বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শীতকাল একটু অন্যরকম। কারো কাছে সুখকর নয় আবার উপভোগ্য। সারাদিনের ক্লাস পরীক্ষার প্রচন্ড চাপের পাশাপাশি  শীত আসে আরেকটু বাড়তি চাপ নিয়ে।

হেমনে-র এমন দিনে কখনো সন্ধ্যা নামে,কখনো আলো,কুয়াশার সিড়ি বেয়ে উঠে আসে চাঁদ। শিশিরের বিন্দুতে কেউ দেখে নেয় পৃথিবী কেউ দেখে আকাশের উজ্জল তারা। কুয়াশায় ঢেকে যাওয়া পৃথিবী থেকে আলোকিত আদরের ভাজে লুকায়  আবেগ। তারুণ্যে হার মানে অলসতা।

সবুজ সামিয়ানায় বিছানো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। এখানে সবুজের বাঁকে কুয়াশার হাতে বন্দি উষ্ণতার অধীশ্বর সূর্য। পাখির সরধ মাখায় ভোর। আর হিম সকালে নিরব মায়ায় শীত মানেই এখানে প্রশান- নদীর শাণিত বুক। উচু নীচু টিলার পাদছায়ায় যদিও ক্যাম্পাসে ঠান্ডা একটু বেশি কিন’  অবিরত কর্মমূখর থাকা একঝাঁক তরুণদের কাছে শীতের এমন পৃথিবী পরাজিত। শীতের অলস সকালে পরশ বৃক্ষের সবুজ আদরকে সঙ্গী করে চোখে কাঁচা ঘুম নিয়ে তরুণরা ছুটে চলেন ক্লাস,পরীক্ষায়। পায়ে মোজা থেকে মাথা অবধি জড়ানো থাকে শীতের হরেক রকম পোশাক। তবে ক্লাসে এক জায়গায় কতক্ষণ বসার পরে আবার উঠতে অলস দেহ বাধা দেয়।এমন দিনে মাস্টার মশাইদের সকাল ৮টার ক্লাস নিতে হিমশিম খেতে হয়। কড়া দুুপুরে ক্লাস নেয়ায় সুবিধা চান ।আর শীতের দিন ছোট থাকায় মাঝে মাঝে  শিডিউল জটলায় পড়েন শিক্ষার্থীরা।

এতসব পরেও শীত কিন’ আড্ডাবাজদের জন্য একটু বাড়তি উচ্ছ্বাস নিয়ে আসে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় আড্ডাবাজ বন্ধুদের কলকাকলিতে কেটে যায় কুয়াশার বান। বিশেষ করে সন্ধ্যে ক্‌িংবা বিকেলে তাদের আকুলি করা হৈ হৈ রবে শীতের সকল অলসতা প্রাণবন- হয়  গুলজার আড্ডায়। এসব আড্ডা আর খোশগুজবের ফাঁকে খাওয়া চলে হরেক রকম পিঠাপুলি। তৈরি করে শীতের সাথে  অন্যরকম আবেগী সম্পর্ক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হল সম্মুখে সন্ধা হলেই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। চায়ের চুমুকে বা পিঠা খাওয়ার  প্রতিযোগিতার ফাঁকে চলে আড্ডা। শুধু শাহপরাণ হল নয়,১ম ছাত্রী হল,শহীদ মিনারসহ আবাসিক এলাকা,সি-বিল্ডিং,ডি-বিল্ডিং,ফুট কোর্ট ও লাইব্রেরী বিল্ডিং এর সকল জায়গা দখলে থাকে শীত প্রিয় আড্ডাবাজদের। আর প্রধান ফটকে ভেন গাড়িতে করে ছোট  পিঠা পুলির দোকানে চারপাশ ঘেষে মজা করে পিঠা খান সবাই। এসব দোকানে ভাপা কিংবা চিতই পিঠাসহ পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম দেশীয় পিঠা। এতে  প্রতি পিঠার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের গুনতে হয় ৫ টাকা করে।

হিমেল সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের  প্রশাসনিক ভবন,পোস্ট অফিস, ডি-বিল্ডিং এর পিছনসহ আবাসিক এলাকার নীরব জায়গা কপোত কপোতিদের উষ্ণ আড্ডায় ভরে যায়।

তবে শীত যদিও কষ্টদায়ক,তবে ফ্যাশন প্রিয় শিক্ষার্থীদের কাছে এক আনন্দের নাম। রঙ-বেরঙের মাফলার,গরম জিন্স শার্ট প্যান্ট,স্যুট কোর্ট,ক্যাটসসহ বাহারি পোশাকে ফ্যাশন প্রিয়তায় মুগ্ধ করে।
শীতকে কেমন উপভোগ করেন জানতে চাইলে সমাজকর্ম বিভাগের রাসেল,রাফি,সুব্রত,ওয়েস বলেন,শীত আসে আনন্দ আর ভ্রমণের বার্তা নিয়ে। বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় এমন দিনে বন্ধু বান্ধবের সাথে হৈ হুল্লোড় বেশি করার সুযোগ মেলে।
অপরদিকে শীতের সাথে মিত্রতা খুজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের মেয়েরা। রুমে জমে আড্ডার পাশাপাশি টেবিল টেনিস,লুডু  খেলা আর আর একটানা ঘুমে কাটান শীতকাল।

আতিক মাহবুব/শাবিপ্রবি, সিলেট

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here