খোরশেদ আলম বাবুল।
শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অনুমোদনবিহীন করাত কল। ২ শতাধিক করাত কলের মধ্যে লাইসেন্স বিহীন করাত কল প্রায় দেড় শতাধিক। শুধুমাত্র স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্সই এ সকল করাত কল মালিকদের শেষ ভরসা।
সরকারের নিয়মনীতি না মেনে বেশীর ভাগ করাত কলই স্থাপন করা হয়েছে সড়কের পাশে। সড়কের দুই পাশে গাছের গুড়ি রেখে সড়ক সরু করে ফেলেছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে পথচারীরা। দূর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। অনেকে জীবনও দিয়েছেন করাত কলের গাফেলতির কারনে। নড়িয়া-ঘড়িসার সড়ক দখল করে ডিঙ্গামানিক ইউপি প্রভাবশালী মেম্বার সোহেল লাকুরিয়ার শশীনা ফার্ণিচার এন্ড স’মিল দূর্ঘটনার প্রধান কারণ।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা করেছেন, লাইসেন্স ব্যতীত এবং লাইসেন্স এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর যারা করাত-কল পরিচালনা করছেন তাদেরকে করাত-কল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ অনুযায়ী নতুন লাইসেন্স গ্রহণ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ লাইসেন্স নবায়ন করে করাত-কল পরিচালনা করার জন্য।
সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত বা অন্য যে কোন ধরণের সরকারি বন ভূমির সীমানা হতে ন্যূনতম ১০(দশ) কিলোমিটারের মধ্যে, বা বাংলাদেশের আনত্মর্জাতিক স্থল সীমানা হতে ন্যূনতম ৫ (পাঁচ) কিলোমিটারের মধ্যে পৌর এলাকা ব্যতীত, কোন করাত-কল স্থাপন করা যাবে না। এছাড়া কোন সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান এবং জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিঘ্ন সৃষ্টিকারী এইরূপ কোন স্থানের নূন্যতম ২০০ (দুইশত) মিটারের মধ্যে কোন করাত-কল স্থাপন করা যাবে না।
অথচ নীতিমালা না মেনে বিদ্যালয়ের পাশে ও শহরের ভেতরে, সড়কে চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে করাত কল স্থাপন করা হয়েছে। করাত কলে ক্রয়-বিক্রয় ও কাঠের হিসাব বন বিভাগে দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
শরীয়তপুর বন বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় ১৯১টি করাত কল রয়েছে। যার মধ্যে ২৭টির লাইসেন্স আছে। বাকি ১৬৪টি করাত কল গুলো প্রভাব খাঁটিয়ে কোনরূপ অনুমোদন ছাড়াই চালানো হচ্ছে।
নড়িয়া-ঘড়িসার হয়ে ভেদরগঞ্জ সড়কের বড়ই তলা ব্রীজ থেকে লাকুরিয়া ব্রীজের পর পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশে গাছের গুড়ি রেখে ডিঙ্গামানিক ইউপি মেম্বার সোহেল লাকুরিয়ার শশীনা ফার্নিচার এন্ড স’মিল। একমাত্র ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া সমিলের স্বপক্ষে অন্যকোন অনুমোদন বা লাইসেন্স নাই। এ সড়কে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষের যাতায়াত। বাস, ট্রাক, লড়ি, কাভার্ড ভ্যান, অটোবাইক, নছিমন, মোটরবাইক সহ হাজার হাজার গাড়ি চলে। প্রতিনিয়তই বিড়ম্বনার শিকাড় হচ্ছে সাধারণ মানুষ। স্থবির হয়ে যায় জনজীবন। একাধিক দূর্ঘনটাও ঘটেছে এ এলাকায়। ইতিমধ্যে শাহজাহান শিকদারের ইতালী প্রবাসী ছেলে মাসুম শিকদার সড়কের পাশে থাকা গাছের সাথে ধাক্কা লেগে জীবনও দিয়েছেন। তাতেও স’মিল মালিক প্রবাবশালী মেম্বার সোহেল লাকুরিয়ার টনক নড়েনি। সড়ক নিজস্ব সম্পদ মনে করে দখলে নিয়ে ব্যবসা করছেন। প্রশাসনও অজ্ঞাত কারণে নিরব।
স’মিল থেকে মালিক সোহেল লাকুরিয়ার মোবাইল নম্বর নিয়ে ফোন করলে তার ছেলে এসে জানায়, ৩ বছর যাবৎ তারা ডিজেল ইঞ্জিনে স’মিল চালায়। এতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন লাগেনা। বন বিভাগে তাদের দরখাস্ত পড়ে রয়েছে। এ সড়কে যে সকল দূর্ঘটনা ঘটেছে তা গাড়ি বিকল হওয়ার কারণে হয়েছে।
বাস চালক মানিক জানায়, নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ তাদের লাইন। এর মধ্যে এ স’মিল এলাকায় বেশী দূর্ঘনটা ঘটে। এখানে এলেই মনের ভিতড়ে ঝাঁকি মারে। সড়কের দুই পাশে গাছের গুড়ি রাখায় একটা বাই-সাইকেলও সাইড দেয়া যায় না। গাছের গুড়ি সরিয়ে না নিলে দূর্ঘটনা বেড়েই চলবে।
অটোবাইক চালক সিদ্দিক বলেন, সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ তার উপরে দুই পাশে গাছের গুড়ি। এ সড়কে গাড়ি চালাইয়া নিজের নিরাত্তাই নিশ্চিত করতে পারি না। যাত্রির নিরাপত্তা কেমনে নিশ্চিত করবো। সোহেল লাকুরিয়া হেডাময়ালা লোক। তার ভয়ে প্রশাসনও কথা বলেনা। আমরাতো অটো চালক।