত এই ধান কৃষকদের মাঝে সুখবর বয়ে এনেছে। জেলা কৃষি অফিস সুত্রে আরোও জানা গেছে যারা এই নতুন জাতের বিনা-৭ ধান চাষ করেছেন তারা এই ধান আগে উঠে যাবার ফলে আগামী ইরি মৌসুম শেষ হবার আগে ডাল বা তেল জাতীয় ফসল চাষ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কৃষকরা বেশী লাভবান হবেন। তাই এই ধান চাষের প্রতি কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে বলে কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে।

কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে , এবছর  ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিভিন্ন  গ্রামে প্রায় ১ হাজার ২ শ’ হেক্টর জমিতে এই নতুন জাতের এই বিনা-৭ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। আগামীতে এই জাতের ধানের বীজ সংরক্ষন করে গোটা জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও তারা জানান।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের কৃষক কামরুজ্জামান জানান, প্রায় দেড় একর জমিতে তিনি এই জাতের ধান চাষ করছেন এবং ফলনও পেয়েছেন প্রায় ৬০ মণ । তিনি আরোও জানান যেহেতু রোপা আমণের তুলনায় কম সময় লাগে এবং বোরো মৌসুমের আগে একটা অতিরিক্ত শষ্য চাষ করতে পারবেন, তাই তিনি এই ধান চাষ , করেছেন।

মহারাজ পুর ইউানিয়নের অপর কৃষক শুকুর আলী ও আজিজুর রহমান ও জানান একটু বেশী লাভের আশায় তারা এই বিনা-৭ জাতের ধান চাষ করেছেন। তারা জানান ইতোমধ্যে তাদের ঘরে উঠতে শুরু করেছে এই জাতের ধান । প্রচলিত ধানের তুলনায় এই ধানের ফলনও বেশী এবং তাদের লাভও অনেকটা বেশী হচ্ছে বলে তারা জানান। এতে করে অনেক কৃষক স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে পারবে। তাদের সঙ্গে একমত পোষন করেছেন সদর উপজেলার অন্যান্য কৃষকরাও।

মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান আবু বকর মল্লিক সাংবাদিকদেরকে জানান, শুধুমাত্র  মহারাজপুর ইউনিয়নের প্রায় ৩ শ’ কৃষক এই বিনা-৭ জাতের ধান চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি এই ধানের ফলনও হচ্ছে অনেক বেশী। এই জাতের ধান চাষ করে তার ইউনিয়নের অনেকেই সফলতার মুখ দেখবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন  সাংবাদিকদের কে জানান , উপজেলার খড়িখালী ইউনিয়নের ১৪ জন কৃষক এই জাতের ধান চাষ করেছে। তিনি জানান, এই ধানের ফলন অন্যান্য ধানের তুলনায় অনেক বেশী।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ জানান, বিনা-৭ ধান চাষে  বেশ কিছু সুবিধা আছে।এই জাতের ধান পাকে মাত্র ১১০ দিনে।এতে করে ইরি বোরো মৌসুমের আগে যে সময় থাকে তাতে কৃষকরা একটা অতিরিক্ত ফসল চাষ করতে পারবে।এই জাতের ধান  চাষে সেচ, সার , কীটনাশক কম লাগে । তাছাড়াও এই জাতের ধানের উচ্চতা অন্যান্য ধানের তুলনায় কম হবার কারনে ঝড়ে ক্ষতি গ্রস্থ হবার সম্ভাবনা কম থাকে বলে তিনি জানান।

তিনি আরোও জানান, এই ধানের চাল সরু এবং ভাত অত্যত্ন স্বুস্বাদু হবার পাশাপাশি এতে এমাইলোজের পরিমাণ বেশী থাকার কারনে রান্নার পর এটি বেশী সময় ভাল থাকে। যে কারনে বাজারে এর দামও বেশী।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোন্দকার সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদেরকে জানান, আউশ, আমণ, বোরো এই তিন মৌসুমে এই বিনা-৭ জাতের ধান চাষ উপযোগী। সাধারনত জুন মাসের মাঝামাঝি সময়েই এর বীজতলা তৈরি করতে হয়।

তিনি আরোও জানান, বীজতলা তৈরির ২০-২২ দিন পর চারা রোপনের উপযোগী হয়। প্রচলিত বিআর-১১ , বিআর- ৩০ও ৩১ , বিআর ৪০ ও ৪১ জাতের আমণ ধান উঠতে যেখানে সময় লাগে ১৪০ দিন থেকে ১৪৫ দিন , সেখানে বিনা-৭ জাতের ধান উঠতে সময় লাগে মাত্র ১০০-১১০ দিনে মত।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শাহারিয়ার রহমান রকি/ঝিনাইদহ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here